পেন্টি সারিকস্কির কবিতা

দুনিয়া বদলাইয়া ফেলা
            দর্শনের দায় নয়
দর্শন বদলাইয়া ফেলাই
            দুনিয়ার দায় বরং
আমি তাই হইয়াছি
            মার্কস অব্যবসায়ী
                        -পেন্টি সারিকস্কি

কবিতা মানবজাতির এজমালি বা সাধারণ সম্পত্তি-কথাটা একদা চালু হইয়াছিল জার্মান মনীষী এয়োহান বোলফগাঙ্গ ফন গ্যেটের নামে। গ্যেটে হয়ত বলিতে ভুলিয়া গিয়াছিলেন, কবিতা নহে-প্রকৃত প্রস্তাবে-ভাষাই মানবজাতির সত্যকার এজমালি। কারণ কবিতা কেন গণিতও ভাষা ছাড়া সম্ভব হয় না। দুঃখের মধ্যে, ভাষায় যাহারা কথাবার্তা বলেন তাহাদের প্রজাতি পরিচয় মানব হইলেও জগতে নানান মানুষ নানান ভাষা এস্তেমাল করিয়া থাকেন। আর কবিতাও নিশ্চিত লিখিতে হয় কোন না কোন ভাষায়। কারণ ‘মানুষের ভাষা’ বলিয়া কোন অদ্বিতীয় বা অপার ভাষা নাই। এখানেই তর্জমার দাবি উঠিয়াছে।

এয়ুরোপের এক কিনারার দেশ ফিনল্যান্ড। বাংলায় বলা যায় সুমিদেশ। ২০০৫ সালের হিশাবে ঐ দেশের লোকসংখ্যা ছিল মাত্র ৫২ লাখ। এক্ষণে হয়ত ৫৫ লাখ। সে দেশে শতে ৯৩ জন মানুষ সুমি ভাষায় কথা বলেন। ১৯১৭ সালে রুশদেশে গণতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটিবার পর দেশটির স্বাধীনতা স্বীকৃত হয়। ইহার আগের একশত বছর (১৮০৯-১৯১৭) দেশটি রুশ সাম্রাজ্যের অধীনতাপাশে আবদ্ধ ছিল। তাহার আগের সাত শত বছর পাশের অপর পরাশক্তি স্বেন সাম্রাজ্য ওরফে স্বেরিয়া বা সুইডেনের ডাচি বা করদ রাজ্য পরিচয়ে শাসিত হইত এই দেশ। বড় দুই প্রতিবেশীর সহিত বসবাসের ভাগ্য সত্ত্বেও সুমি ভাষা ও সংস্কৃতির বিলোপ হয় নাই।

সুমি ভাষার ইতিহাসে নাসারাধর্মের-বিশেষ প্রতিবাদী নাসারাদের-বিশেষ স্থান দেখা যায়। ঈসালি দ্বাদশ শতক হইতে সে দেশে নাসারাধর্মের-আর ষোড়শ শতকে জার্মানি হইতে নতুন সংস্কারের-তরঙ্গ আসিয়া পৌঁছে। পবিত্র নাসারা ধর্মগ্রন্থের সুমি ভাষায় প্রথম তর্জমা হয় ষোড়শ শতকেই। রুশ সাম্রাজ্যের সহিত থাকিবার সময় গোঁড়া বা যাবনী নাসারার প্রভাবও বিস্তৃত হইতে থাকে। ১৯৩৯ সালের রুশযুদ্ধের পর সুমি জাতির আদ্য বাসভূমি বলিয়া কথিত পূর্বাঞ্চল-নাম কারেলিয়-সাবেক সোবিয়েত এয়ুনিয়নের দখলে চলিয়া যায়। এখনও উহা রুশ সমবায়ের অন্তর্গত কারেলিয়া প্রজাতন্ত্র আকারে বিরাজ করিতেছে।

কথাগুলি না লিখিলেই নহে। সুমি ভাষা (Soumi ev Soumen Kieli) এয়ুরোপ মহাদেশের নানান প্রধান ভাষার গোষ্ঠীভুক্ত নহে-কথাটা বিশেষ মনে রাখিবার জিনিশ। এয়ুরোপের বেশির ভাগ ভাষাই তথাকথিত ভারতীয়-এয়ুরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। পক্ষান্তরে সুমি ভাষা অন্য গোষ্ঠীর অন্তর্গত। এই গোষ্ঠীর নাম ফিনো-উগ্রীয় বা উরালীয়। সুমি ভাষার নিকটাত্মীয়দের মধ্যে কারেলিয়ার ও এস্তোনিয়ার ভাষা। দূর সম্পর্কীয়গণের মধ্যে পড়ে রুশদেশের অন্দরভাগে কথিত কয়েকটি-যেমন মারি, উৎমূর্ত এবং কোমি প্রভৃতি-ভাষা।

ভারতীয়-এয়ুরোপীয় গোষ্ঠীর বিচারে সুমি ভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ‘অদ্ভূত’। এই ভাষায় যেমন লেখা তেমন উক্তি। একই উক্তির একাধিক বানান লেখা হয় না। ব্যাকরণের হাজার নিয়ম কিন্তু নিয়মের অতিক্রম অতি অল্পই। দুনিয়ার সকল ভাষার মত সুমিও ক্রমশ বদলাইয়া যাইতেছে। বিশেষ করে দ্বিতীয় এয়ুরোপীয় মহাযুদ্ধের পর সে দেশে কারখানা শিল্পের বিকাশ ও নগরায়ন বৃদ্ধি পাইতেছে। সুমিদেশ এখন-১৯৯৫ সনের পর-এয়ুরোপীয় এয়ুনিয়নের অন্তর্গত হইয়াছে। তবে মনে রাখা মন্দ নহে, আট শতাব্দী জুড়িয়া পরাধীনতার ছোঁয়া ভাষা ও সাহিত্য হইতে মাত্র দুই তিন দশকে উবিয়া যাইবে না।

বলা প্রয়োজন, পেন্টি সারিকস্কির কবিতা আমি সুমি হইতে অনুবাদ করি নাই। করিয়াছি ইংরেজি অনুবাদ হইতে। অনুবাদক আনসেলম হলো (১৯৩৪-২০১৩) নিজেও ছিলেন সুমিভাষী কবি। তাঁহার মায়ের জবান জার্মান হইলেও তিনি বড় হইয়াছেন খোদ হেলসিঙ্গসফোর্স বা হেলসিংকি শহরে। হলোর তর্জমা পেন্টি সারিকস্কি নিজেও কতক পরিমাণে দেখিয়া দিয়াছিলেন।

পেন্টি সারিকস্কির কবিতার মতন নতুন কবিতা যে ভাষায় লেখা হয় জগতসভায় সে ভাষার মর্যাদাও বৃদ্ধি পায়। যাঁহাদের বলার অধিকার আছে তাঁহারা বলিতেছেন, এই কবির শক্তি সুমি ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি করিয়াছে। তাঁহার শক্তি দুনিয়ার যে কোন নমস্য কবির সহিত তুলনীয়।

এক

আমাদের ভাষায় যেমন সুমি ভাষায়ও তেমন কিছু দিকপাল আছেন যাঁহারা মনে করেন কবির জীবনকাহিনীর মধ্যেই কবিতার অর্থ খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে। যেন ভাষা কথাটাই বাহ্য। সম্ভবত আমাদের সাহিত্যের দিকপাল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই সম্ভ্রান্ত ঐতিহ্যটা চালু করিয়াছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের কবিতা সম্পাদনার ছলে তিনি একদা-ঘটনাটি ১৮৯২ সালের-লিখিয়াছিলেন:

কবির কবিত্ব বুঝিয়া লাভ আছে, সন্দেহ নাই। কিন্তু কবিত্ব অপেক্ষা কবিকে বুঝিতে পারিলে আরও গুরুতর লাভ। কবিতা দর্পণ মাত্র-তাহার ভিতর কবির অবিকল ছায়া আছে। দর্পণ বুঝিয়া কি হইবে? ভিতরে যাহার ছায়া, ছায়া দেখিয়া তাহাকে বুঝিব। কবিতা কবির কীর্ত্তি-তাহা ত আমাদের হাতেই আছে-পড়িলেই বুঝিব। কিন্তু যিনি এই কীর্ত্তি রাখিয়া গিয়াছেন, তিনি কি গুণে, কি প্রকারে, এই কীর্ত্তি রাখিয়া গেলেন, তাহাই বুঝিতে হইবে।

বঙ্কিমচন্দ্রের এই জীবনী সমালোচনার শিক্ষা কি বিপরীত ফল ফলাইতে পারে তাহার প্রমাণ তিনি নিজেই রাখিয়া গিয়াছেন। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের কবিতা মার্জনা বা সম্পাদনার নামে তিনি যাহা করিয়াছেন তাহা এক অর্থে অমার্জনীয়। তাঁহার স্বীকারোক্তিটা শুনিতেই হয়:

ঈশ্বর গুপ্তের যে অশ্লীলতার কথা আমরা লিখিলাম, পাঠক তাহা এ সংগ্রহে কোথাও পাইবেন না, আমরা তাহা সব কাটিয়া দিয়া, কবিতাগুলিকে নেড়া মুড়া করিয়া বাহির করিয়াছি। অনেকগুলিকে কেবল অশ্লীলতাদোষ জন্যই একেবারে পরিত্যাগ করিয়াছি। তবে তাঁহার কবিতার এই দোষের এত বিস্তারিত সমালোচনা করিলাম, তাহার কারণ এই যে, এই দোষ তাঁহার প্রসিদ্ধ। ঈশ্বর গুপ্তের কবিত্ব কি প্রকার তাহা বুঝিতে গেলে, তাহার দোষ গুণ দুই বুঝাইতে হয়। শুধু তাই নয়। তাঁহার কবিত্বের অপেক্ষা আর একটা বড় জিনিষ পাঠককে বুঝাইতে চেষ্টা করিতেছি। ঈশ্বর গুপ্ত নিজে কি ছিলেন, তাহাই বুঝাইবার চেষ্টা করিতেছি।

বঙ্কিমচন্দ্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া সম্প্রতি এক জীবনচরিতকার কাজী নজরুল ইসলামের নতুন জীবনী লিখিয়াছেন। তিনিও নজরুল ইসলামের কবিতার মনীষা কিংবা সঙ্গীত প্রতিভার তুলনায় ‘আর একটা বড় জিনিষ’ পাঠককে বুঝাইতে চেষ্টা করিয়াছেন। নজরুল ইসলাম ‘নিজে কি ছিলেন’ শুদ্ধ তাহা দিয়া কি তাঁহার কবিতা-গানের কথা বাদ দিলাম-আদৌ বুঝা যাইবে? নিশ্চয়ই যাইবে না। অথচ আমাদের বহুলপুরষ্কৃত জীবনচরিতকার তাহাই করিয়াছেন।

সত্য বলিতে এই ধরণের অশ্লীলতা তিরষ্কার পাইবার যোগ্য। কবিতা দিয়া কবিকে বুঝিব, না চরিতকার রচিত জীবনী দিয়া কবিকে বুঝিব? এই প্রশ্নের কোন সহজ মিমাংসা নাই। তবে একথা জোর দিয়া বলিতে হইবে, কবিতা বাদ দিয়া কবির জীবনচরিত লেখার চেষ্টা একান্তই ভূতের বেগার খাটা। গোলাম মুরশিদ তাহাই করিয়াছেন। ১৯২৪ কি ১৯২৯ সালের পর নজরুল ইসলাম যদি আর কিছু না লিখিয়া শুদ্ধ গানবাজনা লইয়াই মজিয়া থাকেন তাহাতে কি বলিতে হইবে ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত’? বলিতে হইবে তাঁহার প্রতিভার খেলখতম? গোলাম মুরশিদ গোছ বঙ্কিমচন্দ্র কবির জীবন লিখিলে বড়ই অঘটন ঘটে।

এয়ুরোপের এক কিনারার ছোট্ট দেশেও দেখিতেছি বঙ্কিমচন্দ্র অনুসারী জীবনীমাত্র সমালোচনার ধারাটি বিশেষ জনপ্রিয়। সে দেশেও দেখিতেছি লোকে কেবল কবির জীবন লইয়া মাতিয়া আছেন। তাঁহারা দেখাইতেছেন পেন্টি সারিকস্কি ১৯৫৪ সালে হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইয়াছিলেন যবন আর রুমি ভাষা ও সাহিত্য ইত্যাদি পড়িবার মানসে। কিন্তু বছর চারির মাথায়-পরীক্ষাভীতির কারণে নাকি-কোন উপাধি ইত্যাদি সংগ্রহ না করিয়াই বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করিয়াছিলেন তিনি।

গোটা চারিটি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হইয়া তিনি পিতা হইয়াছিলেন কমপক্ষে পাঁচ সন্তানের। তিনি বেশি বেশি কারণবারি পান করিতেন। তিনি পছন্দ করিতেন প্রচার। কে না পছন্দ করে? ভাল ইংরেজি জানিতেন না তবুও ইংরেজির তর্জমা করিয়াছেন। এই ফিরিস্তির শেষ নাই। কেহবা কহিয়াছেন তিনি ছিলেন আত্মরতিপরায়ণ। কথা হইতেছে, তিনি কি করিয়া এত ভাল কবিতা লিখিলেন। অথচ তাহার আলোচনা সামান্য।

পেন্টি সারিকস্কির সহি বড় আদি ও আসল দোষের তালিকায় তাঁহার বামপন্থা। তাঁহার জীবনচরিত লেখক পেক্কা তারক্কা জানাইতেছেন, তিনি ১৯৬৮ সালে সুমিদেশের সাম্য ব্যবসায়ী দলে নাম লিখাইয়াছিলেন। তাঁহাদের পত্রিকাদি তিনি সম্পাদনা করিয়াছিলেন গোটা চারি বৎসর (১৯৬৩-১৯৬৭)। একটি পত্রিকার নাম ‘আয়কালাইনেন’। দুই দুইবার-একবার ১৯৬৬ সালে, আরবার ১৯৭০ সালে-জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাঁড়াইয়াছিলেন। যে মোর্চা তাঁহাকে মনোনয়ন দান করিয়াছিল তাহার নাম (ইংরেজিতে) ‘ফিনিশ পিপলস ডেমোক্র্যাটিক লীগ’। সারিকস্কি কয়েক বছর কুবা মৈত্রী সমিতির সভাপতিও ছিলেন। অন্যান্যের মধ্যে হো চি মিনের কবিতাও তর্জমা করিয়াছিলেন তিনি।

আর একটা না বলিলেই নয়। সাম্য ব্যবসায়ী দলের কোন কোন সিদ্ধান্তের সহিত তাঁহার পক্ষে একমত হওয়া সম্ভব হয় নাই। স্তালিন ও ট্রটস্কি এই দুই নামের সহিত তাঁহার কবিতা কিভাবে মূর্ত তাহা ধরিলেও বিষয়টা পরিষ্কার হয়। ব্যঙ্গের কথা না হয় নাই বা বলিলাম। কোন এক লেখায়-কোথায় এখন আমার স্মরণে নাই-সারিকস্কি লিখিয়াছিলেন: 

মার্কসের ভুলের নাম

লেনিন

আর লেনিনের ভুলের নাম

স্তালিন

কিন্তু স্তালিনের কোন ভুল

হয় নাই।

সঙ্গত কারণেই তিনি সংসদ নির্বাচনে জয়ী হইতে পারেন নাই। এক পর্যায়ে-১৯৭৫ নাগাদ-তিনি পাশের দেশ স্বেরিয়ায় স্বেচ্ছানির্বাসনে চলিয়া যান। জীবনের একান্ত প্রথম পর্যায়েও একবার বছর দশেকের মতো তাঁহাকে নির্বাসনে থাকিতে হইয়াছিল সে দেশে। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি স্বেরিয়ার নরশোপিং শহরে বড় হইতে বাধ্য হইয়াছিলেন। কারণ ১৯৩৯ সালের রুশযুদ্ধ। তাঁহার জন্ম হইয়াছিল বর্তমানে রুশদেশের অন্তর্গত কারেলিয়া প্রদেশের ইমপিলাহটি শহরে-ঐ যুদ্ধের মাত্র দুই বছর আগে-২ সেপ্টেম্বর ১৯৩৭ তারিখে।

স্বেরিয়ায় গোটা আট বছর (১৯৭৫-১৯৮৩) জীবন কাটাইয়া যেনবা মরিবার জন্যই তিনি ১৯৮৩ সালের সুদিনে স্বদেশে ফিরিয়াছিলেন। পূর্বাঞ্চলীয় শহর ইয়েনসুতে (Joensuu) তাঁহার মৃত্যু ঘটে ২৪ আগস্ট ১৯৮৩ তারিখে। চরিতকাররা লক্ষ্য করিয়াছেন, আর এক সপ্তাহ বাঁচিলে তাঁহার আয়ু ৪৬ হইত। ১৯৩৯ সালে যুদ্ধের কারণে কারেলিয়া অঞ্চল হইতে গোঁড়া ধর্মানুসারী ভালামো মঠ সরাইয়া আনা হইয়াছিল হেইনাবেসি (Heinävesi) নামক জনপদে। নতুন ভালামো মঠপ্রাঙ্গণে তাঁহার কবর হইয়াছে। সেই কবর এখন তীর্থে পরিণত হইয়াছে। আর কবরগাহে প্রোথিত ক্রুশচিহ্নটি একটা আকাশমুখি তীরের চেহারা গা করিয়াছে। শুদ্ধ জীবনচরিতে নহে মরণচরিতেও তিনি খানিক আলাহিদা।

দুই

জীবনচরিতের মধ্যে কবিকে কতখানি পাওয়া যাইবে জানি না। আমার বরং ধারণা, কবিতার মধ্যেই-ইচ্ছা হয়-কবিকে খুঁজিয়া পাওয়া সহজ। কারণ কবিতা দর্পণ মাত্র নহে। কবিতার আসল মূলধন ভাষা। ভাষা আদৌ মনের দর্পণ নহে, বরং তাহার গঠন বা কাঠাম। বঙ্কিমচন্দ্রের অন্তত দুই হাজার বছর আগে যবনপণ্ডিত আরিস্তোতালেস-‘পোয়েটিকা বা কাব্যতত্ত্ব’ নামক প্রসিদ্ধ পুস্তিকায়-বলিয়া রাখিয়াছেন, আমরা রোজগার জীবনে যে সকল শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করিয়া থাকি, কবিও সেই সকল শব্দ বা বাক্যই অবিকল এস্তেমাল করেন। কিন্তু কবির বিশেষ ক্ষমতা আর মনীষার মাপে শব্দের অর্থ বিকল বা নতুন হইয়া দাঁড়ায়। শুদ্ধ মাত্র আগে হইতে তৈরি হইয়া থাকা অর্থ প্রকাশ করিয়াই কবিতা কাজ শেষ করে না, নতুন নতুন অর্থ তৈরি করাই তাহার সত্য দায়।

কবিতার মধ্যে প্রবেশ করিলেই আমরা বুঝিতে পারি মানুষ যতটা না ভাষার স্রষ্টা, তাহার অধিক ভাষার ক্রীড়নক। ভাষাই মানুষকে মানুষ করিয়াছে। যখন মানুষের ভাষা ছিল না তখন মানুষ মানুষই ছিল না। নিছক প্রাণী ছাড়া কিছুই ছিল না সে। ভাষায় প্রবেশ করার পরই মাত্র মানুষ মানুষ হইয়াছে। কবিতা বিচারে তাই ভাষার কথা বাদ দেওয়া যায় না। ভাষার দুই প্রধান বিধি-রূপক ও লক্ষণা-মনীষার অভিব্যক্তিকে বাক্সময় করে।

আমরা একটু আগেই দেখিয়াছি, পেন্টি সারিকস্কি সুমি ভাষার সম্ভাবনা অনেকখানি বাড়াইয়া দিয়াছিলেন। শুদ্ধ ভাবনা দিয়া কবিতা হয় না। কবিতা ফলে ভাষায়। মনে রাখিতে হইবে, ভাষায় নতুন নতুন রূপক ও লক্ষণার আমদানি না হইলে কবিতা কদাচ সিদ্ধ হয় না।

১৯৫৮-৫৯ সনে তাঁহার তিনটি কবিতার বই বাহির হয়। ইতিহাসকারেরা এই তিন বইকে পেন্টি সারিকস্কির প্রথম যুগ কিংবা আদিযবন যুগ বলিয়া আলাদা করিয়াছেন। এই যুগেই তিনি নতুন নতুন বাকপ্রতিভার প্রতিষ্ঠার প্রমাণ দেখাইয়াছেন। বলা হইয়াছে এইগুলি ‘আধুনিক’ রীতির কবিতা। সঙ্গে সঙ্গে বলা হইয়াছে এগুলির মধ্যে ‘যবন’ রীতির ছাপও স্পষ্ট।

১৯৪৫ সালের পর সুমিদেশে এক ধরনের নতুন কবিতা-যাহাকে বলে আধুনিক কবিতা-লেখার চল শুরু হয়। তিনিও নতুন রীতিতেই শুরু করেন কিন্তু তাঁহার নিজস্ব রীতির আভাসও দেখা দিতে শুরু করে সেই আদিতে হইতেই। বর্তমান তর্জমায়ও সেই আমদানির নমুনা কিছু কিছু আছে।

উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় যবন ও রুমি ভাষা প্রভৃতি লিখিতে শুরু করেন সারিকস্কি। হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়িতে চাহিয়াছিলেন-একটু আগেই দেখিলাম-যবন ভাষা ও সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ে। সনাতন যবন ও যাবনীমিশাল কবিদের অনেক কবিতার তর্জমা তিনি তখন করিয়াছিলেন। ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত তাঁহার কবিতাগ্রন্থটির নামও কম মজার নহে-‘কবিতা আর ইপ্পোনাক্ষর কবিতা’। মানে একসঙ্গে কবির নিজের ও প্রাচীন যাবন কবির কিছু কবিতা। ইপ্পোনাক্ষ মানে হজরত ঈসার পাঁচশত বছরের আগের যাবনী বা নয়া যবন কবি ইপ্পোনাক্ষ (Hypponax) যিনি ব্যঙ্গকে অঙ্গীকার করিয়াছিলেন।

পেন্টি সারিকস্কি উঁহার দায় নিজেও কিছু পরিমাণে বহন করিবার উচ্চাশা পুষিতেন। শুদ্ধ যবন কেন, রুমি কবিকুল-শিরোমণি কাতুল্লুসও (Catullus ঈসাপূর্ব ৮৪-৫৪) তাঁহার বড় আদরের ছিলেন। তবে হোরেসের (Horace ঈসাপূর্ব ৬৫-৮) কবিতা তিনি বড় পছন্দ করিতেন না বলিয়া জানা যায়। যবন কবি ওমর (Homeros ঈসাপূর্ব দ্বাদশ হইতে নবম শতাব্দীর কোন এক কাল), কি তত্ত্বজ্ঞানী এরাক্লেয়তোস (Herakleitos ঈসাপূর্ব ৫৪০-৪৮০), কি কবি ও তত্ত্বজ্ঞানী সাফো (Sappho ঈসাপূর্ব ৬৩০-৫৭০) ছিলেন তাঁহার পক্ষে বিশেষ ভরসাস্বরূপ। এই ভালোবাসার প্রকাশ শুদ্ধ অনুবাদে নহে তাঁহার নিজস্ব লেখায়ও ভুরিভুরি। বুদ্ধির দীপ্তি, ব্যঙ্গের ঝলকানি আর দশের কাতারে মিশিবার আকুতি সারিকস্কির কবিতার মধ্যে কিংবা গোড়াতেই ঢুকিয়া গিয়াছে। এইখানেই তাঁহার অস্তি, এইখানেই তাঁহার ঘটনা। নিজের কবিতার বিশেষণ তিনি নিজেই বাছিয়া লইয়াছিলেন-তাঁহার কবিতা ‘গণতান্ত্রিক’।

১৯৬২ সালে প্রকাশিত ‘আসলেই ঘটিতেছে কি’ নামক বইটিকে ইতিহাস লেখকেরা এখন সুমি কবিতায় নবযুগ প্রবর্তকের মর্যাদা দিতেছেন। এই গ্রন্থে গণতন্ত্রের রাজনীতি মাত্র নহে, জনসাধারণের বাকরীতিও প্রতিষ্ঠা পাইয়াছে। ১৯৬২ সালে হেলসিংকি নগরে সাম্য ব্যবসায়ী দলের প্রবর্তনায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক যুব উৎসবের মধ্যমণি হইয়া উঠিয়াছিলেন পেন্টি সারিকস্কি। কেহ কেহ বলেন আগের বইটিতেও-নাম ‘দুনিয়ার কথা’-সুমি কবিতায়  ‘আধুনিক’ যুগের পরের যুগ শুরু হইতে শুরু করিয়াছে।

১৯৭৫ সালের পরে-যাহার নাম অনেকে দিয়াছেন সারিকস্কির ‘দ্বিতীয় যবন যুগ’-তিনটি কবিতার বই লিখিয়াছিলেন তিনি। যথাক্রমে-‘পর্বতচূড়ায় নাচের বাসর’, ‘নাচের জলসায় নিমন্ত্রণ’ আর ‘শ্যামাজন নাচে’। একটা পদার্থ সাহিত্য ব্যবসায়ীদের চোখে না পড়িয়া যায় নাই। তাঁহারা দেখিয়াছেন ‘নাচ’ পদটা তিন বইয়েরই নামে হাজির নাজির। পরমাণু অস্ত্র আর জলবায়ু ধ্বংসক্রমে দুনিয়ার ভাগ্যে কি আছে তাহা লইয়া তিনি উদ্বায়ু তখন। কেহ কেহ তাঁহার ‘নাচ’ পদে প্রতিরোধের রূপক খুঁজিয়া পাইয়াছেন। শেষ বহিটি কবির দেহত্যাগের পরে প্রকাশিত হইলে লোকে বলিতেছে এই তিনটি বই তাঁহার জীবনের সেরা কীর্তি। স্বেরিয়ার উপকুলে ইয়োতেবরি বা গোটেনবার্গ শহরের অদূরে তিয়র্ন বা তিয়ার্না দ্বীপে জীবনযাপনের যুগে লেখা বলিয়া ইহাদের খ্যাতি দাঁড়াইয়াছে ‘তিয়ার্না ত্রিরত্ন’।

সারিকস্কির মধ্যযুগের নাম-বলা বাহুল্য-রাজনীতির যুগ। এহেন তিন যুগে ভাগ করিয়া কবিতাটি বিচার করিবার আদৌ কোন সার্থকতা আছে কিনা আমি নিশ্চিত নহি। পেন্টি সারিকস্কি নিজ জীবনের কথা ও কাহিনী বেশি একটা গোপন করিতেন না। এক জায়গায় তিনি কহিয়াছিলেন, জীবনটা আমি কাহিনীর আকারেই যাপন করি, যেন তাহা সত্যকাহিনী হয়। তাঁহার আদিযবন যুগের-১৯৫৮ সালের-একটি কবিতা এখানে পেশ করি। বলিয়া রাখা ভাল, আনসেলম হলোর অনুবাদে ইহা পাওয়া যায় নাই। কবিতাটি পাইলাম ১৯৭৮ সালের ‘কবিতা এই পর্যন্ত’ নামক সংকলনে। ইংরেজি করিয়াছেন পণ্ডিত কিরস্টি সিমনসুরি।

বেচারা দিয়োনিসুস এই বুড়া বয়সে!

হাঁটু মুড়িয়া বসিয়াছেন পার্কে, হাত কাঁপিতেছে তাঁহার

হাতের লাঠিটা ভাঙ্গিতেছেন পিটাইয়া টুকরা টুকরা

আড়াল-আবডাল ছাড়িয়া বাহিরে আসিতেছে মেয়েছেলের দল

গড়াইয়া গড়াইয়া হাসিতে কুটি কুটি তাহারা

বেচারা দিয়োনিসুস!

সটান পড়িয়া আছেন পার্কে, শুইয়া রহিয়াছেন

দুই পা উত্তরমুখি-তাঁহার

দাড়ি গজাইতেছে সবুজ-মায় ওফাতের পরেও

তাঁহার শ্বাসপ্রশ্বাস চলিতেছে স্বাভাবিক

আস্ত একটা নগরীর মতন

পরলোকে গিয়াছেন যদিও তিনি

বেচারা দিয়োনিসুস!

মনে হইতেছে কবিতার নায়ক দিয়োনিসুস আর সারিকস্কির মধ্যে-দুই হাজার বছরের অধিক পার হইলেও-আমদানির কোন সমস্যা নাই। সেতু আছে। তাঁহার শ্বাসপ্রশ্বাস ঠিকই চলিতেছে ‘স্বাভাবিক আস্ত একটা নগরীর মতন’। মরিয়া গেলেও দাড়ি গজাইতে কোন অসুবিধা হইতেছে না। বেশ।

১৯৬৮ সালের আরেকটি কবিতামত রচনা তুলিয়া এই পর্বের শেষ করি। ‘আমার স্ত্রীর কাছে পত্র’ নামক গদ্যের বই হইতে ইংরেজি তর্জমা করিয়াছেন লরি নিকপ। এই কবিতাটিও বর্তমান সংকলনে পাওয়া যাইবে না। ইহা এই সংবর্ধনার দ্বিতীয় উদ্বৃত্ত।

যে মানুষ না খাইয়া আছে সে পশুর স্তরে নামিয়াছে

কারণ মানবজীবনের একটা না একটা লক্ষ্য আছে।

পৃথিবী নামক গোলকটি খেলার বল নহে,

জনসন তাহাই ভাবেন যদিবা

হিটলার তাহাই ভাবিতেন যদিবা।

মানুষকে হত্যা করা যায়

কিন্তু সূর্যকে হত্যা করা যায় না

সূর্য মরিয়া যাইবে

কিন্তু উহাকে হত্যা করা যায় না।

                          সূর্য সর্বশক্তিমান

অন্য প্রভু নাই।

প্রার্থনার তোয়াক্কা করে না সূর্য, শহিদের দরকার নাই তাহার

আবেগের ব্যবসায় করে না সে

যাহারা পণ করে সূর্যহত্যার তাহাদের আশা পুরায় না সে

যাহারা ভিন্নমত তাহাদেরও দণ্ড দেয় না।

সূর্য নিরপেক্ষ, তাহার নিজস্ব মতামত নাই, আদেশও জারি 

করে না 

সে।

সূর্য তাপ দেয় কারণ তাহার তাপ আছে

সে নড়ে না

নড়ি আমরাই আর তাহার তাপ চুষি যেমন শিশু চুষে খায় দুধ।

আমরা কি করি না করি তাহাতে সূর্যের কোন আমদানি নাই।

তিন

পেন্টি সারিকস্কিকে আমি নিছক বিচ্ছিন্ন কোন এয়ুরোপিয়া ভূখণ্ডের কবিমাত্র জ্ঞান করি নাই। বোলফগাঙ্গ গ্যেটের কথার তাৎপর্য আমার সামনে এখন আরো দীপ্তি ছড়াইতেছে। কবিতা মানবজাতির এজমালি সম্পত্তি ভাষার গুণে-এ সত্য পেন্টি সারিকস্কি ভালই আমল করিয়াছিলেন। এক বিচারক বলিয়াছেন, যবন আর রুমি ভাষার সহিত নতুন আত্মীয়তা রচনা করিয়া তিনি আপনার ভাষায় নতুন জীবন যোগ করিয়াছেন। মফস্বলী বদনাম ঘুচাইয়া সুমি ভাষার সাহিত্যকে বিশ্বজনীন করিয়া তুলিয়াছেন তিনি-সম্ভবত ইহাই তাঁহার একক সিদ্ধি। 

১৯৬৯ সাল নাগাদ তিনি নতুন যাবনী হইতে পবিত্র নতুন নিয়মের ‘মথিলিখিত সুসমাচার’ নামক পুস্তকটির তর্জমা করেন। এই তর্জমাটি খানিক বাদানুবাদেরও জন্ম দিয়াছিল। কেহ কেহ জানাইয়াছেন পিয়ের পাওলো পাসোলিনি ১৯৬৪ সালে ‘মথিলিখিত সুসমাচার’ নামে যে চলচ্চিত্রটি বানাইয়াছিলেন তাহা তিনি দেখিয়া থাকিবেন। পাসোলিনির বিবেচনার মতন পেন্টি সারিকস্কিও হজরত ঈসা আর তাঁহার সাহাবীগণকে বিপ্লবী জ্ঞান করিতেন। ইহাতে আহামরি বুদ্ধি বা অপূর্বতার ঝলক না থাকে তো কি হইয়াছে, সত্যের দীপ্তি আছে। জার্মানির এঙ্গেলস হইতে ক্যারিবিয়া দ্বীপপুঞ্জের কাস্ত্রো পর্যন্ত অনেক মানবহিতৈষীও এ সত্যে সন্দিহান ছিলেন না।

জীবনের ব্রত একদা তিনি যাহা নির্ধারণ করিয়াছিলেন ইহকালের শেষ পর্যন্ত তাহা কিন্তু ছাড়েন নাই। একটা উদাহরণ দিই। ১৯৫৮ সালের দিকে লেখা এক হ্রস্বকায় কবিতায় তিনি ঘোষণা করিয়াছিলেন যবন তত্ত্বজ্ঞানী এরাক্লেয়তোস প্রণীত আদর্শই তাঁহার জীবনাদর্শ। তিয়ার্না ত্রিরত্নের ‘শ্যামাজন’ বস্তুত এই এরাক্লেয়তোসেরই ডাকনাম।

প্রাজ্ঞপুরুষ, জাতে যবন,

লোকে ডাকে শ্যামাজন,

ঠিকই কহিয়াছিলেন, 

মাত্র বুঝিতেছি আমি-

লক্ষ্যে পৌঁছাইব না জানি

রাত্রি নামিবে পথিমধ্যে

আর রাত্রিবেলা ঘুমের ঘোরে

ফিরিয়া যাইব সেখানে যেখানে যাত্রাবিন্দু।

পুনর্মুদ্রণ উপলক্ষে ১৯৭৮ সালে-মানে কুড়ি বছর পরে-একপ্রস্ত পাদটীকাযোগে সারিকস্কি পুনশ্চ লিখিলেন: এই প্রাজ্ঞপুরুষ এরাক্লেয়তোস অন্য কেহ নহেন। এই যবন তাঁহার কবিতার দপ্তর সহকারী বিশেষ।

প্রাজ্ঞপুরুষ, জাতে যবন,

শ্যামাজন, যবন ভাষায়: ‘স্কোতেয়নোস’

তত্ত্বজ্ঞানী এরাক্লেয়তোসের ডাকনাম

এরাক্লেয়তোস আমার কবিতার দপ্তর সহকারী।

আনসেলম হলো হিশাব কষিয়াছেন, সারিকস্কির কীর্তির মধ্যে ২২ কবিতার বই, ৬ গদ্য-নিবন্ধ ও কাহিনী-৩ বেতার নাটক, এবং ৭০ অনুবাদ গ্রন্থ। এই হিশাবে তাঁহার রোজনামচা আর চিঠিপত্র ইত্যাদি ধরা হয় নাই। এইগুলিও মরণোত্তর কতক কতক প্রকাশিত হইয়াছে। কতক এখনও হইতেছে।

সব মিলাইয়া ৪৫ বছরের আয়ুর মাপে এই কীর্তি সমীহার উদ্রেক করে। গীতিকবিস্বরূপে তাঁহাকে দুনিয়ার যে কোন দেশের বড় কবিদের সহিত পংক্তি দেওয়া যায়। কাশ্মিরী জাতিসম্ভূত মার্কিন কবি আগা শাহিদ আলি ১৯৮৯ সালে রিচার্ড জোনস সম্পাদিত ‘পোয়েট্রি ইস্ট’ পত্রিকার যে বিশেষ সংখ্যাটি অতিথি সম্পাদনা করিয়াছিলেন তাহাতে নাজিম হিকমত, মাহমুদ দারবিশ, পাবলো নেরুদা, ফয়েজ আহমদ ফয়েজ ও ইয়ানিস রিতসোসের সঙ্গে পেন্টি সারিকস্কির কবিতা ঠাঁই পাইয়াছিল। 

মৃত্যু বিষয়ে সারিকস্কির ভাবনা বেশ মজার। আমরা কথায় কথায়-হরহামেশা-বলিয়া থাকি, ‘দোলনা হইতে কবর পর্যন্ত।’ তিনি কথাটা বলিতেন অন্য রূপকে, জীবন একটা ঘটের ন্যায়। পদার্থ জমিতে জমিতে যখন ঘট পূর্ণ হইয়া যায়-একদিন ফাটিয়া যায়। মৃত্যু আর কিছুই নহে এই ফাটলের অপর নাম।

পেন্টি সারিকস্কি কোন গোছের কবি তাহার কাছাকাছি মুদ্রা পাওয়া যাইবে কোন এক নাম না জানা যবন কবির একটি কবিতায়। এই কবিতাটির সুমি তর্জমা করিয়াছিলেন সারিকস্কি। ইহা পাওয়া যাইবে তাঁহার অনূদিত ‘প্রাচীন কবিতা ও নাটক’ গ্রন্থে।

কেতাদুরস্ত কবি

শ্রোতাদের শোনাইবেন

কবিতার বেশি কিছু

কবিতায় কান খাড়া বাড়ি ছাড়িবেন ফুরফুরে

নিঃসন্দেহ দোজখ

আর এহেন কবিকে নিজের গজরগজর শোনাইতে হয় নিজেকেই। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //