পাবনা শিল্পকলায় প্রথম মঞ্চ নাটকের প্রদর্শন

পাবনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি উদ্বোধনের প্রায় দুই বছর পর মঞ্চস্থ হলো পূর্ণাঙ্গ মঞ্চ নাটক। জেলা শহরের অন্যতম নাট্য সংগঠন পাবনা ড্রামা সার্কেল তাদের ৫০তম প্রযোজনা নাটক নিয়ে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করলেন।

২০২২ সালের ১২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে আধুনিক জেলা শিল্পকলা এডামেমি উদ্বোধন করেন। এর পর থেকে জেলাতে অবস্থিত স্থানীয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নানা অনুষ্ঠানে মুখরিত হয়ে উঠে শিল্পকলা প্রাঙ্গণ। তবে এবারই প্রথম শিল্পকলার মঞ্চে কোন পূর্ণাঙ্গ নাটক প্রদর্শন করা হয়। তাইতো নাটক দেখতে নাট্যপ্রেমী ও সাধারণ দর্শক সমাগমে ৫০০ আসনের হলরুমটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে দর্শক সমাগমে। 

নাটকটি দেখতে স্থানীয় বিভিন্ন নাট্য সংগঠনের সদস্য ছাড়াও সকল শ্রেণি পেশার মানুষ আসেন শিল্পকলা একাডেমিতে। ৪ মে শুক্রবার সন্ধ্যা সারে ৭টায় ৯০ মিনিট সময়কালের এই মঞ্চ নাটকটি প্রদর্শিত হয়। ভারতের বিখ্যাত অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক মনোজ মিত্রের লিখা সামাজিক হাসির এই নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন সাইফুল ইসলাম আজম। নাটকটির সার্বিক সমন্বয়ে ছিলেন নাট্যকার নির্দেশক ফিরোজ খন্দকার।

এর আগে ৪ মে শুক্রবার সন্ধ্যায় এই নাটকটির দ্বিতীয় বারের মত প্রদর্শন করা হয়। পাবনা জেলার সংস্কৃতিচর্চার বাতিঘর বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে নাটটির প্রথম মঞ্চায়ন হয়েছে। বনমালীর শতবর্ষপূর্তিতে এই নাটকটি প্রদর্শনীতে ভিন্নমাত্রা যোগ করে দর্শকদের মধ্যে।

নাটকটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনয় শিল্পী মামুনুর রশিদ মামুন, মেহেদী হাসান শাহীন, সিরাজুল ইসলাম হীরা, আশীষ বৈরাগী, রিফাত সরকার, মো. রবিউল ইসলাম পাচু, শাওন আহম্মেদ রাজ, বরকত উল্লাহ শিমুল, অর্ক মন্ডল, মো. রাকিবুল ইসলাম, খাইরুল ইসলাম শিহান, কামাল হোসেন, অত্রিসাহা আঁখি, রজনী আক্তার, আহমেদ সাহাব ও আমিনুল হক। নাটকটিতে নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন দুইজন আর পুরুষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ১০জন। নাটকের পোশাক পরিকল্পনা ও আলোক প্রক্ষেপণে ছিলেন ওহিদুল কাওছার ও আবহাওয়া সঙ্গীত পরিবেশনে করেন মিকাইল ইসলাম। নাটকের স্টেজ ব্যবস্থাপনায় ছিলেন হাফিজ রতন ও তরুণ দাস মদন। নাটক প্রদর্শনী সমন্বয়ক ও পোস্টার ডিজাইনে ছিলেন সরোয়ার উল্লাস ও মুস্তাফিজুর রহমান।

নাটকটিতে হাস্যরসের মধ্যদিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে বৃদ্ধ এক বাবার শেষ বয়সে সন্তানদের দ্বারা অবহেলিত হবার চিত্র। নাটকে মুলচরিত্র বেচারামচাটুজ্যে। বৃদ্ধ এই মানুষটির স্ত্রী মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। বিষয়-সম্পত্তি বলতে একটা বাড়ি। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে গিয়ে নগদ অর্থ সঞ্চয় করতে পারেননি সে। যাচ্ছিল মেয়ের বিয়ে ও সংসারের চাহিদা মেটাতে শেষ করেছেন। তাই জীবনের শেষ বয়েসে সন্তানদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরেন। কিন্তু ছেলে মেয়ে তার কোন যত্ন নেন না। কিছু খেতে চাইলে, পরতে চাইলে দেন না। কথায় কথায় ছেলে মেয়ে তাকে অপমান করেন। ফলে সন্তানদের অবহেলায় বেচারাম চাটুজ্যেবাড়ি ছেড়ে গিয়ে যাত্রাপালায় যোগ দেন।

বেচারামের এই বাড়ি ছাড়াটাই যেন উপহার হয় ছেলে-মেয়ের কাছে। তারা বাবার সম্পত্তি লিখে নিতে কেনারামনাকে একজন ভবঘুরে ব্যক্তিকে বেচারাম সাজিয়ে বাড়িতে তোলেন। তবে বিষয়টি মেনে নেন না বেচারামের এক নাতি। চলতে থাকে নানা নাটকীয়তা। এর মধ্যেই বাড়িতে ফেরেন বেচারাম। এসে দেখেন তার স্থলে অন্য এক মানুষকে তারা স্থান দিয়েছেন। তখন তিনি আবার বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চান। এসময় সেই নাতিটি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সে তার বাবা-মাকে বলে‘ তোমরা আমার দাদুকে বাড়ি থেকে যেতে দিয়ো না। আর যদি তোরা আমার দাদুকে বাড়িতে না রাখো তাহলে তোমরা বুড়ো হলে আমার কাছে তোমাদের একই দশা হবে।’ 


ছোট্ট নাতির এই কথায় বেচারাম তার সংসার ফিরে পায়। নাটকটিতে হাস্যরসের মধ্যদিয়ে নাট্যশিল্পীরা উপস্থাপন করেন বৃদ্ধ বয়সের পরিণতি ও পারিবারিক বিভিন্ন  অসঙ্গতির চিত্র। যা হৃদয় ছুঁয়ে দেয় দর্শকদের। মহু-মুহু করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো মিলনায়তন। দর্শনীর বিনিময়ে এখনো মঞ্চ নাটক দেখার প্রতি রয়েছে ব্যাপক উৎসাহ ও ভালোবাসা। তবে দেশি সংস্কৃতি ঐতিহ্য ধরে রাখতে নাট্য শিল্পীদের জন্য দরকার পৃষ্ঠপোষকতা আর সরকারি সহযোগিতা। আগামী ১৩ মে নাট্য সংগঠন পাবনা ড্রামা সার্কেল তাদের দলের ৪৩ বছর পূর্তিতে নাটকটি পুনরায় প্রদর্শন করবেন বলে জানা গেছে।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার মারুফা মঞ্জুরী সৌমি বলেন, এটি আমাদের জেলা শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চের জন্য অত্যন্ত আনন্দের দিন। এই মঞ্চ উদ্বোধনের পরে এই প্রথম কোন দল এখানে নাট প্রদর্শন করেছে। আর জেলার অন্যতম নাট্য সংগঠন আমাদের এই মঞ্চে নাট করে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইলো। আমরা চেষ্টা করছি স্থানীয় সকল দলকে সাংস্কৃতিক ভাবে জাগ্রত করার।

পাবনা সাংস্কৃতিক ঐক্য জোটের সভাপতি নাট্যকার নির্দেশক আবুল কাশেম বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এই নাটক নিয়ে রয়েছি। আগে পাড়া মহল্লাতে নাটক হতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো খেলাধুলা হতো। আর এখন সময়ের সাথে সকলের হাতে মোবাইল ফোন। নাটক করার মানুষ পাওয়া খুব কঠিন হয়ে পরেছে। তবু জেলা শহরের এখনো নাট্য চর্চা ধরে রেখেছে ড্রামা সার্কেল। দর্শক হিসাবে নাটকটি দেখে খুব ভালো লেগেছে আমার।

মানবাধিকার কর্মী প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল মতিন খান বলেন, দীর্ঘদিন পরে মঞ্চ নাটক দেখলাম। আগেতো প্রচুর পরিমাণে দল ছিলো উৎসবহতো অনেক নতুন নতুন নাটক দেখতে পেতাম। এখন যে সময় পরেছে তাতে নাটক করাটাই খুব কঠিন। সেই সময়ে জেলার অন্যতম নাট্য সংগঠন ড্রামা সার্কেল এখনো মঞ্চ নাটকের চর্চা করে যাচ্ছে তাদেরকে বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা সব সময় তাদের পাশে আছি থাকবো।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //