গবেষণা: উদারপন্থী পিতামাতার সন্তানদের মানসিক রোগের সম্ভাবনা বেশি

উদার মানসিকতা সম্পন্ন পিতামাতার সঙ্গে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। হ্যাঁ সম্প্রতি এক গবেষণা এমনটাই বলছে। বৃহস্পতিবার ইনস্টিটিউট অব ফ্যামিলি স্টাডিজ অ্যান্ড গ্যালোপ প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্টে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা বলছে, উদার মানসিকতা সম্পন্ন পিতা-মাতা সন্তানের মানসিক বিকাশের অন্তরায়। অন্যদিকে রক্ষণশীল পিতামাতার সঙ্গে সন্তানদের উন্নত মানের সম্পর্ক রয়েছে, যা তাদের উন্নত মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে পরিচালিত করে থাকে। 

দেখা গেছে, উদারপন্থী পিতামাতাদের সঙ্গে সন্তানদের সম্পর্কের মাত্রা থাকে বেশ নিম্নমানের। এটি একটি শিশুর মানসিক বিকাশের ওপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। আর রাজনৈতিক মতাদর্শ বলছে, পিতামাতার ব্যক্তিত্বের কাঠামো শৈলী সন্তানের ভবিষ্যত বিনির্মাণে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। গবেষণার প্রধান জোনাথন রথওয়েল বলেন, রক্ষণশীল এবং অত্যন্ত রক্ষণশীল পিতামাতাদের সন্তানরা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত অভিভাবকত্বের অনুশীলনগুলো গ্রহণ করে থাকে সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে উদার মানসিকতার অভিভাবকদের ওপর পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, সূচকে তারা সবচেয়ে নিম্নে অবস্থান করছেন। এর কারণ তাদের ভাবনার মধ্যে সন্তানদের জীবনে নিয়মশৃংখলার বিষয়টি একেবারেই থাকে না। 

এমনকি সন্তানদের সফলভাবে শাসনের ক্ষেত্রেও তারা পিছিয়ে। সমীক্ষায় দেখা গেছে এর বিপরীতে রক্ষণশীল পিতামাতারা স্নেহ প্রদর্শনের পাশপাশি সন্তানের প্রয়োজনে সাড়া দেওয়ার সময় শৃঙ্খলা পূরণে বেশ নজর দিয়ে থাকেন।

গবেষণা বলছে, উদার ও রক্ষণশীল অভিভাবকদের আচরণের প্রভাব তাদের সন্তাদের ওপর যেভাবে পড়ে তাতে এই দুই প্রকারের অভিভাকত্বের মধ্যে পার্থক্য বেশ বড়। রক্ষণশীল বা অত্যন্ত রক্ষণশীল পিতামাতার ৭৭% কিশোর-কিশোরীদের তুলনায় উদারপন্থী পিতামাতার সন্তানদের মাত্র ৫৫% ভাল বা চমৎকার মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশের কথা বলছে। 

বলা হচ্ছে-নিয়ন্ত্রণ, প্রয়োগ এবং উষ্ণ প্রতিক্রিয়াশীলতা অভিভাবকত্বের মত অনুশীলনগুলো সবচেয়ে অনুকূল ফলাফলের সাথে যুক্ত। সমীক্ষা অনুসারে, যে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তাদের খেলা বা বিশ্রামের অনুমতি দেয়ার আগে নির্ধারিত কাজগুলো পূরণে তাগাদা দেয় ও স্কুলে ‘নিয়মিত রুটিন অনুসরণের নির্দেশ দিয়ে থাকেন তাদের সন্তানেরাই উল্লেখযোগ্যভাবে ভাল ফলাফল করছে। 

বিপরীতে, যেসব পিতামাতা ‘তাদের সন্তানকে শাসন করা কঠিন’ বলে মনে করেন তারা একটি উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক সম্পর্কের দিকে যাচ্ছেন এবং তাদের সঙ্গে শিশুদের প্রায়ই দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।

এছাড়াও কিশোর-কিশোরীরা কতটা নিরাপদ, সুরক্ষিত বোধ করে এবং তারা ঘন ঘন রাগ করছে কী না বিষয়টিও বেশ লক্ষ্যণীয়। আর তাদের পিতার সঙ্গে তার স্ত্রীর সম্পর্ক এবং দাম্পত্য জীবন কেমন সেটিও একজন কিশোর বা কিশোরীর  মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে আয়, সম্পদ, এবং জাতি/জনসংখ্যা বিষয়ক বিষয়গুলো শিশুর মেধাবিকাশে কোনো প্রভাব ফেলে না। 

জরিপে অংশ নেয়া অভিভাবকদের মতে বৈচিত্র্যের দিক থেকে শিক্ষা খুব একটা প্রভাব ফেলে না বরং ক্ষেত্রবিশেষ ১ শতাংশ এটি হতে পারে বলে মন্তব্য তাদের। 

কোভিড-১৯ মহামারি লকডাউনের সময় সামাজিক ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্নের আগেও আমেরিকান কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মানসিক অসুস্থতা, দুঃখ ও হতাশাবোধ বাড়ার পাশাপাশি আত্মঘাতী চিন্তার প্রকাশ দেখা যাচ্ছিল অধিকহারে। আর এই মানসিকতা বহন করছে এমন হার চলতি দশকে ৪০% বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে এমন তথ্যই সামনে এনেছে গবেষণার রিপোর্ট। 

সূত্র: আরটি 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //