বিশ্বের পরবর্তী করোনা হটস্পট হতে পারে ভারত

ভারত করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে বিশ্বের পরবর্তী হটস্পটে পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএইচইউ) সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত মোট ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৬৩৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে সংক্রমণের দিক থেকে করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে ভারত।

এদিকে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত করোনার পর্যাপ্ত পরীক্ষা করছে না, যা বিজ্ঞানীদের হতবাক করেছে এবং সংক্রমণের বিষয়ে সরকার থেকে প্রাপ্ত তথ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

এছাড়া দেশটির সরকার কমিউনিটি সংক্রমণ শুরুর বিষয়টি প্রত্যখ্যান করে বলেছে, এই বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট সংজ্ঞা নেই এবং প্রতিটি দেশ তার স্থানীয় অবস্থার উপর ভিত্তি করে এটি সংজ্ঞায়িত করতে পারে। তবে কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গ এই দুটি রাজ্য স্বীকার করেছে যে, রাজ্য দুটিতে কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, বিশাল সংখ্যক সংক্রমণের বিষয়টি যখন শনাক্ত করা যায় না, তখন সেটিকে কমিউনিটি সংক্রমণ বা গোষ্ঠীসংক্রমণ বলে।

দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের সেন্টার ফর চেস্ট সার্জারির চেয়ারম্যান ডা. অরবিন্দ কুমারের মতে, ভারতে অবশ্যই এখন কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে। রাজ্যের পর রাজ্যে সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে। তাই চোখের সামনে যা ঘটছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। 

কিন্তু দেশটির সরকার তা অস্বীকার করছে। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) এক শীর্ষ চিকিৎসক জানিয়েছিলেন যে, ভারত কমিউনিটি সংক্রমণের পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। তবে এর দুইদিন পর আইএমএ এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে জানায়, এটি ওই চিকিৎসকের ‘ব্যক্তিগত মতামত’। আইএমএয়ের বক্তব্য ঘুরিয়ে ফেলায় অনেকেই অবাক হয়েছিলেন।

ভাইরোলজিস্ট ডাঃ শহীদ জামিল বলেন, সরকারকে চিকিত্সক ও বিশেষজ্ঞদের কথা শুনতে হবে এবং কমিউনিটি সংক্রমণের প্রমাণ স্বীকার করতে হবে।

অস্বীকার করার উপায় নেই যে ভাইরাসটি এখন এক মাস আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিমানে ছড়িয়ে পড়েছে। অন্ধ্র প্রদেশ ও বিহারের মতো আরো রাজ্য এবং ঘনবসতিপূর্ণ শহরাঞ্চলে এখন করোনায় আক্রান্তের হার বাড়ছে।

লকডাউন তুলে নেয়ার পর থেকে ভারতে প্রতিদিনই করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। ভাইরোলজিস্ট ডা. শহীদ জামিলের মতে, মানুষের মাঝে সংক্রমণের হারের প্রকৃত মাত্রা স্পষ্ট নয়। ভারত সরকার মে মাসে ২৬ হাজার নমুনা সংগ্রহ করেছে, যা প্রমাণ করে ভারতে তখন সংক্রমণের হার  শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশ ছিল।

তিনি বলেন, আমরা যদি এটিকে পুরো জনসংখ্যায় স্থানান্তর করি তাহলে মে মাসের মাঝামাঝি সময়েই আমাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় অন্তত এক কোটি।

উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রতি ২০ দিনে ভারতে কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে, যা বর্তমান সংখ্যাকে ৩-৪ কোটিতে নিয়ে যাবে। তবে সরকার বেশি সংখ্যক করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নেয়ায় সম্প্রতি শনাক্তের সংখ্যাও বেড়েছে।

এদিকে ডা. জামিল দাবি করেছেন, ভারতে জনসংখ্যার তুলনায় মাথাপিছু পরীক্ষার সংখ্যা খুব কম। কভিড-১৯ পরীক্ষা নিয়ে গবেষণা করা গণিতবিদ হিমাংশু ত্যাগি ও আদিত্য গোপালান বলেন, অপর্যাপ্ত পরীক্ষা ও রোগী শনাক্ত না হলে করোনার সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

এপ্রিল মাসে ভারতের করোনা রোগী শনাক্তের হার ছিল ৩.৮ শতাংশ, যা জুলাইয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৮ শতাংশে। -বিবিসি ও ইউএনবি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //