সংকটাপন্ন গণতন্ত্র

আলী রীয়াজ

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২০, ০২:২৬ পিএম | আপডেট: ২৩ মে ২০২০, ০৫:৫১ পিএম

আলী রীয়াজ।

আলী রীয়াজ।

পৃথিবীজুড়েই যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটের মুখে পড়েছে, সেটা কোনো নতুন কথা নয়, খালি চোখে তাকালেও তা সহজেই চোখে পড়ে। দেশে দেশে কর্তৃত্ববাদী নেতাদের শাসনের লক্ষণ এখন সুস্পষ্ট। গণতন্ত্র বিষয়ে যে সব প্রতিষ্ঠান তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে গত এক দশক ধরেই বলে আসছিল যে, গণতন্ত্রে ভাটা পড়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ওয়াশিংটন-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রিডম হাউস’ এবং লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী ইকনোমিস্টের গবেষণা শাখা ‘ইকনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’ বা ইআইইউ।

এই দশকের মাঝামাঝি থেকেই তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনগুলোতে বলা হচ্ছিল যে, গণতান্ত্রিক দেশের সংখ্যা এখন নিম্নমুখী। ফ্রিডম হাউসের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সারা পৃথিবীর ৬৭ শতাংশ মানুষ এমন ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে বাস করেন, যাকে ‘একেবারে উন্মুক্ত নয়’ (নট ফ্রি) বা ‘আংশিক উন্মুক্ত’ (পার্টলি ফ্রি) বলে বর্ণনা করতে হবে। যার অর্থ দাঁড়ায়- তারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে বাস করেন না।

ইআইইউ বলেছে যে,পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বাস করেন এমন শাসন ব্যবস্থার অধীনে, যা কর্তৃত্ববাদী বা অথোরিটারিন। আর এশিয়ায় এমন অনেক দেশ আছে যেগুলো না গণতান্ত্রিক না কর্তৃত্ববাদী। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এই ধরনের শাসনব্যবস্থাকে আখ্যায়িত করেন- ‘হাইব্রিড রেজিম’ বা দো-আঁশলা শাসন ব্যবস্থা হিসেবে। এগুলো দেখতে গণতান্ত্রিক, কিন্তু আচার-আচরণে স্বৈরাচারী। এই ব্যবস্থা কেবল এশিয়ায়ই আছে তা নয়, এই রকম ব্যবস্থা অন্য মহাদেশেও বিরাজমান।

গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে যারা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন, বিশেষত প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যায়তনে সেই গবেষকরা এই দশকের গোড়া থেকেই বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। এক অর্থে বিপদের আশঙ্কায় লাল পতাকা উড়িয়ে তারা বলার চেষ্টা করেছেন যে, সংকট আসন্ন। শীতল যুদ্ধের অবসানের পর গণতন্ত্রের বিজয়ের ব্যাপারে যে মনোভাবের প্রকাশ দেখতে পাওয়া গিয়েছিল, সেই সময়েও অনেক গবেষক এবং গণতন্ত্রের লড়াকুরা এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন যে, কর্তৃত্ববাদের থেকে সরে আসলেই সব সময় তার পরিণতি গণতন্ত্রে শেষ হয় না।  

আজকে যে অবস্থার সূচনা হয়েছে তাকে কেউ বলছেন গণতন্ত্রের পতন, কেউ বলছেন যে, এ হচ্ছে বিপরীত গ্রোথ। কেউ কেউ এর নাম দিয়েছেন স্বৈরাচারীকরণ- অটোক্রেটাইজেশন। যেভাবেই বর্ণনা করা হোক না কেন, এটা এখন স্পষ্ট যে, ‘একেবারে উন্মুক্ত নয়’ এমন ব্যবস্থার অধীনে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, বিশেষ করে এমন সব দেশে যেগুলোতে গণতন্ত্র স্থায়ী রূপ পেয়েছিল, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা যে সব দেশকে ‘কন্সোলিডেটেড ডেমোক্রেসি’ বলে চিহ্নিত করতেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, মূল্যবোধ এবং প্রতিষ্ঠানের ওপরে বিভিন্ন ধরনের আক্রমণ- বিভিন্ন দিক থেকে।

এইসব কারণে এই বিষয় এখন সর্বজনস্বীকৃত যে, গণতন্ত্র এখন সংকটের মুখে। গণতন্ত্রের এই সংকটের কারণ এবং পরিস্থিতি নিয়ে গত এক দশকে অনেক গবেষণা ও আলোচনা প্রকাশিত হয়েছে। এই সব গবেষণা এবং এই সব নিয়ে সাধারণ আলোচনায় আমরা এটা দেখতে পাই যে, গণতন্ত্র যখন পতনের মুখে পরে তখন অবস্থাটি কি দাঁড়ায়, আর এও জানি যে, এটা কীভাবে গণতন্ত্রের এই পশ্চাদযাত্রা কীভাবে ঘটে। এই সব বিষয়ে খুব বেশি বিতর্ক নেই; যা এখনো বিতর্কিত তা হচ্ছে, কোন কারণগুলো- কী ফ্যাক্টরগুলো এই প্রক্রিয়ার সূচনা করে।

আমরা জানি যখন গণতন্ত্র ধসের মুখোমুখি হয় কিংবা যখন গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটে তখন কী অবস্থা হয়- নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলো সংকুচিত হয়ে যায়, ভিন্নমতের জায়গা সীমিত হয়ে পড়ে, সরকারের বিরোধীদের প্রাতিষ্ঠানিক রক্ষাকবচ অদৃশ্য হয়ে যায়, মতপ্রকাশ এবং সমাবেশের স্বাধীনতা টিকে থাকলেও তা হয় খুবই সীমিত হয়। গণমাধ্যমকে হয় কার্যত কিনে নেওয়া হয় কিংবা হুমকির মাধ্যমে স্বেচ্ছা-সেন্সরশিপে ঠেলে দেওয়া হয়। আইন সভা হয়ে পড়ে দুর্বল, অকার্যকর; বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের অধীনস্থ হয়ে পড়ে। সরকার বিরোধীদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। আর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় এমন ব্যক্তিরা যারা সাধারণ মানুষের যুক্তিবাদিতার কাছে আবেদন করেন না, করেন তাদের আবেগের কাছে, তাদের বিদ্বেষের কাছে। এই ধরনের নেতাদেরকে বলা হয়‘ডেমাগগ’। এরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হোন এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে, সব সমস্যার সমাধান তিনি দিতে পারেন, সব জটিল সমস্যার সহজ সমাধানের কথা বলেন তারা।

১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে অনেকেই এই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, লাল-পতাকা উড়িয়ে কমিউনিস্টরা এসে রাজধানী দখল করে নিয়ে গণতন্ত্রের পতন ঘটাবে; সেইসব ভবিষ্যৎবাণী সত্য হয়নি। সত্য হয়নি ১৯৯০-এর দশকের এই ভবিষ্যৎবাণীও যে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ধারকরা- যাদের অনেকেই ‘মৌলবাদী’ বলে বর্ণনা করতে পছন্দ করেন- তলোয়ারের কোপে গণতন্ত্রকে হত্যা করবে। ১৯৬০ এবং ১৯৭০-এর দশকে সেনাবাহিনী যেভাবে তাদের বুটের তলায় গণতন্ত্রকে মাড়িয়ে দিয়েছিল তার পুনরাবৃত্তিও হয়নি।

তবে এটা ঠিক যে, কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, যেখানে এই ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে- ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্রের অবসান ঘটেছে একটি বামপন্থী সরকারের আমলে, তুরস্ক এবং ভারতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং মূল্যবোধকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলা হয়েছে, এমন সব দলের অধীনে যাদের আদর্শ ধর্মাশ্রয়ী; মিসর এবং থাইল্যান্ডে গণতন্ত্রের ওপরে হামলা চালিয়েছে সেনাবাহিনী; কিন্তু ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র এবং এশিয়া-আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে যারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে রীতিমতো ধর্মযুদ্ধের সূচনা করেছে, তারা হচ্ছে দক্ষিণপন্থী লোকরঞ্জনবাদী (পপুলিস্ট), তাদের এজেন্ডা জাতীয়তাবাদের আড়ালে বিদেশি ভীতি বা জেনোফোবিয়া এবং ইসলামভীতি বা ইসলামোফোবিয়া; দৃশ্যত তারা অর্থনৈতিকভাবে যারা পিছিয়ে আছেন সেই মানুষদের প্রতিনিধিত্বের দাবিদার। এ যাবত গণতন্ত্রের বিরুদ্ধের লড়াইয়ের অগ্রণী এরা, তারা অংশত সফলও। 

এই যে লোকরঞ্জনবাদী নেতারা তাদের বর্ণ ভিন্ন, তাদের গাত্রবর্ণ ভিন্ন, তাদের জেন্ডার ভিন্ন। শত্রু ‘তৈরি’ করতে তারা সিদ্ধহস্ত, সেই শত্রু দেশিই হোক কি বিদেশি। কারও কার জন্য কথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ তৈরি করেছে যৌক্তিকতা, আর কারও কারও জন্য ‘উন্নয়ন’ হচ্ছে মন্ত্র। তারা এক দল অনুসারী তৈরি করেছে, যারা একই সঙ্গে গর্বিত (তাদের জাতির জন্যে, দেশের জন্যে বা ধর্মের জন্য), অসন্তষ্ট (তাদের অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে), এবং ক্ষুব্ধ (তাদের কল্পিত শত্রুর বিরুদ্ধে)। তারা তাদের নেতাদের আচরণ, কথা, কাজের প্রশংসায় বিগলিত। এ হচ্ছে এমন এক অবস্থা যে, একদল মোসাহেব রাজার পোশাক নিয়ে প্রশংসায় ব্যস্ত যখন সেই গল্পের শিশু সবার সামনেই বলে গেছে- ‘রাজা, তোমার গায়ে কাপড় কোথায়?’

আমরা কি এমন কোনো মুহূর্তকে চিহ্নিত করতে পারব, এমন কোনো সময়কে যখন গণতন্ত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে? সারা পৃথিবীর কোথাওই আপনি এমন কোনো দর্শনীয় মুহূর্তকে বের করতে পারবেন না যখন গণতন্ত্রের আনুষ্ঠানিকভাবে অবসান হয়েছে। এমন কোনো সময় আসেনি যখন রেডিও, টেলিভিশন বা গণমাধ্যমে এমন ঘোষণা পাঠ করে শোনানো হয়েছে যে, ‘আমরা এখন থেকে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি পরিত্যাগ করলাম এবং অবিলম্বে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো গুটিয়ে ফেলা হচ্ছে’।

এর বদলে গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটেছে গণতন্ত্রের এক অনিবার্য প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে- সেই অনিবার্য প্রক্রিয়ার নাম হলো নির্বাচন। স্টিভেন লেভিটস্কি ও ড্যানিয়েল জিবলেট এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন তাদের বহুল আলোচিত গ্রন্থ- ‘হাউ ডেমোক্রেসিস ডাই?’। এই বিষয়ে গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে তারা লিখেছেন, ‘আজকের দিনে গণতন্ত্রের উল্টোযাত্রা শুরু হয় ব্যালট বাক্সে। গণতন্ত্র ভেঙে পড়ার এই নির্বাচনী যাত্রাপথ খুবই প্রতারণাপূর্ণ (ডিসেপ্টিভ)। প্রচলিত ধারার যে কোনো সামারিক অভ্যুত্থানে, যেমন পিনোশের চিলিতে, গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটে একেবারে অকস্মাৎ, আর তা সকলের কাছে সহজেই দৃশ্যমান হয়। প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ ভস্মীভূত হয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট হয় নিহত হন অথবা তাকে বন্দি করা হয় অথবা তাকে পাঠানো হয় নির্বাসনে। সংবিধান হয় স্থগিত করা হয়, অথবা একেবারে বাতিল; কিন্তু নির্বাচনের পথে [গণতন্ত্রের উল্টোযাত্রায়]

এ সবের কিছুই ঘটে না। রাজপথে কোনো ট্যাংক নামে না। সংবিধান এবং অন্যান্য নামমাত্র গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো জায়গা মতোই থাকে। জনগণ ভোটও দেয়। নির্বাচিত স্বৈরাচারীরা গণতন্ত্রের একটা আবরণ বজায় রাখে যখন তারা গণতন্ত্রের সারবস্তকে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলে ‘ (‘দিস ইজ হাউ ডেমোক্রেসিজ ডাই’, গার্ডিয়ান, জানুয়ারি ২১, ২০১৮)। তারপরে যা ঘটে, যা আমার দেখতে পাই তা হচ্ছে স্বৈরাচারীরা গণতন্ত্রীর ভান করে ঘুরে বেড়ায়; আর তাদের অন্ধ অনুসারীরা জোর দিয়ে বলে যে, গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্র বিকশিত হচ্ছে।

একার্থে এই হচ্ছে গণতন্ত্রের মৃত্যুর ঐতিহাসিক মুহূর্ত; কিন্তু সমাজে ও রাজনীতিতে তার পূর্ব-লক্ষণ থাকে। সমাজে ক্রমাগতভাবে সহমর্মিতা ও সহনশীলতা কমে আসে, ব্যক্তিরা হয়ে পড়েন বিচ্ছিন্ন, যাকে বলা হয়ে থাকে এটোমাইজেশন; ইতিবাচক সামাজিক পুঁজি- যার অর্থ হচ্ছে একের সঙ্গে অন্যের ইতিবাচক সংহতির বন্ধন- তা হ্রাস পায়; রাজনীতির ব্যাপারে তৈরি হয় অনাগ্রহ, এবং ক্রমাগতভাবে সমাজের মানুষের মধ্যেকার পার্থক্যগুলোকে বড় করে তোলা হয়।

আর রাজনীতির ক্ষেত্রে যেগুলো এই অবস্থার পূর্ব-লক্ষণ তার বর্ণনা দিয়েছেন এন্ডরু রওন্সলি; তিনি বলছেন ‘বিশেষজ্ঞ জ্ঞানকে অবনয়ন করা হয় আর অজ্ঞতাকেই উদযাপন করা হয়। যারা ঐকমত্য তৈরি করেন তাদের পরিণত করা হয় ঘৃণার পাত্রে। রাজনীতিকে বানানো হয় বিষ ছড়ানো বিবাদমান দুই পক্ষে’ (‘হাউ ডেমোক্রেসি এন্ডস রিভিয়্যু- ইজ পিপল পলিটিক্স ডেড?’ গার্ডিয়ান, মে ২০, ২০১৮)। সমাজ এবং রাজনীতির এই সব জীবাণু তৈরি করে সেই রোগ যাতে গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটে।

এই নিয়ে এখন ভিন্নমতো খুব কম যে আমাদের অবস্থাটি কী; কিন্তু যে প্রশ্নের উত্তর এখনো আমার সন্ধান করছি তা হলো- আমরা এখানে উপস্থিত হলাম কী করে? এর এক ধরনের সাধারণ উত্তর হচ্ছে এই যে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের যা দেবার কথা ছিল, তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, আর তার ফলে মান-নির্ণায়ক মূল্যবোধ বা নরমেটিভ ভ্যালু হিসেবেই গণতন্ত্র এখন আক্রান্ত হয়েছে। এটা ঠিক যে গত কয়েক দশকে বৈশ্বিকভাবে এবং যেসব দেশে গণতন্ত্রের চর্চা হয় সেখানে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দুই ক্ষেত্রেই বৈষম্য বেড়েছে। এই ব্যবস্থার ব্যাপারে ক্ষোভের কারণ তৈরি হয়েছে।

অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের কারণে বৈশ্বিক পর্যায়ে এবং দেশে দেশে এক এলিট শ্রেণীর হাতে অর্থ এবং ক্ষমতা পুঞ্জিভূত হয়েছে, অন্যদিকে দরিদ্র শ্রেণির মানুষ আরও পিছিয়ে পড়ছেন। রাজনৈতিকভাবে যে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিশ্রুতি ছিল অংশগ্রহণমূলক হবার এবং অনেকের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করার সেগুলো ক্ষুদ্র এক গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছে; অর্থ, বিশেষ স্বার্থের প্রতিনিধিত্বকারী এবং প্রভাবশালীদের হাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্দি হয়ে গেছে। এই ব্যাখ্যার বাস্তব ভিত্তি আছে এবং তা আমাদের সহজেই চোখে পড়ে। বৈশ্বিকভাবে আমরা এর পক্ষে যথেষ্ট উদাহরণও দেখাতে পারব।

কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে, বৈশ্বিক এই সংকট যেন কোনো দেশে গণতন্ত্রকে হত্যার বৈধতা না দেয়; যেন স্বৈরাচারী শাসকরা না বলতে পারেন যে- এই প্রবণতা বৈশ্বিক, ফলে এটাই স্বাভাবিক। কোনো রোগ মহামারি হয়ে ওঠার মানে এই নয় যে, তাই স্বাভাবিক। যে সব দেশে গণতন্ত্রের সংকট দেখা দিয়েছে সেই সব দেশে এই বৈশ্বিক পটভূমিকার পাশাপাশি কিছু নিজস্ব কারণও আছে।

গণতন্ত্রের সংকটের রূপটি সবার কাছে তুলে ধরা, কারণগুলো চিহ্নিত করা, সেগুলো মোকাবেলা করার উপায় অনুসন্ধান করা এবং তার জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেই বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া হচ্ছে গণতন্ত্রকে সংকট থেকে মুক্ত করার উপায়। কাজটি কঠিন; কিন্তু তা অসম্ভব নয়। কেননা ১৯৩০-এর দশকেও বৈশ্বিকভাবে গণতন্ত্র সংকটের মুখে পড়েছিল; কিন্তু সেই সংকট মোকাবেলা করে গণতন্ত্রবিরোধী আদর্শগুলোকে কেবল পরাস্তই করা হয়নি- গণতন্ত্র আরও বিকশিত হয়েছিল। 

আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর। তার সাম্প্রতিক প্রকাশিত বইয়ের শিরোনাম- ভোটিং ইন এ হাইব্রিড রেজিম; এক্সপ্লেইনিং দ্য ২০১৮ বাংলাদেশি ইলেকশন (পেলগ্রেভ ম্যাকমিলান, ২০১৯)।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh