গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে বিশেষ অধিবেশনে বসছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। মিসর ও মৌরিতানিয়া সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্টকে এক চিঠিতে বিশেষ অধিবেশন ডাকার অনুরোধে জানিয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়ার পর গাজায় রক্তক্ষয় থামাতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে।
সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্টকে দেওয়া ওই চিঠিতে ৩৭৭ নম্বর ধারার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কী আছে এই ৩৭৭ ধারায়? কীভাবে গাজায় ইসরায়েলি হামলার লাগাম টানতে পারে এই ধারা?
সাধারণ পরিষদের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিস জাতিসংঘের সব সদস্যদেশকে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় কাল মঙ্গলবার বেলা তিনটায় সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশন বসবে। মিসর ও মৌরিতানিয়ার অনুরোধসহ চিঠি পেয়ে তিনি এ অধিবেশন ডেকেছেন।
ফ্রান্সিসকে লেখা চিঠিতে মিসর ও মৌরিতানিয়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৩৭৭ ধারার কথা উল্লেখ করে ‘শান্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ’ থাকার আহ্বান জানিয়েছে। এ ধারায় বলা আছে, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ব্যর্থ হলে সাধারণ পরিষদের সদস্যরা একযোগে পদক্ষেপ নিতে পারবে।
১৯৫০ সালের ৩ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৩৭৭ ধারা অনুমোদন দেয়। সর্বশেষ ২০২২ সালে এর প্রয়োগ দেখা যায়। ওই সময় সাধারণ পরিষদ ভোটাভুটির পর ইউক্রেনের ভূখণ্ডে রাশিয়ার আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ড বন্ধ এবং অবিলম্বে রুশ সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়। তবে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
৩৭৭ ধারার আওতায় শক্তিপ্রয়োগের সুপারিশ করার ক্ষমতাও রয়েছে সাধারণ পরিষদের; যদিও মাত্র একবারই তা দেখা গেছে। ১৯৫১ সালে কোরিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের সদস্যদের কাছে এমন সুপারিশ করেছিল পরিষদ।
মূলত গাজায় যুদ্ধ বন্ধে নিরাপত্তা পরিষদের ব্যর্থতার কারণে ৩৭৭ ধারার বিষয়টি সামনে এসেছে। গত শুক্রবার গাজায় দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব তোলে সংযুক্ত আরব আমিরাত। ভোটাভুটিতে পরিষদের স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ১৫ সদস্যদেশের ১৩টিই প্রস্তাবে সমর্থন জানায়। যুক্তরাজ্য ভোট প্রদানে বিরত ছিল। আর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ভেটো দেয় পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে গাজায় রক্তক্ষয় থামানোর প্রয়াস ব্যর্থ হয়।
ইসরায়েলের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাব আটকে দেওয়ার পক্ষে যুক্তি হিসেবে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত রবার্ট উড বলেন, প্রস্তাবটি ভারসাম্যপূর্ণ নয়। এতে বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়নি। তবে রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ও বৈশ্বিক মানবাধিকার সংগঠন মার্কিন প্রশাসনের এমন অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেছে।
নিরাপত্তা পরিষদে কোনো প্রস্তাবে ভেটো দেওয়া বা প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা রয়েছে পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্যের। দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন। এদের কোনো একটি সদস্যদেশ চাইলে যেকোনো প্রস্তাব বাতিল করতে পারে।
গাজায় চলমান সংঘাত ঘিরে আগেও নিরাপত্তা পরিষদে আনা চারটি প্রস্তাব ব্যর্থ হয়েছে। যদিও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জাতিসংঘ সনদের ৯৯ ধারা প্রয়োগ করায় এবারের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব বেশ আলোচনায় ছিল।
এদিকে নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আটকে যাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন গুতেরেস। এ ব্যর্থতার জন্য পরিষদের সদস্যদের মধ্যে বিভক্তির নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। ক্ষুব্ধ গুতেরেস বলেছেন, সদস্যদের মধ্যে ঐকমত্যের অভাবে নিরাপত্তা পরিষদ কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
সূত্র- আল-জাজিরা
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : জাতিসংঘ ইসরায়েল সাধারণ পরিষদ যুদ্ধবিরতি ফিলিস্তিন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh