বলরাম হাড়ি

মানবিক মূল্যবোধে উজ্জ্বল এক জীবনদর্শন

ভাবপ্রবণ ও কল্পনাপ্রিয় বাঙালির যাপিতজীবনের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক নিবিড়। তার শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি, সমাজ সভ্যতা, এমন কি রাষ্ট্র বিনির্মাণেও ভূমিকা রেখেছে ধর্ম। তবে সে ধর্ম বিশুদ্ধ ইসলাম, ব্রাহ্মণ্য কিংবা বৌদ্ধ নয়, বরং সব ধর্মের মিলনজাত রূপান্তরিত লোকধর্মই তার জীবন ও সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করেছে। শাস্ত্রশাসিত প্রচলিত ধর্মমত বহুবিধ উপাচারে পূর্ণ জীবনের সামগ্রিক সম্ভাবনাকে ধারণ ও লালন করতে যখনই ব্যর্থ হয়েছে, অনুসন্ধিৎসু বাঙালি মানস তখনই শাস্ত্রাচারের বাইরে বেড়ে ওঠা লৌকিক ধর্মের কাছে আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে গড়ে ওঠা লৌকিক ধর্মগুলো এমনিভাবে প্রচলিত ধর্মমতের সংকীর্ণতার বাইরে উদারনৈতিক পরমতধর্মসহিষ্ণু মানবতার শাশ্বত বাণী ছড়িয়ে এসেছে যুগ যুগ ধরে, আবার যথাযথ পরিচর্যার অভাবে কালের অতল গর্ভে হারিয়েও গেছে কোনো কোনো লৌকিক ধর্ম। চৈতন্য প্রবর্তিত নববৈষ্ণব ধর্মের প্রভাবে আঠারো শতকের শেষে বাংলাদেশের দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা মেহেরপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় এমনই এক লৌকিক ধর্ম বলরামী সম্প্রদায়। বর্তমানে লুপ্তপ্রায় এই ধর্মের প্রাণপুরুষ ও প্রবর্তক বলরাম হাড়ির (১৮২৫-১৮৯০) জন্ম এবং মৃত্যু মেহেরপুরের মালোপাড়ায় অন্ত্যজ পল্লীতে। সমাজের নিচুতলার অস্পৃশ্য অবহেলিত অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের সামনে মানবিক মূল্যবোধে উজ্জ্বল এক জীবনদর্শন উপস্থাপনকারী বিস্মৃতপ্রায় সাধক বলরাম হাড়িকে নিয়েই অত্র নিবন্ধ।

শুরুটা করতে চাই বঙ্কিমচন্দ্রের উক্তি দিয়ে। প্রায় দেড়শ’ বছর আগে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গভীর বেদনার সঙ্গে আক্ষেপ করেছিলেন এই বলে ‘ইতিহাসবিহীন জাতির দুঃখ অসীম। এমন দু’একজন হতভাগ্য আছে যে, পিতৃ-পিতামহের নাম জানে না; এমন দুই একজন হতভাগ্য জাতিদিগের মধ্যে অগ্রগণ্য বাঙালি।’

বঙ্কিম এই খেদোক্তি করেছিলেন সমগ্র বাঙালি জাতি সম্পর্কে, আমি এই উক্তিটি স্মরণ করতে চাই আমাদের এই মেহেরপুরবাসীর আত্মবিস্মরণ প্রসঙ্গে। মেহেরপুরে জন্মগ্রহণ করেও আমরা কেউ এ জনপদের অতীত জানতে উৎসাহী নই। এ ভূখণ্ডের ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্প-সংস্কৃতি, লৌকিক জীবনাচার, ধর্মচর্চার ইতিবৃত্ত যথেষ্ট সমৃদ্ধ হলেও আমরা তার খোঁজও রাখি না, আবার সেসব কীর্তিমন্ত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের সুতা আবিষ্কার করে গর্ব অনুভব করতেও শিখিনি। নিজের অতীত-ঐতিহ্যের সন্ধান না জানলে মানুষ হয়ে পড়ে শেকড়চ্যুত, অন্তঃসারশূন্য। যে মাটিতে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা, শেকড়ছেঁড়া মানুষ তো সে মাটির প্রতি কোনো দায়বোধ করবে না, মা এবং মাটির কাছে ঋণ অনুভব করবে না; কাজেই ঋণ শোধে ব্রতী হওয়া বা এগিয়ে আসার তো প্রশ্নই ওঠে না। এই হচ্ছে শেকড়ছেঁড়া মানুষের চরিত্র। মাঝে মধ্যে নিজের কাছে প্রশ্ন জাগে- বর্তমানে আমরা কি ধীরে ধীরে অতীত বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী হয়ে পড়ছি? তাহলে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব কোন ভিতের ওপরে? সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করা যায়, আমাদের ইতিহাসচেতনা একাত্তরের মুজিবনগর পর্যন্ত এসে থমকে দাঁড়ায়, মুজিবনগর নিয়ে আমরা বুক টান করে অহঙ্কারও প্রকাশ করি; কিন্তু মুজিবনগর দিবসের মূল স্পিরিট যে ছিল অসাম্প্রদায়িক উদার মানবতাবাদী বৈষম্যহীন শোষণমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের মধ্যে নিহিত, সে কথা আমরা মনেই রাখি না। এমন আধুনিক একটি রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্ন শুধু যে রাজনীতিবিদরা দেখিয়েছেন তা নয়, সমাজে এমন প্রত্যাশা জাগিয়ে তোলার পেছনে শিল্পী সাহিত্যিক সাংস্কৃতিক কর্মীদেরও প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকে, এমনকি বিশেষ ধর্মসাধক গোষ্ঠী পর্যন্ত খুব নিভৃতে দায়িত্ব পালন করতে পারে, এ দৃষ্টান্ত আমাদের এই মেহেরপুরেই আছে।

হ্যাঁ, আমাদের এই মেহেরপুরের কথাই বলছি। নবদ্বীপ সন্নিহিত এলাকা এবং নদীয়া জেলার অবিভক্ত মহকুমা হিসেবে মেহেরপুরে উদারনৈতিক মানবতাবাদের চর্চা উনিশ শতকের গোড়া থেকেই শুরু হয়ে যায়। সমাজের ওপর মহলে সনাতন হিন্দুধর্মের বর্ণভেদ ও শ্রেণিবৈষম্যের বিষবাষ্প গুমোট বেঁধে থাকলেও নিচুতলার লৌকিক জীবন ছিল উদারতা ও সহমর্মিতায় স্নাত। অন্ত্যজ শ্রেণির বঞ্চিত লাঞ্ছিত অধিকারহারা মানুষ উচ্চশ্রেণির দলন-পীড়ন-নির্যাতনের মুখে এক আসনে এসে দাঁড়ায়। বহু কালের প্রচলিত দেব আরাধনার পথ পরিহার করে তারা মানব আরাধনার মধ্যে মুক্তির পথ খুঁজে নেয়, মানুষকে ভালোবাসে, মানুষেরই ভজনা করে। সবার ওপরে মানুষকেই সত্য বলে জ্ঞান করে। সর্বপ্লাবী এই মানবভক্তি আধুনিককালের মানবতাবাদ বা হিউম্যানিজমের সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ কিনা জানি না, তবে মানুষকে সবার ওপরে তুলে ধরার এই সহজ দর্শন এবং সাহসী উচ্চারণ; কিন্তু উচ্চবর্ণের শিক্ষিতজনের কাছ থেকে আসেনি, বরং তা এসেছে নিম্নবিত্তের সাধারণ মানুষের জীবনধারার ভেতর থেকে। দীর্ঘকালের বঞ্চনা এবং অবমাননা তাদের ক্ষুব্ধ করেছে; কিন্তু প্রতিশোধপরায়ণ করেনি। ক্ষেত্রবিশেষে হয়তো দুর্বিনীত করেছে, তাই তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে যত্রতত্র মাথা নোয়াতে চায়নি। নিজের জগতে তারা নিজেরাই রাজাধিরাজ, অন্যকে কুর্নিশ করা বা বশ্যতা স্বীকার করার পক্ষপাতী তারা নয়। নিজেকে নিয়ে একেবারে স্বতন্ত্রধারার গবেষণা করে ভেতরের ‘আমি’কে আবিষ্কারে ব্রতী হয়েছে, সাধনা করেছে সেই ‘আমি’র সঙ্গে বোঝাপড়ার। এ সাধনা করতে গিয়ে জাতপাত শ্রেণিভেদ এমনকি লিঙ্গভেদও তুচ্ছ হয়ে গেছে।

এমনই এক মানবতাবাদী সাধক লৌকিক ধর্মের প্রবর্তকের নাম বলরাম হাড়ি (১৮২৫-১৮৯০)। তার ধর্মমতের অনুসারীদের বলা হয় বলরামী সম্প্রদায়ের মানুষ। শতাধিক বছর পূর্বে অক্ষয়কুমার দত্ত তাঁর সুবিখ্যাত লোকগবেষণাগ্রন্থ ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’-এ হাড়ি সম্প্রদায় ও তাদের ধর্মমত সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। পণ্ডিত যোগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য রচিত ‘Hindu Castes and Sects’ গ্রন্থে পাওয়া যায় আরও বিস্তারিত তথ্য। বলরাম হাড়ির মৃত্যুর (১৮৯০) কিছু পরে ১৮৯২ সালে তিনি বলরামের বিধবা স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ সম্প্রদায়ের সাধন-ভজনের রীতি পদ্ধতিবিষয়ক নানা তথ্য জেনে তাঁর বইয়ে পরিবেশন করেন। ‘বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি : মেহেরপুর জেলা’ গ্রন্থে লেখা হয়েছে, ‘চৈতন্য প্রবর্তিত নববৈষ্ণব ধর্মের প্রভাবে আঠারো শতকের শেষে মেহেরপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় লৌকিক গৌণধর্ম বলরামী সম্প্রদায়। এই ধর্মের প্রাণপুরুষ ও প্রবর্তক ছিলেন বলরাম হাড়ি।’ (প্রকাশক : বাংলা একাডেমি, জুন ২০১৩, পৃষ্ঠা-৪৬)।

রবীন্দ্রনাথের প্রায় সমসাময়িক মেহেরপুরের বিশিষ্ট লেখক দীনেন্দ্র কুমার রায় (১৮৬৯-১৯৪৩) সেই সময়ের অবিভক্ত মেহেরপুরের সামাজিক জীবনের বিশ্বস্ত ছবি এঁকেছেন তাঁর ‘সেকালের স্মৃতি’ নামক অসামান্য গ্রন্থে। সেখানেই পাওয়া যায় মেহেরপুরের তৎকালীন জমিদার মথুরানাথ মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর সুযোগ্য পুত্র চন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের নীলকরবিরোধী বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং তাঁদের দোর্দ-প্রতাপের কথা। এই অসাধারণ আকরগ্রন্থে দীনেন্দ্র কুমার রায় মেহেরপুরের অপর জমিদার মল্লিক বাবুদের কথাও যৎসামান্য জানিয়েছেন। এই মল্লিক বাবুদের প্রভাব প্রতিপত্তির বিবরণ দিতে গিয়ে তাঁদের মন্দিরের পাহারাদার বলরাম হাড়ির প্রসঙ্গও চলে আসে। কারণ এই মন্দির রক্ষক বলরামই পরে ধর্মসংস্কারক হিসেবে আবির্ভূত হন এবং সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র একটি সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন। বলরামী সম্প্রদায়। মেহেরপুরে তো বটেই, বলরাম প্রবর্তিত লৌকিক এই গৌণ ধর্ম-সম্প্রদায় সেকালের অবিভক্ত নদীয়া জেলার সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে বিশেষ আন্দোলন সৃষ্টি করে। সেই আন্দোলনের দীপশিখাটি বর্তমানে মেহেরপুরে নিভন্তপ্রায় হলেও পশ্চিমবঙ্গের তেহট্ট থানার নিশ্চিন্তপুরে এখনো বেশ উজ্জ্বলতায় বিরাজমান আছে। বলরাম হাড়ির অনুসারীরা এখনো তাদের সাধনসংগীতের মধ্য দিয়ে ঘোষণা করে-

‘দিব্যযুগে যে হাড়িরাম

মেহেরপুরে তার নিত্যধাম’

তারা প্রবলভাবে বিশ্বাস করে, ‘সত্য ত্রেতা দ্বাপর কলি এই চার যুগের আগে ছিল দিব্যযুগ। সেই সময়ে তেনার জন্ম। তার মানে, সব অবতারের আগে তিনি।’(১)

বিশিষ্ট লেখক ও লোকগবেষক সুধীর চক্রবর্তী নিজে মেহেরপুরে এসে বলরামী সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে সরেজমিনে দেখে শুনে যে তথ্যাদি পেয়েছেন, তার ওপরে ভিত্তি করে জানাচ্ছেন: ‘উনিশ শতকের নদীয়া জেলার মেহেরপুর। ছোট শহরের পশ্চিম দিকে অন্ত্যজ শ্রেণির বসবাস। সেখানে মালোপাড়ায় জন্মেছিল বলরাম ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে। বাবা গোবিন্দ হাড়ি, মা গৌরমণি। সেকালে হাড়িদের জীবিকা ছিল শূকর চরানো, গাছগাছড়ার ওষুধ বিক্রি, লাঠিয়ালগিরি বা দারোয়ানি। বলরাম ছিল মেহেরপুরের বিখ্যাত ধনী পদ্মলোচন মল্লিকের দারোয়ান।’(২)

লেখক দীনেন্দ্রকুমার রায় ‘সেকালের স্মৃতি’ গ্রন্থে জানাচ্ছেন, ‘বলরাম মেহেরপুরের মালোপাড়ার অস্পৃশ্য হাড়ি বংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, হাড়ির ঘরে জন্মিয়াও পূর্বজন্মের সুকৃতির ফলে শৈশবেই তাঁহার হৃদয়ে ধর্মভাব অঙ্কুরিত হইয়াছিল। হিন্দুধর্মে তাঁহার প্রবল অনুরাগ ছিল। তিনি যৌবনকালে মল্লিক জমিদারদের গৃহ-বিগ্রহ আনন্দবিহারীর দেবয়াতনের রক্ষী নিযুক্ত হইয়াছিলেন। এই চাকরি পাইয়া বলরাম আনন্দিত হইয়াছিলেন। তিনি বিগ্রহের বাসগৃহে প্রবেশ করিতে না পাইলেও দূরে থাকিয়া ভক্তিভরে আনন্দবিহারির পূজার্চনা করিতেন। আনন্দবিহারির সর্বাঙ্গে স্বর্ণালঙ্কার, মস্তকে শিখিপুচ্ছ-শোভিত রত্নমুকুট ও চরণযুগলে সোনার নূপুর ছিল; বলরামের প্রতি এই সব অলঙ্কার রক্ষার ভার অর্পিত হইয়াছিল।’(৩)

মালোপাড়ার বলরাম উপযুক্ত কাজই পেয়েছিলেন। শক্তি সাহাস যোগ্যতার কোনেটিতেই ঘাটতি ছিল না তাঁর। সেকালে নদীয়া অঞ্চলের জমিদারদের যেসব পাইক-বরকন্দাজ ছিল তাদের মধ্যে বলরামের মতো সুদক্ষ তীরন্দাজ এবং লাঠিয়াল আর কেউ ছিল না। আর তাঁর সাহসের তো তুলনাই হয় না। তখনকার দিনে দস্যু ডাকাতদের আক্রমণ থেকে নিজেদের জানমাল রক্ষার জন্য জমিদাররা এ রকম দক্ষ এবং সাহসী দারোয়ান বা পাহারাদার রাখতেন। বিশেষত নদীয়া অঞ্চলের কিংবদন্তিতুল্য দুর্ধর্ষ বিশে ডাকাতের উৎপাতে জমিদাররা থাকতেন তটস্থ হয়ে। মেহেরপুরের জমিদার পদ্মলোচন মল্লিক একদা বিশে ডাকাতের কাছ থেকে ভীতিপ্রদ এক চিঠি পেয়ে আতঙ্কে উৎকণ্ঠায় অস্থির হয়ে উঠলে মন্দিরের দারোয়ান বলরাম নিজেই বিশে ডাকাতকে মোকাবেলার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। চিঠিতে বিশে ডাকাত ওরফে বিশ্বনাথ লিখে জানিয়েছে, ‘কোজাগর পূর্ণিমার রাত্রিতে সে তাঁহাদের গৃহে সদলবলে উপস্থিত হইবে। যদি ইহাতে তাঁহাদের অনিচ্ছা থাকে, তাহা হইলে অমুক মাঠে রাত্রি এক প্রহরের সময় কোনো পাইক মারফত দুই হাজার টাকা সেলামি পাঠাইতে হইবে; সেই টাকা পাইলে সে সদলে সেই স্থান হইতে ফিরিয়া যাইবে, নতুবা তাহাদের মঙ্গল নাই।’৪ বিশে ডাকাতের এই হুমকিতে জমিদার চন্দ্রমোহন মল্লিক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেও চ্যালেঞ্জটা শক্তভাবে গ্রহণ করেন তাঁর প্রহরী বলরাম হাড়ি। টাকা ছাড়াই নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হন শুধু তীর ধনুক হাতে, একা। কোজাগরি রাতে সেই তীর ধনুকের কসরৎ ও কেরামতি দেখিয়ে তিনি দুর্ধর্ষ বিশে ডাকাতকে বশীভূত করেন, রক্ষা করেন তার প্রভু পদ্মলোচন মল্লিককে।

ভাগ্যের এমনই পরিহাস, বিশে ডাকাতের সম্ভাব্য আক্রমণের হাত থেকে প্রভুকে রক্ষা করেও পরে সেই প্রভুর লাঞ্ছনা ও পীড়ন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন না বলরাম হাড়ি। ‘হঠাৎ এক রাতে মল্লিকদের গৃহদেবতার সমস্ত অলঙ্কার গেল চুরি হয়ে। সন্দেহ পড়ল বলরামের ওপর। তাকে গাছে বেঁধে প্রচণ্ড প্রহার চলল। শেষ পর্যন্ত সকলের পরামর্শে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো তাকে। এই ঘটনায় বৈরাগ্য এসে গেল বলার মনে। ছি. এত নিচু মানুষের মন? নিচু জাতি বলে বড়লোকদের এত ঘেন্না? সহসা তার মধ্যে জন্ম নিল এক প্রতিবাদী মানুষ। এই অসহায় জীবন, সমাজের এই অন্যায়, বিশ্বাসের এই স্খলন তাকে টলিয়ে দিল।’(৫)

বলরাম হাড়ি ওরফে বলা হাড়ি অপমানে লাঞ্ছনায় ম্রিয়মাণ হয়ে মেহেরপুর ত্যাগ করেন, চলে যান লোকচক্ষুর অন্তরালে। কোথায় যান-কেউ জানে না। বেশ কয়েক বছর পর তিনি অনেক শিষ্য-সাগরেদ সঙ্গে নিয়ে আবার মেহেরপুরে ফিরে আসেন; কিন্তু তখন তিনি সাধনায় সিদ্ধি লাভ করা আমূল বদলে যাওয়া অন্য মানুষ। কেশে-বেশে, চেহারায়-পোশাকে কত না পরিবর্তন। শিষ্যভক্তদের সঙ্গে নিয়ে ভৈরবতীরে আশ্রম গড়ে নিয়ে নবলব্ধ ধর্মমতের চর্চা করতে থাকেন। ততদিনে মল্লিক বাড়ির অলঙ্কার-চুরির কিনারা হয়েছে। প্রকৃত চোর ধরা পড়েছে। ফলে অনুতপ্ত জমিদার পদ্মলোচন মল্লিক বলরাম হাড়ির সাধন-ভজনের জন্য ভৈরবতীরে জমি দেন। আশ্রম তৈরিতে আর্থিক সহযোগিতা পর্যন্ত করেন। প্রকৃতপক্ষে একদিন তাঁরই কারণে মেহেরপুর থেকে বলরামের উৎখাত হয়, আবার সাত্ত্বিক সাধক রূপে প্রত্যাগমনের পর এই মেহেরপুরে তাঁর প্রতিষ্ঠার নেপথ্যেও তিনি ভূমিকা পালন করেন। অথচ এই বলরামের প্রতিষ্ঠা উচ্চ শ্রেণির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই। দীর্ঘকালের ব্রাহ্মণ্য শাসন ও শোষণে পর্যুদস্ত কৈর্বত্য, বেদে, বাগদি, নমঃশূদ্ররা দলে দলে এসে বলরামকে পরিত্রাতা হিসেবে গ্রহণ করে। হাড়ি ডোম মুচি বাগদির পাশাপাশি নিম্নবিত্তের মুসলমানরা পর্যন্ত তার শিষ্যত্ব বরণ করে।‘এরা গঙ্গাজলের মহিমা কিংবা সংস্কৃত মন্ত্রের পবিত্রতা মানতো না। বলরামীরা সৎ শুদ্ধ জীবনযাপনে আগ্রহী এবং গুরুবাদে আস্থাহীন।’(৬)

খুব সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জাগে-মালোপাড়ার অন্ত্যজ হাড়ির ঘরে জন্ম নেওয়া অতি সাধারণ বিদ্যাহীন এই বলরাম কোথায় পেলেন এ রকম শাস্ত্রহীন মন্ত্রহীন মানবমুক্তির আলোকিত দর্শন? গুরুবাদে আস্থাহীন এই মানুষটির গুরু পাওয়া যাবে কোথায়?

অপমানিত হয়ে মেহেরপুর ত্যাগ করার পর কোথায় কীভাবে কেটেছে তার সময়, কত বছরের ব্যবধানে পুনরায় মেহেরপুরে ফিরে আসেন, কোনো গবেষক এসব প্রশ্নের মীমাংসা করতে পারেননি, এমনকি সামান্য ইঙ্গিতও দিতে সক্ষম হননি। অদ্যাবধি জানা যায়নি কোথায় কীভাবে সাধনা করে তার সিদ্ধি লাভ ঘটে। উত্তরহীন এই প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে আমরা দৃষ্টি ফেরাই আঠারো শতকের শেষ ভাগ এবং উনিশ শতকের প্রথম ভাগজুড়ে প্রচলিত বাংলার সামাজিক জীবনাচারের দিকে। শাস্ত্রের দোহাই, অন্ধবিশ্বাস আর সীমাহীন কুসংস্কার জীবনের স্বাভাবিক পথ কণ্টকাকীর্ণ করে রেখেছিল। আর উক্ত বর্ণের দমন পীড়ন এবং সংকীর্ণ শাস্ত্রব্যাখ্যা নিম্নবর্ণের সাধারণ মানুষের সামাজিক জীবনে বয়ে আনে নিরাপত্তাহীনতা এবং অনিশ্চয়তা। শাস্ত্র এবং আচার সংস্কারের বাইরে ব্রাত্যজনের স্বাভাবিক জীবন বিকাশের জন্য উন্মুক্ত একটা প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তা যাঁরা তীব্রভাবে এ সময়ে অনুভব করেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন কল্যাণীর রামস্মরণ পাল, ছেঁউড়িয়ার লালন শাহ, হুদোর চরণ পাল, ভাগা গ্রামের খুশি বিশ্বাস এবং মেহেরপুরের বলরাম হাড়িকেও এই পঙ্ক্তিভুক্ত করতে হয়। তাঁরা উচ্চবর্ণদের চোখ রাঙানির সীমানার বাইরে খুব সাধারণ সহজ সরলভাবে টিকে থাকার নিরাপদ প্ল্যাটফর্মের সন্ধান দিতেন। চারদিকের দলিত পীড়িত অবমানিত মানুষের মুখের দিকে তাকিয়েই হয়তো তাঁরা প্রেরণা লাভ করেছেন। মানুষই তো তাদের পরম আরাধ্য। তাই শাস্ত্রাচারের বাইরে মানুষের বাঁচার উপায় খুঁজেছেন। ‘সংকীর্ণ শাস্ত্র ব্যাখ্যা করে বাঁচা নয়, উদার মানবতা নিয়ে সহজ করে বাঁচা। তাই মূর্তিপূজা, অপদেবতা পূজা, অকারণ তীর্থ ভ্রমণ, দেবদ্বিজে বিশ্বাস, শাস্ত্র নির্ভরতা ও আচারসর্বস্বতার বিরুদ্ধে এদের অস্ত্র ছিল জাতিভেদহীন সমন্বয় এবং নতুন মানবতাবাদী সহজ ধর্মাচরণ; কিন্তু কর্তাভজা সাহেবধনীরা অবতারতত্ত্ব মানেন। বলরাম সেটাও মানেননি। তিনি যুগলভজনও মানেননি। বলরাম ছিলেন বৈষ্ণবতারও বিরোধী। এখানেই বলা হাড়ির অভিনবত্ব।’(৭)

অন্যান্য উপাসক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বলা হাড়ি সম্প্রদায়ের মৌলিক কোনো সাদৃশ্য নেই বললেই চলে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার এ সম্প্রদায়ে উচ্চবর্ণের কারও উপস্থিতি নেই, সম্ভবত প্রবেশাধিকারও নেই। এদের মন্ত্র নেই গুরু নেই, জপমালা আলখাল্লা তসবি, খেলকা-এসবেরও কোনো বালাই নেই। এরা বিশ্বাস করে হাড় থেকে সৃষ্টি হাড়িরামের। মুসলমানদের মধ্যে থেকে যারা এ সম্প্রদায়ভুক্ত হয়, হাড়িরামকে তারা বলে হাড়িআল্লা। বলরামীরা একমাত্র হাড়িরাম ছাড়া কারো কাছে মাথা নোয়াতে আসে না। এ ধর্মের আচরণবিধি খুবই সহজ সরল। আসলে বলরামীরা মানুষভজনে বিশ্বাসী। মানুষ, তাদের মতে, কারিকর হাড়িরামের সৃষ্টি। ঈশ্বরের নয়। সংসারে থেকে এ ধর্মের সাধনা করতে হয়।’(৮) 

বিশুদ্ধ মানবতাবাদী এই সাধকের মৃত্যু হয় ১৮৯০ সালে, মেহেরপুরে। মৃত্যুর পর তাঁকে সমাহিত করা হয় তাঁর মালোপাড়ার আশ্রমে। বর্তমানে কুষ্টিয়ার জুগিয়া এবং পশ্চিমবঙ্গের নিশ্চিন্তপুরে এ সম্প্রদায়ের বেশ কিছু অনুসারী আছে বটে, মেহেরপুর অঞ্চলে তাদের অস্তিত্ব বিশেষ একটা দৃশ্যমান নয়। তবে এখনো মেহেরপুরের মালোপাড়ায় বলা হাড়ির সমাধিমন্দির ঘিরে প্রতি বছর বারুণী তিথিতে বলরামীদের মেলা অনুষ্ঠিত হয়, মেলাকে ঘিরেই এপার বাংলা ওপার বাংলার বলরামী সম্প্রদায়ের মানুষেরা সমবেত হয়। ‘আর এই মেলার মধ্য দিয়েই বারবার ফিরে আসেন অন্ত্যজ ও অস্পৃশ্যতার এই মহান সাধক, যিনি ঊনিশ শতকের উচ্চধর্ম বিশেষত ব্রাহ্মণ কায়স্থ এমনকি বৈষ্ণবদের বিরুদ্ধে তাঁর মতকে দাঁড় করিয়াছিলেন। কালের যাত্রায় বলরামী ধর্মের এই ধারাটি ক্ষীয়মান ও বিধ্বস্ত হয়ে গেছে, তবু অন্ত্যজ ও অস্পৃশ্যদের জীবন ও সংস্কৃতিতে বলরামের উপস্থিতি আছে প্রবলভাবে।(৯)

মেহেরপুরের বলরাম হাড়ি প্রবর্তিত লৌকিক ধর্মমতের সারকথা মানুষভজন। কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া থেকে ‘ভবে মানুষগুরু নিষ্ঠা যার’ বলে মানব পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছিলেন মানবতাবাদী, অসাম্প্রদায়িক ও মরমি সাধক লালন শাহ (১৭৭৪-১৮৯০)। দুজনের মানবমুখী লৌকিক দৃষ্টিভঙ্গির অভিন্নতা এঁদের জীবনকালের প্রতি মনোযোগ আকৃষ্ট করে। জন্মসালের হিসেবে লালন অপেক্ষা বলা হাড়ি (১৮২৫-১৮৯০) প্রায় পঞ্চাশ বছরের কনিষ্ঠ হলেও উভয়ের মৃত্যুসাল অভিন্ন, ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ। 

এ সাদৃশ্য কাকতালীয় জানি, তবু ভাবনা জাগে ‘মানুষভজনে’ আস্থাবান এই দুই সাধকের কোনো যোগাযোগ কি ঘটে থাকতে পারে না? এই নিরিখে কোনো গবেষণা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। মেহেরপুর থেকে ছেঁউড়িয়ার ভৌগোলিক দূরত্ব এমন বেশি নয়, দেখতে পাই-চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গির দূরত্ব আরও অনেক কম। জোড়াসাঁকোর সম্ভ্রান্ত ঠাকুরবাড়ির সন্তান দার্শনিক-কবি রবীন্দ্রনাথ যদি লালন ভাবাদর্শে প্রভাবিত হয়ে জীবনের পড়ন্ত বেলায় নিজেকে মন্ত্রহারা ব্রাত্যজন ভাবতে পারেন এবং নিজেকে ‘রবীন্দ্রবাউল’ বলে ঘোষণা করতে পারেন, তাহলে সে প্রভাব বলরাম হাড়ির উপরে পড়াই বা অস্বাভাবিক হবে কেন? উত্তরকালে রবীন্দ্র-উপস্থাপনার সূত্র ধরে লালন দর্শন আজ বিশ্বসভায় সমাদৃত হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় এখন লালন গবেষণা চলছে সবিস্ময়ে। এ বড় গৌরবের, বড়ই আনন্দের। মেহেরপুরের অধিবাসী হিসেবে শুধু নয়, বলা হাড়ির দ্রোহ এবং সাধনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল একজন মানুষ হিসেবে ভাবতে ইচ্ছে করে-বাংলা ভাষাভাষী কোনো কৌতূহলী দার্শনিক গবেষকের মনোযোগ কি মানবতাবাদী বলরামী দর্শন, তার ধর্মাচার ও জীবনাচারের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে না? শতাধিক বছর আগে অক্ষয়কুমার দত্ত ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’ গ্রন্থে এবং যোগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য Hindu Castes and Sects- গ্রন্থে বলা হাড়ি সম্পর্কিত যেটুক তথ্যের সূত্র রেখে গেছেন, পরবর্তীতে চারণগবেষক সুধীর চক্রবর্তী ‘গভীর নির্জন পথে’ নামক গ্রন্থের একটি অধ্যায়ে সেই সূত্রকে খানিকটা সম্প্রসারিত এবং শেকড়লগ্ন করেছেন বটে, তবু বর্তমান এবং ভাবিকালের গবেষকের কাছে বলরামী দর্শন আরও অনেক পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের দাবি রাখে বলে আমার বিশ্বাস।

এ নিবন্ধের শুরুতে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের খেদোক্তি উদ্ধৃত করা হয়েছে বলে কোনো পাঠক যেন ভেবে না বসেন-মেহেরপুরে লুপ্তপ্রায় হাড়ি সম্প্রদায়ের নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির মতলবে বর্তমান নিবন্ধকার বিশেষ তৎপর হয়েছেন; না, সে তৎপরতার কোনো প্রয়োজন নেই। একদিন, সে বড়ই বৈরী সময়ে যে মহান পুরুষ এই মেহেরপুর থেকে মানুষকে শাস্ত্রাচার ও সংস্কারের নিগড়-মুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং তাঁর সে উদ্যোগে সাড়া দিয়ে যুক্ত হন হাজার হাজার নিম্নবিত্তের মানুষ, আমি ভেবে দেখতে বলি-সেই মেহেরপুর এরকম প্রায় বলরামী শূন্য হয়ে পড়লো কেন? এক সময় সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা এবং যুক্তিহীন আচার-শাসনে শোষণেও) অতিষ্ঠ হয়ে সাধারণ মানুষ বলরামের বিশুদ্ধ মানবতাবাদী সাধনধারায় যুক্ত হয়েছিল, বর্তমানে কি সমাজচিত্র বদলে গেছে? নাকি সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা এমন পর্যায়ে নেমে এসেছে যে বলরামের স্মৃতিবিজড়িত এই মেহেরপুরে বসবাসে বলরামী সম্প্রদায়ের মানুষ আর স্বস্তি বোধ করে না? বলরাম হাড়ির ভগ্নপ্রায় সমাধিমন্দিরটি অন্তত ঐতিহ্য সংরক্ষণের স্বার্থে হলেও সম্ভাব্য ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার ভাবনা শুধু নয় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এখনই দরকার। এসব নিয়ে মেহেরপুরবাসীর সত্যিই কোনো দায় নেই?


তথ্য নির্দেশ :

১. সুধীর চক্রবর্তী : গভীর নির্জন পথে। চতুর্থ মুদ্রণ ২০১০। আনন্দ পাবলিশার্স। পৃষ্ঠা-৪০

২. প্রাগুক্ত। পৃষ্ঠা-৩৭

৩. দীনেন্দ্র কুমার রায় : রচনা সংগ্রহ। প্রথম সংস্করণ, জানুয়ারি ২০০৪। আনন্দ পাবলিসার্স। পৃষ্ঠা-৩১১

৪. প্রাগুক্ত। পৃষ্ঠা-৩১১

৫. সুধীর চক্রবর্তী : গভীর নির্জন পথে। চতুর্থ মুদ্রণ ২০১০। আনন্দ পাবলিসার্স। পৃষ্ঠা-৩৭

৬. বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি : মেহেরপুর। বাংলা একাডেমি। জুন-২০১৩। পৃষ্ঠা-৪৬

৭. সুধীর চক্রবর্তী : গভীর নির্জন পথে। চতুর্থ মুদ্রণ ২০১০। আনন্দ পাবলিসার্স। পৃষ্ঠা-৩৯

৮. প্রাগুক্ত। পৃষ্ঠা-৪১

৯. বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি : মেহেরপুর। বাংলা একাডেমি। জুন ২০১৩। পৃষ্ঠা-৪৬  

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //