জর্ডানে বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ, আতঙ্ক

জর্ডানের রামথা শহরে একটি কারখানায় বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন ও ধর্মঘট করছেন। প্রায় একসপ্তাহ ধরে এ আন্দোলন চলছে। 

বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, শহরটির আল হাসান শিল্প এলাকায় অবস্থিত ক্লাসিক ফ্যাশন অ্যপারেলে এই আন্দোলন চলার সময় কিছু ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে।শ্রমিকদের অভিযোগ, এখন তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর হুমকি দেয়া হচ্ছে।

এছাড়া একটি ডাস্টবিনে একজন বাংলাদেশি নারী অভিবাসীর লাশ পাওয়া গেছে, যা নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। পোশাক শ্রমিকরা তাকে নিজেদের একজন দাবি করে এনিয়ে ক্ষোভ এবং আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন।

আম্মানে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় কোনো বাংলাদেশি আটক হননি, তবে ঘটনা সামাল দিতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।

দেশটির সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান এই ক্লাসিক ফ্যাশন অ্যপারেল। কারখানার শ্রমিকদের বেশিরভাগ নেয়া হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী সেখানে ৩০ হাজারের মতো শ্রমিক রয়েছে।

দেশটিতে মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা দেয় এমন একটি সংস্থা তামকিন ফর লিগাল এইড অ্যন্ড হিউম্যান রাইটস বলছে, এই শ্রমিকদের অর্ধেকের বেশি বাংলাদেশী নারী শ্রমিক।

আম্মানে বাংলাদেশ দূতাবাসের তথ্যমতে, জর্ডানে আনুমানিক ৭০ হাজারের মতো বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি পোশাক শ্রমিক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশি শ্রমিক বিবিসিকে জানিয়েছেন, ‘এখানে ফ্যাক্টরির ম্যানেজার ও সুপারভাইজারদের বেতন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের বেতন না বাড়ানোর কারণে আমরা আন্দোলনে যাই। আমাদের সাথে সকল শ্রমিক যোগ দিয়েছে। দুই দিন আগে রাত ১১টার দিকে কয়েকটি গাড়িতে এসে লোকজন আমাদের হোস্টেল থেকে একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে। আর একটা মেয়ে ব্যাংকে গিয়ে আর ফেরেনি। এখন আমরা খুব ভয়ের মধ্যে আছি।’ তবে তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি যে কারা তাকে তুলে নিয়ে গেছে।

তামকিন ফর লিগাল এইড অ্যন্ড হিউম্যান রাইটস সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক লিন্ডা আখলাস জানিয়েছেন, ‘এখানে পোশাক খাতে শ্রমিকদের বেতন একটি বড় সমস্যা। এই খাতের মজুরী জর্ডানে অন্য যেকোনো খাতের শ্রমিকদের চেয়ে কম। পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ১১০ জর্ডানিয়ান দিনার। কিন্তু অন্য যেকোনো খাতে সর্বনিম্ন মজুরি ১৫০ দিনার।’

‘বেতন বাড়ানোর আন্দোলন শুরু হলে মালিক পক্ষ থেকে যুক্তি দেয়া হয়েছে, যেহেতু শ্রমিকদের থাকা-খাওয়ার সুবিধা দেয়া হচ্ছে তাই তারা বেতন বাড়িয়ে দিতে পারবে না। বিশেষ করে মহামারির সময়।’

তিনি আরো বলছেন, দেশটিতে শ্রমিকরা যদি কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ আয়োজন করতে চায় তাহলে শ্রম মন্ত্রণালয়কে দুই সপ্তাহ আগে নোটিশ পাঠাতে হয়।

‘আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা সেরকম কোনো নোটিশ না দিয়েই শিল্প এলাকার বাইরে গিয়ে বিক্ষোভ করে। সম্ভবত শ্রম মন্ত্রণালয় এটিকে অবৈধ বিক্ষোভ মনে করতে পারে।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশটিতে সপ্তাহে চার দিন নির্দিষ্ট কিছু সময় কারফিউ জারি রয়েছে। শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করলে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

এদিকে, বাংলাদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তারা কারখানাটি বেশ কয়েকবার সফর করেছেন। আম্মানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান জানিয়েছেন, দূতাবাস কর্মকর্তারা শ্রমিকদের সাথে কথা বলার পর যতটুকু বুঝতে পেরেছেন, বিচ্ছিন্ন কতগুলো ঘটনা পরপর ঘটেছে। যার সাথে বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও শ্রমিকদের বিষয়টি আতঙ্কিত করে তুলেছে।

তিনি জানিয়েছেন, ‘প্রথমে একজন শ্রমিক করোনাভাইরাসে মারা গেছে কিন্তু এখানকার কর্তৃপক্ষ তার লাশ বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায়নি। এই রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ জর্ডানেই কবর দেয়া হবে বলে নিয়ম করা হয়েছে। সেটা নিয়ে প্রথমে বাংলাদেশি মেয়েদের মধ্যে একটা অসন্তোষ শুরু হয়।’

তিনি আরো জানিয়েছেন, এরপর সবার জন্য করোনাভাইরাসের পরীক্ষা, আইসোলেশন ও চিকিৎসার দাবি তোলা হয়। নাহিদা সোবহান বলছেন, ‘পরে গিয়ে সেটা বেতন বৃদ্ধির আন্দোলন হয়ে ওঠে, যা প্রথমে শুরু করেছিল এখানকার ভারতীয় শ্রমিকেরা। তার সাথে বাংলাদেশীরা যুক্ত হয়েছে।’

‘গতকালই এখানে শ্রম মন্ত্রণালয়ে একটি মিটিং হয়েছে যাতে আমাদের প্রতিনিধি, কারখানার প্রতিনিধি এবং ভারতীয় দূতাবাসের প্রতিনিধি ছিল। সেখানে কারখানার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যে পরিমাণ বেতন বৃদ্ধি চাওয়া হয়েছে সেটি এই মুহূর্তে সম্ভব নয়, তবে প্রতি জানুয়ারিতে যে ইনক্রিমেন্ট দেয়া হয় সেটি এই নভেম্বরেই দিয়ে দেয়া হবে।’ বিবিসি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //