বিস্তৃত হচ্ছে ‘ট্রাম্পবাদ’

ঝড় থেমে গেলেই বিপদ কেটে যায় না, লেজের ঝাপটা আরও মারাত্মক। অনেক সামুদ্রিক ঝড়ই বিদায় নেওয়ার আগ মুহূর্তে ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের লেজের দাপটও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সংযোজন করল এক নতুন অধ্যায়। এক কৃষ্ণ অধ্যায়। গত ৬ জানুয়ারি তার স্মারক হয়েই থাকবে। মার্কিন গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত ক্যাপিটল হিলে ওইদিন উভয় কক্ষের আইনপ্রণেতারা বসেছিলেন জো বাইডেনের জয়ের প্রত্যয়ন করতে; কিন্তু এর মধ্যেই নিরাপত্তারক্ষীদের স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে দেয়াল ডিঙিয়ে, দরজা ভেঙে, জানালার কাচ গুঁড়িয়ে শয়ে শয়ে লোক ঢুকে পড়ে কংগ্রেসের অধিবেশন কক্ষে। অনেকের হাতেই ছিল অস্ত্র। চলল ভাঙচুর। সিনেটের সভাপতির চেয়ার দখল করে, স্পিকারের আসন থেকে কেউ ঘোষণা করে দিলেন- ‘ট্রাম্প নির্বাচনে জিতেছেন’!

দীর্ঘক্ষণের এই হামলা রুখতে তেমন তৎপর হতে পারেননি নিরাপত্তারক্ষীরাও। পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তখন পুলিশ ডেকে কাঁদানে গ্যাস, পরে গুলিও চালানো হয়। এতে নিহত হন পাঁচজন। আর আতঙ্কিত আইনপ্রণেতা, সাংবাদিক ও অন্য কর্মকর্তারা গোপন পথে পাশের ভবনে আশ্রয় নিয়ে রক্ষা পান।

গোটা বিশ্ব তখন বিস্মিত হয়ে দেখল ‘গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা’ রাষ্ট্রটির আজকের বাস্তবতা! এমন ঘটনা মার্কিন রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথম। তবে ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের সময়টি এমনিতেই স্মরণীয় হয়ে থাকত; কিন্তু একে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে অন্যকিছু ভেবে রেখেছিলেন তা আর কে জানতো!

গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়লমার্কিন নির্বাচনের আগে-পরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণ ছিল অসংযত। ভোটের ফল তার পক্ষে না এলে যে তা মানবেন না, তা আগে থেকেই বলে আসছিলেন। তাই ওই আক্রমণ আকস্মিক ছিল না, বরং সেটি দীর্ঘ প্রস্তুতির ‘স্বাভাবিক’ পরিণতি। ভোটে হারার পরও প্রেসিডেন্ট হিসেবেই থেকে যাওয়ার মনোবাঞ্চনায় হোয়াইট হাউসে বসেই নিজের সমর্থকদের কার্যত ক্যাপিটল হিলে আক্রমণ চালাতে প্ররোচিত করেন তিনি। সেই প্রস্তুতি হিংস্র বিদ্বেষের, হীন অসহিষ্ণুতার, সর্বগ্রাসী স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার। এই মানসিকতায় ইন্ধন দিয়ে এবং সেটিকে কাজে লাগিয়েই ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন আগেরবার। এরপর চার বছর ধরে বিভাজন ও বিদ্বেষকে জিইয়ে রেখে গেছেন। এবারও সেগুলোকে হাতিয়ার করে জয়ী হতে চেয়েছিলেন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ইলেক্টোরাল কলেজকে অনুমোদন দেওয়ার জন্য ৬ জানুয়ারি বসেছিল সংসদ অধিবেশন। সেখানে বাইডেনের জয়কে চ্যালেঞ্জ করছিলেন রিপাবলিকানরা। নির্বাচনী রায় উল্টে দেওয়ার জন্যও প্রস্তাব আসছিল। এরই মধ্যে দুপুরে হোয়াইট হাউসের সামনে জড়ো হন ট্রাম্প-সমর্থকরা। তাদের উত্তেজিত করে ট্রাম্প জানান, তিনিও সঙ্গে যাবেন। শেষ পর্যন্ত নিজে না গেলেও ক্যাপিটল ভবনের দিকে সমর্থকদের অভিযান চালানোর আহ্বান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যদি সর্বশক্তি দিয়ে আজই না লড়েন, তাহলে আপনাদের কোনো দেশ থাকবে না। দুর্বল কেউ থাকলে বেরিয়ে যান। এখন শক্তি প্রয়োগের সময়।’

ট্রাম্পের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বীজ বুনেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পেনসিলভ্যানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়া থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ হয়। তাতে অভিযোগ করা হয়, এক রিপাবলিকান পর্যবেক্ষককে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। মুহূর্তে সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়; কিন্তু অভিযোগটি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা। এমন অনেক ভিডিও, ছবি, গ্রাফিক্স ও অভিযোগ অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। চালু করা হয় নতুন হ্যাশট্যাগ ‘স্টপ দ্য স্টিল’ (ভোট চুরি বন্ধ করো)। ৩ নভেম্বর ভোট গণনা শুরুর পর রাত আড়াইটার দিকে হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে গিয়ে নিজেকে ‘বিজয়ী’ ঘোষণা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেন, ‘আমরা বিজয়ী হতে চলেছি। স্পষ্টভাবে বললে- আমরা বিজয়ী হয়েছি।’ এর এক ঘণ্টা পরই ট্রাম্প টুইট করেন, তার জয় চুরি করার চেষ্টা চলছে। এটিও ছিল তার ষড়যন্ত্র তত্ত্বেরই অংশ। সেই অভিযোগ আমলে নিয়েই তার গোড়া সমর্থকরা নির্বাচনের ৬৫ দিন পর ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালায়। 

তার আগে ‘স্টপ দ্য স্টিল’ নামে ফেসবুকে একটি গ্রুপ খোলা হয়। সেখানে যেসব অভিযোগ এনে পোস্ট দেওয়া হয়েছিল, তার অধিকাংশই ছিল মিথ্যা। গ্রুপে অভিযোগ করা হয়- নির্বাচনী সহিংসতায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন! ভোটিং মেশিন এমনভাবে প্রোগ্রাম করা ছিল, যাতে ট্রাম্পের ভোট বাইডেনের ঝুলিতে যায়! কিছু পোস্টে বলা হয়Ñ এখন দরকার ‘গৃহযুদ্ধ’ কিংবা ‘বিপ্লব’। ভয়ানক বিপদ চাউর করতে পেরে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ অবশ্য গ্রুপটি সরিয়ে দেয়। পরে একটি ওয়েবসাইট তৈরি হয়, ‘স্টপ দ্য স্টিল’ হ্যাশট্যাগকে কেন্দ্র করে।

নিজের সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প ১৯ ডিসেম্বরে টুইট করেন- ‘রাজধানীতে ৬ জানুয়ারি তীব্র প্রতিবাদ হবে। সেখানে আসুন।’ এর পর থেকেই ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকদের মধ্যে চলে ওয়াশিংটনে সমবেত হওয়ার প্রস্তুতি। এমনকি সঙ্গে কী অস্ত্র নিয়ে যাওয়া হবে, তার বার্তা বিনিময়ও চলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেদিন ক্যাপিটল ভবন দখল করে নির্বাচনী ফল উল্টে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ‘বর্বরতার পথেই’ সভ্যতা বাঁচানোর আওয়াজ তুলেছিলেন ট্রাম্প সমর্থকদের ওই অংশ। আর দেখা গেছে, ওই হামলায় জড়িতরা প্রায় সবাই শ্বেতাঙ্গ। ‘প্রাউড বয়েজ’-এর মতো বর্ণবাদীরা ছিল। ছিল অভিবাসী-বিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠী, কিউঅ্যানন ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসী ‘স্টপ দ্য স্টিল’ গ্রুপের সদস্য বিভিন্ন ডানপন্থী উগ্রবাদী সংগঠনের সদস্যরা। এক কথায় সবকিছুতেই যেন বাংলার নেতা-কর্মীদের ছাড়িয়ে গেছেন ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা।

এ লড়াই থামবে তো?
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেন হামলা চলাকালীন টেলিভিশনে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এক অন্ধকার সময়ের সামনে দাঁড়িয়ে। নজিরবিহীন আক্রমণ চলছে। তাই ট্রাম্পের উচিত টেলিভিশনে এসে এই জনতাকে সংযত হতে বলা।’ ট্রাম্প অবশ্য তা করেননি। উল্টো এতই প্ররোচনা ছড়াচ্ছিলেন যে, নজিরবিহীনভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। তা-বের শেষ দিকে এসে ট্রাম্প বিবৃতি দেন, ‘এই প্রতিবাদ বিশেষ ধরনের। এবার সবাই বাড়ি যান।’ অন্য একটি বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি এই নির্বাচনের ফলাফল একেবারেই মানি না; কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর সুশৃঙ্খলভাবেই হবে। তবে আমাদের লড়াই সবে শুরু হলো।’ সেই সঙ্গে বাইডেনের শপথ ঘিরে নিরাপত্তা হুমকি পাওয়ায় রাজধানী ওয়াশিংটনে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারির অনুমোদন দিয়েছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই সতর্ক করে দিয়ে বলেছে- ২০ জানুয়ারির আগে ৫০টি অঙ্গরাজ্য, ক্যাপিটলসহ ওয়াশিংটন ডিসিতে সশস্ত্র গ্রুপগুলো সমবেত হওয়ার পরিকল্পনা করছে। আর সেটি হতে পারে ক্যাপিটল হিলে ঘটে যাওয়া হামলার চেয়েও নৃশংস।

সাংবাদিক সারা জোন্স বলেন, ‘ট্রাম্প বিদগ্ধ চিন্তাশীল মানুষ নন; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে একটি মৌলিক সত্য তিনি বোঝেন। গৃহযুদ্ধকে যদি দাস মালিকদের বিদ্রোহ হিসেবে বোঝা যায় তাহলে ৬ জানুয়ারি অনিবার্য হয়ে ওঠে। এই দেশই কু ক্লাক্স ক্ল্যানের জন্ম দিয়েছে, খুন হয়েছে হাজার মানুষ। এই দেশেই মার্টিন লুথার কিং নিহত হয়েছেন। নাগরিক অধিকারের আন্দোলনকারী, ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী, কমিউনিস্টদের হত্যা করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প নির্বাচিত হয়েছেন। তার রাজত্বে ২০১৮ সালে উপাসনালয়ে ইহুদিদের হত্যা করা হয়েছে, লাতিনো মুসলিমদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। ভার্জিনিয়ার রাস্তায় নয়া-নাৎসিদের হিংসা দেখেছে, হিদার হায়ারের হত্যা দেখেছে। ট্রাম্প সরে গেলেই এই বিপদ চলে যাবে তা নয়, তার প্রমাণÑ ক্যাপিটলে হামলাকারীদের হাতে কেবল ট্রাম্পের পতাকাই ছিল না, কনফেডারেটের পতাকাও ছিল। শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদ নতুন কিছু ক্ষোভ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে।’

ভবিষ্যতেও ঘোর বিপদ
‘হয় তাকে হটাও, নইলে আমরাই গদিচ্যুত করব।’ যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ ভবনে হঠাৎ দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প সম্পর্কে এমন হুঁশিয়ারিই দিয়েছে বিরোধী দল ডেমোক্র্যাট পার্টি। কয়েক দিন পর অবশ্য ডেমোক্র্যাটরাই দেশটির শাসনভার পাচ্ছে। এরই মধ্যে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। এতে তার বিরুদ্ধে ‘বিশৃঙ্খলায় উস্কানির’ অভিযোগ আনা হয়। ট্রাম্পই হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি দু’বার অভিশংসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবেন। তার প্রশাসন থেকে এরই মধ্যে শীর্ষ কর্মকর্তা ও মন্ত্রীরা সরে যেতে শুরু করেছেন। তবে ট্রাম্প যে পদত্যাগ করবেন না, তা বলাই বাহুল্য। ক্ষমতার শেষ সময় পর্যন্ত তিনি মসনদেই থাকছেন।

সংসদ ভবনে তাণ্ডবের পর রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৪৫ শতাংশই এ হামলাকে সমর্থন করছেন। বিশ্বজুড়ে নিন্দার পরেও ৮৫ শতাংশ রিপাবলিকান সমর্থক মনে করছেন, ট্রাম্পকে তার বাকি সময়ের জন্য সরিয়ে দেওয়া উচিত হবে না। আর সেটিই ভয় জাগাচ্ছে বিরোধী শিবিরে। জো বাইডেনের কাছে ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে ট্রাম্প আরও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেন বলে ধারণা অনেকেরই। তার সমর্থকরা সক্রিয় আরেকটি ‘বিপ্লব’ ঘটাতে।

জরিপের এমন ফলে ভবিষ্যতেও ঘোর বিপদ দেখছেন সমাজবিজ্ঞানী ও সমাজকর্মীরা। তারা মনে করেন- ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছাড়লেই ‘ট্রাম্পবাদ’ এবং ফ্যাসিজমের বিপদ দূর হয়ে যাবে না। বামপন্থী লেখক পিট ডোলাক বলেন, ‘ক্যাপিটলের ঘটনার পরে আর কোনো সন্দেহই নেই যে যুক্তরাষ্ট্র ফ্যাসিস্ট উত্থানের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। স্বৈরাচারী হওয়ার মতো ট্রাম্পের যথেষ্ট বুদ্ধি ছিল না, শাসক শ্রেণির যথেষ্ট সমর্থনও ছিল না; কিন্তু আরেকজন বাগাড়ম্বরকারীর উত্থান যথেষ্টই সম্ভব এবং তিনি ট্রাম্পের মতো নির্বোধ নাও হতে পারেন।’

এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানী ওয়াল্ডেন বেলো বলেন, ‘ক্যাপিটল ভবনে হামলাই দেখিয়ে দিচ্ছে আগামী চার বছর যুক্তরাষ্ট্রে অনিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক সংঘাত হতে পারে।’ সমাজতাত্ত্বিক স্যামুয়েল ফারবার অবশ্য বলেন, ‘ট্রাম্পবাদ নামে পরিচিত খোলামেলা স্বৈরাচারী, বর্ণবিদ্বেষী, গণবিদ্বেষী, বিজ্ঞান বিরোধী রাজনীতি ততক্ষণ থাকবে; যতক্ষণ তার শিকড় উপড়ে ফেলা যাবে না। অর্থনৈতিক অবক্ষয় এবং তথাকথিত নৈতিক অবক্ষয়ের বস্তুগত পরিস্থিতিতে দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়া ঘটতেই থাকবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রফেসর আলী রীয়াজ জানান, ৫০ বছর আগে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির কারণে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন অভিশংসনের মুখোমুখি হন। রিপাবলিকান দলের কেউ কেউ তাকে বলেছিলেন- অপমান এড়ানোর উপায় হচ্ছে পদত্যাগ। নিক্সন প্রথমে তাতে রাজি না থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের সেটিই একমাত্র ঘটনা; কিন্তু ট্রাম্পের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্নÑ তার আচরণ ও সময়স্বল্পতা। গত ৬ জানুয়ারির পর অবস্থার এতটাই অবনতি হয়েছে যে, তাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়ার মতোও কোনো ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি তার কাছে নেই। গত চার বছরে দেখা গেছে, ট্রাম্প কারও পরামর্শ গ্রহণ করেননি। তবুও তাকে বলার মতো কিছু লোক ছিলেন। এখন প্রেসিডেন্ট কার্যত একা।

নিজেকেই নিজের ক্ষমা!
প্রেসিডেন্ট থাকতে থাকতেই ট্রাম্প নিজের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় দুর্নীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ খারিজ করে দিতে চান। যে প্রক্রিয়াকে বলা হচ্ছে ‘সেলফ পার্ডন’। আর সেটি ঘোষণা হয়ে গেলে প্রেসিডেন্ট পদ হারানোর পরও তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের আইনি তদন্ত করতে পারবে না পরবর্তী সরকার। ‘পাওয়ার অব ক্লিমেনসি’ অর্থাৎ সাজা মাফ করে দেওয়ার বিশেষ ক্ষমতা দিয়েই নিজেকে নিজে ক্ষমা করতে চান ট্রাম্প। অবশ্য ইতিহাস বলছে- এর আগে আর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমনটি করেননি। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিই তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিচারের ক্ষেত্রে নিজেই বিচারকের আসনে বসতে পারেন না। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের আইনি বৈধতা প্রশ্নের মুখে পড়বে। যদিও মার্কিন সংবিধানে ‘পাওয়ার অব ক্লিমেনসি’র এখতিয়ার স্পষ্ট করা নেই। সে ক্ষেত্রে আইনি ফাঁকফোকর দিয়ে এই সুবিধা পেলেও পেয়ে যেতে পারেন ট্রাম্প। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও একটি রীতি ভাঙতে চলেছেন। এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দায়িত্ব গ্রহণের অনুষ্ঠানে তিনি যাচ্ছেন না। অথচ উত্তরসূরির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপস্থিত থাকাই রেওয়াজ। আগের সব প্রেসিডেন্টই থেকেছেন; কিন্তু সামুদ্রিক ঝড় অপেক্ষা ট্রাম্পের উগ্রবাদের শক্তি অনেক বেশি। সেই শক্তির বীজ রয়ে গেছে মার্কিন সমাজের ভেতরে- নাগরিকদের একটি বড় অংশের মানসিকতায়। ট্রাম্প ব্যক্তিমাত্র, ‘ট্রাম্পবাদ’কে উৎখাত না করলে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার, তা হলফ করেই বলে দেওয়া যায়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //