প্রজাপতির দিন

প্রজাপতিটার আজ অনেক বেলা করে ঘুম ভাঙল। এমনটা সাধারণত হয় না। প্রজাপতি খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে। এরপর ঘরের দৈনন্দিন কাজ গুছিয়ে নেমে পড়ে মধু সংগ্রহ করতে। কিন্তু বহুদিন থেকে চলে আসা এ রুটিনে আজ যেন একটু হেরফের হলো। এর একমাত্র কারণ প্রজাপতির শারীরিক অসুস্থতা।

গতকাল সংগৃহীত মধু বিক্রি করে হাট থেকে ফিরতে বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। রাতের কুয়াশাঘেরা আবহাওয়া মাড়িয়ে আসার ফলে প্রজাপতির খুব ঠান্ডা  লেগেছে। সাথে সাথে ডানা দুটো শিশিরে একদম এবড়ো-খেবড়ো অবস্থা হয়েছে। শরীরে বেশ ক্লান্তি নিয়ে প্রজাপতি রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। 

আজ যখন ঘুম ভাঙল, তখন সূর্যের আলোয় চারদিক স্পষ্ট হয়ে গেছে। প্রজাপতির বুঝতে বাকি রইল না যে, এরই মধ্যে ফুল বাগানের মালিকেরা বাগান থেকে ফুল তুলে নিয়ে গেছে। তাহলে আজ মধু সংগ্রহ হবে কোত্থেকে? আর মধু সংগ্রহ করতে না পারলে সে ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনবে কেমন করে। প্রজাপতি এক রকম হতাশা অনুভব করল। তবুও ভাগ্যের ওপর ভরসা করল প্রজাপতি। সে ঠিক করল, আজও যাবে ফুল বাগানে যদি কোনো উপায় মেলে।

প্রজাপতি তার ক্লান্ত শরীর নিয়ে ফুল বাগানের দিকে উড়তে শুরু করল। উড়তে উড়তে তার প্রতিবেশী প্রজাপতিদের সাথে দেখা হলো। তারা মধু সংগ্রহ করে খুশিমনে বাড়ির পথে ফিরছে। অবেলায় প্রজাপতিকে ফুল বাগানের দিকে যেতে দেখে তারা সবাই প্রজাপতিকে বিদ্রুপ করল। এতে প্রজাপতির মন যেন আরো ভেঙে গেল। স্বজাতির কাছ থেকে এমন ব্যবহার সে যেন একদমই আশা করেনি। 

প্রজাপতি যখন ফুল বাগানে পৌঁছল তখন দুপুর প্রায় হব হব। এতটা পথ পাড়ি দিয়ে আসতে প্রজাপতির অনেক কষ্ট হলো। সে কোনো রকমে একটি ফুলগাছের শাখার ওপর গিয়ে বসল। প্রজাপতিটা চারদিক তাকিয়ে দেখল, কোথাও ফুলের নামমাত্র নেই। তাহলে কী হবে? এতটা পথ পাড়ি দিয়ে আসা একদম বৃথা! প্রজাপতি একমনে বিলাপ করতে লাগল। ফুলগাছের শাখায় শাখায় তখন ফোটার অপেক্ষায় থাকা অগণিত কলি আবৃত পাপড়ির ভেতর ঘুমাচ্ছিল। প্রজাপতির বিলাপ শুনে তার সবচেয়ে কাছের কলিটির ঘুম ভেঙে গেল। প্রজাপতিকে কলিটি প্রশ্ন করে, ‘কী হয়েছে তোমার?’ 

প্রজাপতি যেন একটু আস্থা পেল। প্রজাপতির এমন কষ্টের সময় কেউ তার সাথে নিজ থেকে কথা বলতে চায়, এটাই বা কম কিসে। প্রজাপতি তখন তার কষ্টের কথা বলল কলির কাছে। প্রজাপতি বলল, ‘ই ফুলশূন্য বাগানে আমি এখন কোথায় মধু খুঁজে পাব, আর মধু না পেলে আমি যে আজ নিজের জন্য ওষুধও কিনতে পারব না।’

প্রজাপতির কথা শুনে ফুলকলিও যেন ব্যথিত হলো। ফুলকলি কিছু একটা করতে চাইল প্রজাপতির জন্য! কলি থেকে একটা সম্পূর্ণ ফুলে রূপ নিতে একটি রাতের প্রয়োজন। কিন্তু তাতে এখনকার মতো প্রজাপতির কোনো উপকার হবে না। 

অবশেষে কলিটি স্বাভাবিকভাবে ফুল ফোটার নিয়ম অমান্য করে তখনই ফুল হয়ে ফুটতে শুরু করল। কিছু সময় পর দেখা গেল, ছোট্ট কলিটি একটি সুন্দর ফুল হয়ে ফুটেছে। ফুটন্ত ফুলটি বাগানে থাকা অন্য সব কলির উদ্দেশ্যে প্রজাপতির দুঃখের কথা বলল। বাগানে থাকা সব কলি প্রজাপতির বিপদে হাত বাড়িয়ে দিল। তারা ধীরে ধীরে একেকটি সুন্দর ফুল হয়ে ফুটতে শুরু করল। দেখা গেল, বাগান আবার ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে।

প্রথম ফোটা ফুলটি প্রজাপতিকে বলল, ‘প্রজাপতি ভাই, এবার তুমি ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করো।’ আনন্দে প্রজাপতির কণ্ঠ জড়িয়ে এল, ‘তোমাদের এ উপকারের কথা কখনো ভুলব না ফুল ভাই। তোমরা সবাই মিলে আজ আমার অনেক উপকার করলে।’ 

ফুলটি বলল, ‘তুমি এমন করে বলছ কেন? প্রজাপতি আছে বলেই তো ফুল এত সুন্দর। তোমরা প্রজাপতিরা যখন রঙিন ডানা নিয়ে আমাদের কাছে আসো, আমরাও তখন আনন্দে মুখর হই। বরং তোমার এ বিপদ মুহূর্তে আমরা যে তোমার উপকারে আসতে পেরেছি, এটাই আমাদের অনেক বড় পাওয়া।’ 

প্রজাপতি অনেক কৃতজ্ঞ হলো ফুলদের কাছে। প্রজাপতি দেখল, চারদিকে রঙ-বেরঙের ফুল ফুটেছে। আজ যেন প্রজাপতির দিন। প্রজাপতি খুশিমনে উড়ে উড়ে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে লাগল আর ভাবতে লাগল, একে অন্যের সহযোগিতায় সবার জীবন সুন্দর হয়!

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //