করোনার টিকা আবিষ্কার হলেও মহামারি কি শেষ হবে

করোনাভাইরাস মহামারি প্রতিরোধে টিকা আবিষ্কারের জোরালো উদ্যোগ চলছে বিশ্বজুড়েই। কিন্তু জটিল এই প্রক্রিয়া সফল হলেও মহামারি পুরোপুরি দূর হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। 

কারণ ভাইরাসের মিউটেশনের কারণে বার বার নতুন টিকার প্রয়োজন হবে। 

ভাইরাস মোকাবিলায় দ্রুত টিকা আবিষ্কার করার জন্য চাপ বাড়ছে। সাধারণত কোনো প্রতিষেধক তৈরির জন্য বেশ কয়েক বছর সময় লাগে। কিন্তু অতি ছোঁয়াচে এই করোনা মহামারি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় সময়ের চাপে ছয়টি পর্যায় কয়েক মাসের মধ্যেই শেষ করার তোড়জোড় চলছে।

সবার আগে গবেষকরা ভাইরাস বিশ্লেষণ করেন। তারপর ভাইরাসের উপাদান ও বাড়তি পদার্থ দিয়ে তারা সম্ভাব্য টিকা তৈরি করেন। তৃতীয় পর্যায়ে পশুর উপর সেই টিকা প্রয়োগ করা হয়। তারপর চতুর্থ পর্যায়ে মানুষের উপর সেটি প্রয়োগ করা হয়। অবশেষে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে ব্যাপক হারে টিকা উৎপাদন শুরু হয়।

বিজ্ঞানীরা ৭০টিরও বেশি টিকা প্রকল্পের জন্য দ্রুত এই প্রক্রিয়া শেষ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কয়েকজন গবেষক এরই মধ্যে চতুর্থ পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন, অর্থাৎ স্বেচ্ছাসেবীদর উপর টিকা পরীক্ষা করছেন। তা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ মানুষের নাগালে টিকা পৌঁছাতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে। 

বিশ্বব্যাপী গবেষকরা নানাভাবে টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

তথাকথিত ভেক্টর ভাইরাস বা পরিচিত ও ক্ষতিকর নয় এমন ‘জীবন্ত' টিকা প্রয়োগের চেষ্টা চলছে। সেটির মধ্যে কভিড-১৯-এর জিনোটাইপের অংশবিশেষ চালান করা হয়। ফলে সেটির উপরের স্তরে করোনাভাইরাসের মতো প্রোটিন সৃষ্টি হয়। এমন ‘ছদ্মবেশী' ভাইরাস মানুষের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। বরং টিকা নেবার পর মানুষের শরীরের প্রতিরোধ শক্তি প্রতিক্রিয়া হিসেবে অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করে। তখন শরীর আসল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা গড়ে তুলতে শেখে।

অন্যরা মৃত টিকা অর্থাৎ করোনাভাইরাসের নষ্ট করে দেয়া অংশ নিয়ে গবেষণা করছেন। এভাবেই টিটেনাস ও ফ্লু মোকাবিলা করতে টিকা তৈরি হয়েছিল। তবে এই প্রক্রিয়ায় দ্রুত বিশাল পরিমাণ টিকা তৈরি করা কঠিন হবে।

সর্বশেষ প্রবণতা হলো জিনভিত্তিক টিকা। তার জন্য ভাইরাস থেকে তথাকথিত আরএনএ বা জেনেটিক গঠনের নির্দেশিকা বের করে নেয়া হয়। এই আরএনএ দিয়ে তৈরি টিকা মানুষের শরীরের মধ্যে ভাইরাসের প্রোটিনের গঠন তরান্বিত করবে, এমনটাই ধরে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এমন কোনো টিকার অনুমোদন দেয়া হয়নি।

এই সংকটের সময়ে অনেকেই দ্রুত টিকা আবিষ্কারের আশা করছেন। তবে সেটা সম্ভব হলেই যে মহামারি শেষ হবে, এমনটা মনে করার কারণ নেই। কারণ ভাইরাসের মিউটেশন বা রূপান্তর ঘটতে পারে, ভাইরাসের জেনেটিক গঠনও বদলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সফল পরীক্ষা সত্ত্বেও টিকা কোনো কাজে লাগবে না। 

ফ্লু ভাইরাসের জন্য প্রতি বছর নতুন টিকা তৈরি করতে হয়। পরিচিত করোনাভাইরাসগুলোও নিজস্ব ডিএনএ বদলে ফেলার চেষ্টা করে।

কভিড-১৯ প্যাথোজেন গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লেও এখনো পর্যন্ত মিউটেশন ঘটায়নি। তা সত্ত্বেও সময়ের সাথে সংগ্রাম চলছে। টিকা যত তাড়াতাড়ি আসবে তত বেশি মানুষকে সুরক্ষা দেয়া যাবে, তাদের প্রাণ বাঁচানো যাবে। -ডয়চে ভেলে

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //