কানাডা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক খারাপ হওয়ার শঙ্কা

ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি তার দলকে বলেছেন, কানাডার সঙ্গে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক বিরোধের কারণে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক সাময়িক খারাপ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম পলিটিকোর এক প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।

খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডের জেরে কানাডা ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন তলানিতে। দুই দেশের এমন সম্পর্কের জেরে পশ্চিমা বিশ্বও উদ্বিগ্ন। এমন উত্তেজনার মধ্যেই খানিকটা ভারতকে হুমকি দিলেন দেশটিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি। 

পলিটিকোর খবরে বলা হয়েছে, কানাডা ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে ভারতে মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এরিক গারসেটি। সেখানে তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়েছে, এর কারণে ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক সাময়িক সময়ের’ জন্য খারাপ হতে পারে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে পলিটিকোর ওই খবরে আরও বলা হয়েছে, এরিক গারসেটি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, এ ঘটনার জেরে ভারতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য যোগাযোগ কমিয়ে দিতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।

যদিও এসব পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেছে ভারতের মার্কিন দূতাবাস। দূতাবাসের পক্ষে থেকে বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও গভীর করতে প্রতিদিনই কাজ করছেন এরিক গারসেটি।

ভারতের পাঞ্জাবকে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র করার দাবিতে গড়ে ওঠা খালিস্তান আন্দোলনের নেতা ছিলেন হরদীপ। ভারত সরকারের চোখে তিনি একজন সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী। গত ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারে এলাকায় গুরুদুয়ারার বাইরে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি নিহত হন। তিনি ওই গুরুদুয়ারার সভাপতিও ছিলেন।

ওই হত্যাকাণ্ডের পর কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সম্প্রতি পার্লামেন্টে এক বিবৃতিতে বলেন, তাদের দেশের নাগরিক শিখ সম্প্রদায়ের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারতের এজেন্টরা জড়িত থাকতে পারেন। তার এ বক্তব্যের পর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়। ট্রুডোর এই বক্তব্যের সমালোচনাও করে ভারত। এরপর দুই দেশই পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কার করে। এ ছাড়া কানাডার নাগরিকদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয় ভারত।

এরপরই পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া আসে, যা ভারতকে খানিকটা অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, কানাডা যে অভিযোগ এনেছে, ভারতের উচিত তা খতিয়ে দেখা এবং অভিযোগটি গুরুতর। এ জন্য পূর্ণাঙ্গ তদন্তও চায় তারা। এ ছাড়া মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, তারা বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছে এবং এই তদন্তে সরাসরি যুক্ত হওয়ার আগ্রহও প্রকাশ করেছে।

এদিকে পলিটিকো বলছে, এরিক গারসেটি ও দিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসের কথোপকথনের বিষয়টি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আপনাকে দেওয়ার মতো কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।

এদিকে কানাডা বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনার জন্য প্রস্তুত। কূটনৈতিক টানাপোড়েন অবসানে ভারতের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় বসতে চায় কানাডা। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি এ কথা জানিয়ে আরও বলেন, ভারত সরকারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। কানাডার কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমরা গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করে যাব। কারণ, কূটনৈতিক আলাপ গোপন থাকাটাই সবচেয়ে ভালো বলে আমরা মনে করি।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় ১৮ জুন দুই মুখোশধারী বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন নিজ্জার। ২০২০ সালে ভারত তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করেছিল।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //