দেশের সর্বপ্রথম কাজ মূর্খতারূপ মহাশত্রুর সঙ্গে ভীষণ সংগ্রাম করা

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৮৮৫-১৯৬৯)। জ্ঞানতাপস এ বরেণ্য বাঙালি তাঁর সারাজীবন বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সমাজের জন্য ব্যয় করেছেন। কর্মে-কীর্তিতে-সাধনায় তাঁর তুলনা কেবল তিনি নিজেই। ১৯৩৭ সালের ২ মে চাঁদপুরে ‘মুসলিম যুবক সমিতি’র একাদশ সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি তৎকালীন সমাজ, ধর্মান্ধতা, শিক্ষা, প্রগতিশীলতা, জ্ঞান অর্জনসহ নানা বিষয়ের উল্লেখ করেন। অভিভাষণটি প্রথমে বঙ্গভূমি পত্রিকার ১৩৪৪ বঙ্গাব্দের আষাঢ় সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর পুত্র শিল্পী মুর্তজা বশীর তাঁর এক বক্তৃতায় এ অভিভাষণটির কিছু অংশের উল্লেখ করেছিলেন; কিন্তু পুরো অভিভাষণটির সন্ধান পাওয়া সহজ ছিল না। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ স্মারকগ্রন্থেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়নি। পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে অনুসন্ধানের পর মুহম্মদ সফিয়ুল্লাহ্ সম্পাদিত ‘ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সংবর্ধনা গ্রন্থ’ থেকে অভিভাষণটি সংগ্রহ করা হয়। বইটি ১৯৬৭ সালের মার্চে রেনেসাঁস প্রিন্টার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। অভিভাষণটি সংগ্রহ করেছেন মুহাম্মদ ফরিদ হাসান 

প্রিয় যুবক বন্ধুগণ!

বহুদিন পরে আজ পুনরায় তোমাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে যে আনন্দ অনুভব করছি তা আমার মনই জানে। অক্ষম ভাষা সে ভাব কী ক’রে প্রকাশ করতে পারে? তরুণ তপনের অরুণ কিরণ-রাগে যেমন পুব আকাশের কালো মেঘগুলো রক্তরাগে রঞ্জিত হ’য়ে ওঠে, সেরূপ তোমাদেরও তরুণিমা আমার প্রবীণ হৃদয়ে তরুণ জীবনের উদ্বেলভাব সৃষ্টি ক’রে দিয়েছে। 

গতিই জীবন। গতির অভাব মৃত্যু। যুবশক্তি নিরন্তর গতিশীল। সেই যুবশক্তি প্রবীণের ভুয়োদর্শন দ্বারা পরিচালিত হ’লে পৃথিবীতে অসাধ্য সাধন করতে পারে। তুর্কী, ইটালি ও জার্মানির তরুণগণ প্রবীণ নেতা কামাল আতাতুর্ক, মুসোলিনি ও হিটলারের নেতৃত্বে তাদের দেশে কি না এক যুগান্তর উপস্থিত করেছে! আমাদের দেশেও তা সম্ভব হবে না কেন?

আমরাও মানুষ, ইউরোপ আমেরিকার লোকও মানুষ; কিন্তু তাদের ভিতর দুটি বিশেষ গুণ আছে, যার জন্য তারা গৌরবের এত উচ্চ চূড়ায় উঠেছে আর যার অভাবে আমরা হীনতার এই গভীর গহ্বরে রয়েছি। একটি তাদের উচ্চ আকাঙ্ক্ষা। ইউরোপ আমেরিকার উন্নতিশীল জাতিদের প্রত্যেকেই মনে করে আমরা শ্রেষ্ঠ জাতি, সমস্ত দুনিয়াটা আমাদের পায়ে মাথা নত করবে।

একদিন ঐশী বাণী আরবে ব্রজনাদে ধ্বনিত হয়েছিল : ‘তোমরা শ্রেষ্ঠমণ্ডলী; বিশ্ব মানবের জন্য তোমরা উত্থিত’। বহুদিনের নগণ্য ঘৃণিত যাযাবর বেদুইনের দল সমস্ত মন প্রাণ দিয়ে সেই বাণী বরণ ক’রে নিয়েছিল। তারা আর তাদের সাবেক ক্ষুদ্র গণ্ডীর মধ্যে আটকে থাকতে পারেনি, সারা দুনিয়ায় তারা ছড়িয়ে পড়েছিল। দার্শনিক কার্লাইল ঠিকই বলেছেন, “To the Arab nation it was as a birth from darkness into light; A poor shepherd people, roamimg unnoticed in its deserts since the creation of the world: a Hero Prophet was sent  down to them with a word they could believe: see, the un-noticed becomes world-notable, the small has grown world great; within one century Arabia is at Granada on this hand, at Delhi on  that; glancing in valour and splendour and the light of genius, Arabia shines through long ages over a great section of the world”. অর্থাৎ আরব জাতির জন্য এ ছিল যেমন অন্ধকার হ’তে আলোকে জন্ম, এর দ্বারা প্রথমে আরব জীবন্ত হয়ে উঠল। পৃথিবীর সৃষ্টি অবধি এক গরিব নগণ্য রাখালের দল তার মরুভূমিতে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, এক বীর নবী এলেন তাদের মধ্যে এমন এক বাণী নিয়ে যা তারা বিশ্বাস করতে পারে। দেখ, নগণ্য যারা, দুনিয়ার গণ্যমান্য হ’য়ে উঠল; ছোট যারা দুনিয়ার বড় হয়ে উঠল। একশ’ বছরের মধ্যে এদিকে গ্রানাডা থেকে ওদিকে দিল্লি পর্যন্ত আরব ছড়িয়ে পড়ল। বীর্যে, গৌরবে এবং প্রতিভার আলোকে আরব পৃথিবীর এক মস্ত খণ্ডকে অনেক দিন ধ’রে আলোক ক’রে রাখল। 

তেরশ’ বছর আগে যা আরবের জন্য সম্ভব হয়েছিল, আমাদের জন্য তা কেন অসম্ভব হবে? প্রকৃতির নিয়ম কি বদলে গিয়েছে? না কোরআনের সে আমোঘ বাণী এখন ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে? এখনো পূর্ণিমায় সাগরের বুক ফুলে ওঠে, এখনো নূতন বসন্তে পৃথিবীর অঙ্গে শিহরণ জাগে, এখনো পাতালের ধাতুরাশি ধরণীর পৃষ্ঠে প্রচণ্ড বিক্ষোভ সৃষ্টি করে, এখনো মানব প্রকৃতি দুর্দম হয়ে উঠে বিশ্ব জয় করতে ছোটে। কোরআন যদি সর্বশক্তিমান মহামহীয়ান আল্লাহর অনাদি বাণী হয়, তবে তার’ত শক্তি কোনো কালেই লোপ হ’তে পারে না। আসল কথা, আরবের মরু সন্তানেরা যেমন ষোল আনা ইমান দিয়ে আল্লাহর বাণী এবং তাঁর নবীকে গ্রহণ করেছিল, আমরা তেমনটি পারিনি, বোধ হয় শতাংশের একাংশও পারিনি। কোরআনে ইহুদিদেরকে তিরস্কার করে বলা হয়েছিল : “তারা গাধার ন্যায় পুঁথির বোঝা বয়ে বেড়ায়”। আজ এ তিরস্কারের পাত্র আমরাই; আমাদেরই জন্য মহান নবী কিয়ামতে আল্লাহর কাছে অভিযোগ ক’রে বলবেন- “প্রভু আমার, নিশ্চয় আমার স্বজাতি এই কোরআনকে বর্জন করেছে।” তা না হ’লে কেন কোরআন আমাদের হৃদয়ে সেই সত্যযুগের আরবের ন্যায় অগ্রগতির জন্য জ্বালাময়ী উদ্দীপনা এনে দেয় না? কেন আমাদিগকে নৈরাশ্য ও বিষাদের অন্ধকার হ’তে আশা ও আনন্দের উজ্জ্বল আলোকে আনে না? মোদ্দা কথা, বড় হবার ইচ্ছা মনে নিত্য সজাগ রাখা চাই। ইউরোপ আমেরিকার বড় জাতিদের এই বড় আশা আছে, আর আমাদের তা নেই। তারা জেনেছে-“Self-reverence self-knowledge, self-control,/These three alone lead life to sovereign power”

আমরা কিন্তু আল্লাহর বাণী ভুলে হারিয়ে ফেলেছি। বিদেশ থেকে চোখ ফিরিয়ে দেশের দিকে দেখ। বহু শতাব্দীর পরাধীন আমাদেরই স্বদেশী হিন্দু ভাইগণ আজ কেন সকল রকম উন্নতির জন্য কোমর বেঁধে উঠে প’ড়ে লেগেছেন, আর আমরাই বা কেন অনড় অটল পাথরের মতো জড় জীবন নিয়ে পরম তৃপ্তিতে কাল কাটাচ্ছি? তার কারণ হচ্ছে, যারা ছিল গোলামের জাতি তারা স্বরাজ্য চাচ্ছে; আর যারা ছিল বাদশার জাতি, তারা গোলামীকেই জীবনের চরম ও পরম লক্ষ্য ঠাওরিয়েছে। সত্য কথা বল্লে তিক্ত লাগবে; কিন্তু না ব’লে চারা নেই; তাদের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের প্রাণেও যে স্বাধীনতার অনির্বাণ আগুনের শিখা জ্ব’লে উঠেছে, তা আমাদের অতি বড় হোমরা চোমরা নেতাদের মধ্যেও নেই। অমরজীবন মৌলানা মুহম্মদ আলী বা ডাক্তার মোখতার আহ্মদ আনসারী আমাদের মধ্যে exception which proves the rule.

তরুণ বন্ধুগণ! আমি তোমাদের মধ্যে সকলের আগে এই বড় হওয়ার বড় ইচ্ছা দেখতে চাই। এ ছাড়া বড় হবার আর কোনো দোসরা পথ নেই। বড় আশাকে চারদিকে সংক্রামক ক’রে দাও, তারপর দেখবে, কি তাজ্জব ব্যাপার ঘ’টে ওঠে। বহুদিন আগে জাতীয় জাগরণের কবি মৌলানা আলতাফ হুসয়ন আলী গভীর দুঃখের সঙ্গে যা বলে গেছেন, আজও তো তার কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না-

“পর উস কওমে গাফিল কী গফলত ওহী হায়্।

তনয্যুল পা আপ্নী কিনা’অত ওহী হায়্ ॥

মিলে খাক্মেঁ পর র’ঊনত ওহী হায়্।

হুয়ী সুব্হ আওর ’খাবে রাখত ওহী হায় ॥

না আফসোস উনহেঁ আপ্নী যিল্লত পা হায়্ কুছ।

না রশ্ক আওর কওমোঁ কী ইয্যত পা হায়্ কুছ ॥

বহাইম্ কী আওর উন্কী হালাত হায়্ য়িক্সাঁ।

কে জিস হাল মেঁ হাঁয় উসী মে হাঁয়্ শাদাঁ ॥

না যিল্লত সে নফ্রৎ না ‘ইয্যত কা র্আমাঁ।

না দোযখ সে র্তসাঁ না জান্নাত কে খাহাঁ ॥

লিয়া ‘আক্ল ও দীঁসে না কুছ কাম উন্হোঁ নে।

কিয়া দীনে র্বহক কো বদ্নাম উন্হোঁ নে ॥”

ইউরোপ আমেরিকার আর একটি গুণের কথা বলতে চাই। সেটি হচ্ছে তাদের নেতার প্রতি একান্ত বিশ্বাস ও আনুগত্য। যেমন সৈন্য দল সেনাপতির হুকুমে মরণের বুকে অন্ধের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে, তেমনি ওসব দেশে সমস্ত জাতিটা ওঠে, বসে, মরে, বাঁচে তাদের নেতাদের হুকুমের তাঁবেদার হ’য়ে। এ দাস মনোবৃত্তি নয়, এ লড়াইয়ের ময়দানে সিপাহীর কর্তব্য বুদ্ধি। তোমরা নিশ্চয়ই জার্মান জাতিকে গোলামের জাতি বলতে পার না; কিন্তু কে এমন জার্মান আছে যে সে হিটলারের একটি আঙ্গুলের ইশারায় তার সমস্ত জীবনকে পণ না করে? সত্যযুগের আরবের এই গুণ ছিল। যুদ্ধের পর যুদ্ধে সেনাপতি ‘আল্লাহর তরবারি’ উপাধিকারী খালিদ বিন ওয়ালীদ জয়লাভ করছেন, হঠাৎ খলীফার আদেশ এল খালিদ পদচ্যুত, আবু ওবায়দা সেনাপতি পদে নিযুক্ত। খালিদ অকুণ্ঠিত চিত্তে আবু ওবায়দাকে সেনাপতিত্বের ভার সমর্পণ ক’রে কেবল এইটুকু অনুগ্রহ চাইলেন যেন সামান্য সৈনিকের মতো তাঁর অধীনে থাকতে পারেন। এ শিক্ষা তাঁরা পেয়েছিলেন মহাগ্রন্থ কোরআন থেকেই-“হে ধর্ম বিশ্বাসিগণ তোমরা আল্লাহর অনুগত হও এবং আল্লাহর রসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের মধ্যে আজ্ঞাদাতাদের অনুগত হও”। কোরআনে একটি ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। তালুত বেরিয়েছেন সসৈন্যে দেশের শত্রু জালুতের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য, সঙ্গে অনেক লোকলস্কর। তিনি চাইলেন তাদের আনুগত্য পরীক্ষা করতে। সৈন্যদল পথশ্রমে, পিপাসায় কাতর; সামনে ঠাণ্ডা পানির ঝরনা। তালুত হুকুম দিলেন, যে এক আঁজলার বেশি পানি খাবে সে আমার দলের বাইরে। অনেক সৈন্যই কিন্তু হুকুম না মেনে পেট ভ’রে পানি খেয়ে ফেললে- অল্প দল শুধু তাঁর হুকুম মাথা পেতে নিলে। তিনি এ বাছা দলকে নিয়েই যুদ্ধে গেলেন, আর সসৈন্য জালুতকে হারিয়ে দিয়ে দেশে ফিরলেন। এদের সম্বন্ধেই কোরআন বলেন-“অনেক সময় অল্প দল বড় দলকে হারিয়ে দেয় আল্লাহর হুকুমে এবং নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।”

সেই একদিন ছিল, আর আজ আর একদিন। আমরা সবাই নেতা, কেউ কারো হুকুম মানি না- “হাটেতে বিক্রেতা সব, ক্রেতা কেহ নাই’। ফলে ভেড়ার মত আমরা চারিদিকে পথহারা হয়ে ঘুরে মরছি। একটা কাজের মত কাজ আমরা করতে পারছি না। আমাদের জ’মাত, জুমা, ঈদ, হজ্বের যে শিক্ষা সবই আমাদের বাস্তব জীবনে ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে। নমাযে আমরা ইমাম মানি, সমাজে আমরা স্ব স্ব প্রধান। কাজেই আমরা ছিন্ন ভিন্ন। আমাদের একজন আমীর বা নেতা স্থির করে তাঁহার হাতে ‘বয়ত’ হবার দরকার আছে। 

বন্ধুগণ! বড় এমারত তোমরা সকলেই দেখেছ। সে এমারত গড়া হ’ল কেমন ক’রে? বড় মিস্ত্রির বাড়ির প্লান করলেন, কতকগুলো ইটকে গুড়াঁ ক’রে সুরকি বানালেন, কতকগুলো ইটকে ভেঙে নুড়ি করলেন, কতকগুলোকে আধলা করলেন, কতকগুলোকে গোটা রেখে দিলেন। কতকগুলো ইটের ঠাঁই হল সকলের নীচে মাটির মধ্যে, কতকগুলোর ঠাঁই হ’ল মাটির উপরে। কেউ রইল পায়ের তলায়- ঘরের মেঝেয়, কেউ রইল মাথার ওপর- ঘরের ছাদে, কার্নিশে, দেওয়ালে। তবেই ত সে এমারত খাড়া হলো। সব ইটগুলো যদি আস্ত থাকতে চাইত, সবগুলো যদি মাথার উপর রইতে চাইত, মোদ্দা কথা ইটগুলো যদি নিজেদের ইচ্ছামত যেখানে সেখানে থাকতে চাইত, তবে কী ক’রে বলতো সেই এমারত গড়ে উঠত? একটা জাতকে বড় হতে গেলে এই রকমই চাই। নেতার আদেশে কেউ নিজকে একেবারে চুরমার করে দিবে, কেউ সকলের অজ্ঞাত নগণ্য স্থানে থাকবে। নেতা যাকে যেখানে রাখবেন সে সেখানেই কাজ করবে। তবেই একটা বড় সমাজ গড়ে উঠবে। বড় হতে গেলে নেতা চাই এবং নেতার অনুগত দলও চাই। 

যুবক বন্ধুগণ! তোমাদিগকে বড় হবার জন্য যা সকলের আগে দরকারি এমন দুটি গুণের কথা বল্লাম। এখানেই আমার অভিভাষণের উপসংহার হতে পারত; কারণ আমি জানি এই দুই গুণ ছাড়া টুকরো টুকরো কাজে কোনোই লাভ হবে না। তবুও একটা কাজের প্রোগ্রাম তোমাদের সামনে রাখা বোধ হয় অন্যায় হবে না। তোমরা কেবল কল্পনার লীলা খেলাতেই মশগুল নও- তোমরা কর্মী, তোমাদের তো বেশি বলতে হবে না। আমি কেবল কয়েকটি নেহাৎ দরকারী কাজের দিকে তোমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করছি। 

আমি মনে করি দেশের সর্ব প্রথম কাজ মূর্খতারূপ মহাশত্রুর সঙ্গে ভীষণ সংগ্রাম করা। কবে সরকার বাহাদুর অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা দেশে চালাবেন, এ ভরসায় বসে থাকলে চলবে না। আমার ছেলে পুলের যদি রোগ হয় তবে আমার বাড়ির কাছে কবে একটা সরকারি ডাক্তারখানা খুলবে সে ভরসায় আমি তো বসে থাকতে পারি নে। কেন না, এখানে যে আমার প্রিয়জনের জীবন মরণের কথা। জাতির জীবন মরণ কতকগুলো লোকের জীবন মরণের চাইতে কি বড় কথা নয়? যদি বল, প্রবল সরকার যে কাজে পিছপা তাতে আমরা আগে বাড়ি কি সাহসে? আমি কিন্তু বিশ্বাস করি, গভর্নমেন্ট যদি দেশের মূর্খতা দূর করতে না পারেন, আমরা পারি। সরকার পক্ষের কথা দেশের উপযুক্ত বয়সের ছেলে মেয়েদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তার করতে গেলে যে অসংখ্য শিক্ষক ও শিক্ষাগারের প্রয়োজন, দেশের বর্তমান অবস্থায় তা অসম্ভব; কিন্তু আলহামদুল্লিাহ। আমাদের অসংখ্য শিক্ষকও আছেন, শিক্ষাগৃহও আছে। প্রত্যেক মসজিদই আমাদের শিক্ষাগৃহ এবং প্রত্যেক খতীবেই আমাদের শিক্ষক। আমরা যদি এদের উপযুক্ত ব্যবহার করতে পারি, তবে আমাদের আর কিসের অভাব? রসূলুল্লাহর সময় এইরূপই ছিল। এইরূপ পরিকল্পনা করেই তিনি বলেছিলেন- “প্রত্যেক মুসলিম নর নারীর জন্য বিদ্যা শিক্ষা অবশ্য কর্ত্তব্য”। তাঁর জীবনের একটি ঘটনা থেকে তোমরা বুঝতে পারবে তিনি বিদ্যাশিক্ষাকে কি উঁচুতে স্থান দিতেন। একদিন তিনি মসজিদে উপস্থিত হয়ে দেখলেন কতকগুলো লোক আল্লাহ তা’আলার ধ্যান ধারণায় নিযুক্ত, আর কতকগুলো লোক লেখাপড়ায় ব্যস্ত। তিনি বললেন, “আমিও শিক্ষক হয়ে জন্মেছি”। এই ব’লে শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে গিয়ে বসলেন। হযরত আক্ষেপ করে বলেছিলেন, এমন একদিন আসবে যখন, ‘মসজিদগুলো সুসজ্জিত হবে, কিন্তু তাতে পথ নির্দেশ থাকবে না’। আজ তাই হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার পর খোদার ঘর খালি পড়ে থাকে। যাতে করে খতীবগুলো শিক্ষাদানের উপযুক্ত হতে পারেন, তার জন্য প্রত্যেক মহকুমায় খতীব ট্রেনিং মাদ্রাসা থাকা দরকার। এ কাজ খুবই সহজ, কেবল চেষ্টার অভাব। কেবল ছেলে মেয়েদেরই শিক্ষার ব্যবস্থা করে আমরা নিশ্চিন্ত হতে পারি না। প্রত্যেক মুসলমান স্ত্রী হোক বা পুরুষ হোক; ছেলে হোক বা বুড়ো হোক, সকলকেই লেখাপড়া শিখতে হবে,- এই যখন ধর্মের বিধান, তখন তার উপায় করতে হবে। মসজিদ ও খতীবের সাহায্যে এ কাজ হবে। সকালে খতীব ছেলে মেয়েদের পড়াবেন, সন্ধ্যার পরে অন্য সকলকে পড়বেন। 

এ প্রসঙ্গে হয়ত পর্দার কথা আসবে- আমি পর্দার বিরোধী নই; কিন্তু প্রত্যেক জিনিসেরই একটা সীমা আছে। মনে করুন কোনো মুসলমান নারীর জীবন রক্ষার জন্য পুরুষ চিকিৎসকের দ্বারা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়েছে, এখানে কি পর্দার দোহাই দিয়ে মেয়েটিকে মেরে ফেলতে হবে? শরী’অত তো তেমন বিধান দেয় না। শরী’অত মুসলমানকে রক্ষার জন্য, ধ্বংসের জন্য নয়। আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং বলেছেন- “এই কোরআন এই জন্য তোমার উপর অবতীর্ণ করিনি, যে তুমি হতভাগ্য হয়ে যাবে।” জীবন রক্ষার জন্য যদি পর্দা শিথিল করা যায়, ধর্ম রক্ষার জন্য বা বিদ্যা শিক্ষার জন্যই বা তা করা যাবে না কেন? যাঁরা পর্দা প্রথার ঘাড়ে সমস্ত দোষ চাপিয়ে দিয়ে বলেন, “পর্দার জন্য আমাদের স্ত্রী শিক্ষা হচ্ছে না”, তাঁদের কাছে একটি কথা জিজ্ঞাসা করতে চাই পুরুষের মধ্যে তো পর্দা নেই, তবে তাদের মধ্যে শতকরা ৯৫ জন মূর্খ কেন?

আমার মনে হয়, সকল রকমের শুভ অনুষ্ঠানের আগে চাই জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষা বিস্তার; তা না হলে কোন স্থায়ী মঙ্গল তাদের হতে পারে না। রাজনৈতিক উন্নতি বল, অর্থনৈতিক উন্নতি বল, ধর্মসম্মন্ধীয় উন্নতি বল, সামাজিক উন্নতি বল, সকলেরই বুনিয়াদ ঐ জন-শিক্ষা। বুনিয়াদ ঠিক না হলে কোনও এমারতই টিকতে পারে না। পাকা মিস্ত্রী কখনো বুনিয়াদ মজবুৎ না করে ওপরের গড়ন শুরু করে না। এ কথাটা আমাদের খুব মনে রাখা চাই। 

আর একটি জরুরী কথা বলে আমার অভিভাষণ শেষ করতে চাই। আজকাল গরিব মুসলমান সমাজে সান্ত্বনার বাণী শোনান হয়, হযরতের কল্পিত উক্তি : “দরিদ্রতাই আমার গৌরব”; কিন্তু তাঁরা ভুলে যান এ দরিদ্রতা স্বেচ্ছাকৃত, এ রাজাধিরাজের দারিদ্র বরণ। এ ত পরম গৌরবের কথা। যে কড়ার কাঙাল, দু’মুঠো ভাতের জন্য যে লালায়িত, এ তার কথা নয়। তার জন্য হযরতের উক্তি হচ্ছে, “দরিদ্রতা ইহ পরলোকের মুখের কালিমা”। পুনশ্চ : “দরিদ্রতা প্রায় ধর্মদ্রোহিতায় নিয়ে যায়।” ভুলে যাও কেন আল্লাহর বাণী- “আল্লাহ তাঁর সেবকদের জন্য যে শোভার দ্রব্য প্রকাশ করেছেন এবং যে উত্তম জীবিকা দিয়েছেন, বল কে তা হারাম করলে? বল, যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য এ দুনিয়ার জীবনেই এগুলো আছে, বিশেষ করে পরলোকে।” রাজার ছেলে বাড়ীতে রাজভোগে থাকবে, বিদেশেও রাজভোগে থাকবে। আমরা আল্লাহর প্রিয় নবীর প্রিয় উম্মত। আমাদের জন্য স্বর্গ সুখ ত আছেই, পৃথিবীর সুখও বটে। মনে করুন হযরতের সেই উৎসাহের বাণী-“দুনিয়া তোমাদের জন্য তৈরি, আর তোমরা পরলোকের জন্য তৈরি।”

মুসলমানের জীবনে ধর্ম খুব বড় কথা, জ্ঞানোপার্জন খুব বড় কথা, সেই রকম বড় কথাই অর্থোপার্জন। এ কথা ভুলে গিয়ে আজ আমরা ফকিরের সংখ্যা বৃদ্ধি করছি। ইসলামের চোখে অর্থোপার্জন এমনই দরবার যে জুমার দিন নামাযের পরে মসজিদে বসে থাকবার হুকুম নেই। হুকুম হচ্ছে- “যখন তোমরা নামাজ শেষ কর, দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর মেহেরবাণী ঢোঁড়।” এ মেহেরবাণী হালাল রোজগার। অন্ন সমস্যার সমাধান চাই। বাঁচলে তো তবে ধর্মকর্ম; আমরা বাঁচতে চাই। কুকুর বিড়ালের মত বাঁচতে চাই না, মানুষের মতো বাঁচতে চাই। এখানে এদেশের প্রাচীন পণ্ডিতদের একটা কথা মনে পড়ছে : 

বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী স্তদর্ধং কৃষিকর্মণি।

তদধং রাজসেবায়াং ভিক্ষায়াং নৈবচ নৈবচ ॥

মুসলমান আজ লক্ষ্মীছাড়া, যেহেতু ব্যবসা বাণিজ্য তার হাতে নেই। আমাদের সম্বল হয় কৃষি, নয় চাকুরী, নয় ভিক্ষা। আমি অনেক চিন্তা করে দেখেছি বাংলার মুসলমানের দারিদ্রতার প্রধানতম কারণ আমাদের অধিকাংশ লোকের কৃষির উপর নির্ভর। ধরুন এক জনের ৪০ বিঘা জমি আছে, তার সুখে দিন গুজরান হতে পারে। সে মরে গেল দুই ছেলে রেখে। এখন তারা পেলে ২০ বিঘা জমি; তাদের অবস্থা কিছু খারাপ হলো, তবুও কোন রকমে দিন চলে গেল। তারা দু’জনে মরে গেল, প্রত্যেকে দুটি করে ছেলে রেখে। এখন তারা প্রত্যেকে পেলে ১০ বিঘা জমি; কোন রকমে কষ্টে সৃষ্টে তাদেরও দিন চলে গেল। তারপর এই চারিজনের প্রত্যেকে দুই ছেলে রেখে মরে গেল; তারা প্রত্যেকে পেলে ৫ বিঘা জমি; এখন তাদের দিন কাটান কষ্টকর; কয়েক বৎসরের অজন্মায়, মহাজনের দেনার দায়ে কিংবা বাকী খাজনার নিলামে তারা সর্বস্বান্ত হল। তা যদি না হয় তবে প্রত্যেক্যের দুই ছেলে হিসাবে প্রত্যেক ছেলে ২॥০ বিঘা জমি পাবে। এতে স্পষ্টই বোধ হবে, চাষের উপর ভরসা করলে আমাদের সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী। যে নৌকো বিশ জনের ভার সইতে পারে, তাতে যদি একশ’ জন লোক চ’ড়ে বসে, তবে সেই চড়নদারদের কপালে যা ঘটে কৃষকের কপালে তাই ঘটেছে। আসল কথা লোক যত বাড়ে, জমি তত কমে। কাজেই জমির উপর থেকে ভার কমিয়ে নিতে হবে। তার জন্য দরকার ছোট বড় শিল্প-বাণিজ্য অবলম্বন। এখানেই প্রতিবেশী হিন্দু সমাজ থেকে মুসলমান সমাজের পার্থক্য। হিন্দু সমাজে কৃষকের সংখ্যা অল্প, তার অতিরিক্ত কামার কুমার ধোপা নাপিত বারুই সেকরা জেলে ময়রা মুদি মুচি প্রভৃতি কত রকম শিল্পজীবী আছে। এর উপর সরকারী চাকুরে শিক্ষক উকিল মোক্তার ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ওভারসিয়ার প্রভৃতি উচ্চশ্রেণীর জীবিকা-অর্জ্জনকারীর সংখ্যাও কম নয়, আমরা হিন্দুর সঙ্গে সরকারী চাকুরী নিয়ে ঝগড়া করছি; কিন্তু সরকার যদি আজ এক Circular জারী ক’রে ঘোষণা ক’রে দেন যে এখন থেকে সমস্ত চাকুরী মুসলমানকে দেওয়া হবে, তবু কিন্তু আমাদের হাড়-হাভাতে অবস্থা ঘুচবে না। আমরা সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি; কিন্তু যা আমরা করতে পারি নিজেরাই, সে দিকে আমাদের ক’জনার নজর আছে। যদি আমাদের বাঁচতে হয়, তবে শিল্প-বাণিজ্য আমাদের নিতেই হবে, তার ওপর চাই Industry বা বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বাঙ্গালা দেশে প্রধানতঃ হিন্দুর অর্থে ও উৎসাহে কয়েকটি কাপড়ের কল হয়েছে। বাংলার বাইরে থেকে হিন্দুরা এসে পাটের কল বসিয়েছে। আরও অনেক কল কারখানা হিন্দুর হাতে আছে। আমরা কি দু’একটা চটকল, কাপড়ের কল কি ট্যানারি করতে পারিনে? এ দিকে আমাদের নেতাদের দৃষ্টি আছে কি?

এসব কাজের মতো কাজে মন না দিয়ে একদল হাল্কা ভাবুক বলছে, “হিন্দুরা সুদ খেয়ে বড়লোক হয়েছে, আর সুদ না খেয়ে সুদ দিয়েই মুসলমানদের সর্বনাশ হলো।” এর হয় ত পরে বলবেন ইউরোপ আমেরিকা মদ ও শুকর মাংস খেয়ে কত উন্নত হয়ে উঠেছে, আমাদের ওগুলো চাই। গণিকালয়, শৌণ্ডিকালয় এগুলো অন্য জাতির এক রকম একচেটে। অর্থের জন্য কি আমাদের সমাজেও এগুলো চালাতে হবে? অর্থ চাই সত্যই; কিন্তু ধর্ম্মকে বাদ দিয়ে অর্থ কেন, সমস্ত দুনিয়াও কোন মুসলমান চায় না, চাইতে পারে না। হযরত ঈসা মসীহ খাঁটি কথাই বলেছেন-For what is a man profited, if he shall gain the whole world and lose his soul? অর্থাৎ “যদি কোন লোক সমস্ত দুনিয়াকে পায়, কিন্তু তার আত্মাকে খোয়ায় তবে তার কী লাভ?”

যুবক বন্ধুগণ! আগে যে শিক্ষা বিস্তারের কথা বলেছি, আর এখন যে অর্থ সংস্থানের কথা বল্লাম, তাতে তোমাদের অনেক কিছু করবার আছে। কাজের সফলতার জন্য আন্দোলন দরকার, যেমন শস্য ক্ষেত্রের জন্য জমির চাষ দরকার। গত বঙ্গ-ভঙ্গ আন্দোলন, খেলাফৎ আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, আইন-অমান্য আন্দোলন আমাদেরকে দেখিয়েছে, আন্দোলন কী করতে পারে। তোমাদের তরুণ হৃদয়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে দেশময় আন্দোলনের এক ঝড় ওঠাও। দেখবে তাতে কি ফল ফলে। খণ্ড খণ্ড জনহিতকর অনুষ্ঠানে দরকারী বটে, কিন্তু তার ফল ক্ষুদ্র ও অস্থায়ী। মনে রাখতে হবে আমরা কারও কোনই অভাব দূর করতে পারব না, যে পর্য্যন্ত না তারা নিজেরাই তাদের অভাব দূর করতে চেষ্টিত হবে। আল্লাহ তা’আলাই বলেছেন- “আল্লাহ কোন জাতির কিছুই পরিবর্ত্তন করেন না, যে পর্য্যন্ত না তারা নিজেদের অবস্থার পরিবর্ত্তন করে।” লোকের ভাত কাপড়ের অভাব বা ওষুধ পথ্যের অভাব কখনো বাইরে থেকে দূর করা যায় না। তার জন্য দরকার লোকদেরকে উপার্জনক্ষম মিতব্যয়ী সঞ্চয়শীল স্বাবলম্বী স্বাস্থ্যের নিয়মপালনকারী ব্যায়ামশীল মিত্যচারী হ’তে অভ্যস্ত করা। অন্য কথায় তাদিগে কার্য্যকর জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া সকলের ওপর তাদের মনে বড় আশার আলোর জ্বেলে দেওয়া। এই সকল কাজের জন্য আন্দোলন চালাতে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবকের প্রয়োজন আছে। আমরা তরুণদের কাছে এই আশা করি।

নিরাশ হবার কিছুই নেই। একদিন চারদিকে বেড়া শত্রুর মধ্যে মদিনার একদল মুসলমানদের কারও কারও মনে এই প্রশ্ন উঠেছিল, তারা কি কখনো রুমী ও ইরানি সাম্রারাজ্যের স্থানে দুনিয়ায় ইসলামী ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে পারবে, তারা কি কখনো ইহুদি, খ্রিস্টান, মজুস ও হিন্দুদের বিদ্বান ও দার্শনিকগণের সম্মুখের ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব স্থাপন করতে পারবে, তারা কি কখনো নির্ভয়ে নিরাপদে দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে পারবে। তখন তাঁরা ছিলেন নিরক্ষর বিদ্যাহীন, অর্থহীন, মুষ্টিমেয় মুসলমান। আল্লাহ্ তা’আলা তাঁদিগকে অভয় দিয়ে বলেছিলেন-“আল্লাহ অঙ্গীকার করেছেন তোমাদের মধ্যে যারা সত্যবিশ্বাসী ও সৎকর্মশীল হবে, তাদিগকে নিশ্চয় নিশ্চয় তিনি পৃথিবীতে রাজা করবেন, যেমন তাদের আগের লোকদের তিনি রাজা করেছিলেন, তিনি তাদের জন্য যে ধর্ম ভয়ের পরে নিশ্চয় নিশ্চয় তাদিগকে নির্ভয় করে দিবেন।” ইতিহাস সাক্ষী আছে আল্লাহ কিরূপে তাঁর অঙ্গীকারকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। এ অঙ্গীকার এখনও আমাদেরও জন্য আছে। 

কিরূপে পৃথিবীতে প্রভুত্ব লাভ করা যায়, সে বিষয়ে কোরআন শরীফে এক সুন্দর ইতিহাস আছে। এক সময় ইহুদি জাতির মধ্যে কোন রাজা ছিল না। তাদের কাতর প্রার্থনায় আল্লাহ তা’আলা তালুতকে তাদের রাজা করলেন। অমনি লোকেরা বলে উঠল, সে কী করে রাজা হতে পারে? আমরা তাঁর চেয়ে বেশী উপযোগী। তাঁর ত কোন ধনদৌলত নেই।” তার উত্তরে আল্লাহ তা’আলা বলেন-“নিশ্চয় আল্লাহ তাকে তোমাদের উপর মনোনীত করেছেন এবং তাকে জ্ঞানে ও শরীরে প্রচুররূপে বাড়িয়েছেন।” ইতিহাস সাক্ষ্য দিতেছে এই জ্ঞান ও শরীর চর্চ্চার দ্বারাই পৃথিবীর সব জাতি প্রভুত্ব লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। আমাদেরও জ্ঞান ও শরীর চর্চার জন্য উঠে পড়ে লাগা দরকার। বিজ্ঞান সম্বন্ধে কোরআন কি সুন্দর কথাই বলেছেন-“যাদিগকে বিজ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তাদিগকে প্রচুর কল্যাণ দেওয়া হয়েছে।” গত আবিসিনিয়া-ইতালীর যুদ্ধে বিজ্ঞানের শক্তি পরীক্ষিত হয়েছে। ইউরোপ আমেরিকা এ বিজ্ঞানের বলেই প্রচুর কল্যাণ লাভ করেছে। আমরা বিজ্ঞানবিহীন হয়ে আর কত দিন কল্যাণ হতে বঞ্চিত থাকব?

উপসংহারে তোমাদিগকে আল্লাহর বাণী স্মরণ রাখতে বলি-“তোমরা কিছুতেই মনে করো না যে অবিশ্বাসীরা পৃথিবীতে পরাজয়কারী হবে।” “তোমরা নিরুৎসাহ হয়ো না, তোমরা দুঃখ করো না। তোমরাই শ্রেষ্ঠ, যদি তোমরা সত্যবিশ্বাসী হও।”

সর্বশেষ মুসলিম যুবক সমিতির নানাবিধ জনহিতকর চেষ্টার জন্য তাদিগে আল্লাহর আশীর্বাণী দিয়ে আমি বিদায় গ্রহণ করি।

‘আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় সন্নিকটে’। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //