ব্রেক্সিট: আগাম নির্বাচনের প্রস্তাবেও পরাজয় জনসনের

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বুধবার রাতে পার্লাসেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে টানা দ্বিতীয় দফা পরাজিত হয়েছেন। আগাম নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে যে প্রস্তাব এনেছিলেন সেটি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় খারিজ হয়ে গেছে।

এর আগে পার্লামেন্ট সদস্যরা 'নো-ডিল ব্রেক্সিট' বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে চুক্তি ছাড়া বেরিয়ে যাবার বিষয়টি আটকে দিয়ে একটি বিল পাশ করেছেন পার্লামেন্টে। এই বিলটি এনেছে বিরোধী দলগুলো, তাদের সঙ্গে যোগ দের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির  বিদ্রোহী এমপিরা।

ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিটেনে রাজনৈতিক সংকট চরমে পৌঁছেছে, তা সাম্প্রতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই বিলের মাধ্যমে ব্রেক্সিট প্রশ্নে সরকারের ভূমিকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

এই বিলের মাধ্যমে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যদি ইইউয়ের সঙ্গে একটি সমঝোতা করে পার্লামেন্টে নিয়ে আসতে না পারেন, তাহলে তাকে ইইউয়ের কাছে ফিরে যেতে হবে এবং অনুরোধ জানাতে হবে যে ব্রেক্সিটের সময়সীমা যেন ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া হয়।

এই অনুরোধ জানানোর জন্য জনসন ইইউয়ে যে চিঠি পাঠাবেন, সেটার ভাষা কী হবে তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে এই বিলের মাধ্যমে। 'নো-ডিল ব্রেক্সিট' আটকে দিয়ে পার্লামেন্টে যে বিল পাশ করা হয়েছে সেটি এক অর্থে ইইউয়ের কাছে আত্নসমর্পন বলে অভিহিত করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

এই বিল পাশ হবার পরে জনসন আগামী ১৫ অক্টোবর নির্বাচনের প্রস্তাব আনেন। কিন্তু ব্রিটেনে এখন যে 'ফিক্সড টার্ম পার্লামেন্ট অ্যাক্ট' রয়েছে সেখানে বলা আছে, একটি পার্লামেন্ট যে মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হবে সে মেয়াদ পর্যন্ত থাকবে। যদি আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হয় তাহলে দুই-তৃতীয়াংশ এমপির সমর্থন লাগবে।

কিন্তু আগাম নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব দুই-তৃতীয়াশ সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, আগাম নির্বাচনের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ২৯৮টি। আর বিপক্ষে পড়েছে ৫৬টি। দুই তৃতীয়াংশের সমর্থন পাওয়ার জন্য আরও ১৩৬টি ভোট দরকার ছিল জনসনের।  

আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব রেখে জনসন বলেন, ‘ সরকারের আনা একের পর এক প্রস্তাব যদি পার্লামেন্ট পাশ না করে, তাহলে সরকার পরিচালনা করা পুরোপুরি অসম্ভব। সংসদীয় গণতন্ত্রে এটা নজিরবিহীন যে সরকার নির্বাচন দিতে চাইছে আর বিরোধী দল সেটি প্রত্যাখ্যান করছে।’

তবে বিরোধী দল লেবার পার্টি বলেছে, তারা আগাম নির্বাচনের বিরোধী নয়। গত দুই বছর যাবত লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে লেবার পার্টির অগ্রাধিকার হচ্ছে 'নো ডিল ব্রেক্সিট' বন্ধ করা।

'নো ডিল ব্রেক্সিট' আটকে দিয়ে হাউস অব কমন্সে যে বিল পাশ হয়েছে সেটি এখন হাউস অব লর্ডসে যাবে। এরপর রানির সম্মতির জন্য সেটি পাঠানো হবে। এই সবগুলো ধাপ পার হবার যখন পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে যে 'নো ডিল ব্রেক্সিট' আর হচ্ছে না, তখন নির্বাচনের ব্যাপারে বিরোধী দল লেবার পার্টির কোনো আপত্তি নেই।

বাণিজ্য ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইইউয়ের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো না গেলেও ৩১ অক্টোবর নির্ধারিত তারিখে কোনো চুক্তি ছাড়াই ২৮ জাতির এই জোট থেকে বেরিয়ে যাক ব্রিটেন। এটাকে বলা হচ্ছে ‘নো ডিল ব্রেক্সিট’। -বিবিসি