সিলভিয়া নাজনীন
প্রকাশ: ২৩ মে ২০২০, ১২:০০ পিএম | আপডেট: ২৩ মে ২০২০, ০৫:১৪ পিএম
শিল্পী কামরুল হাসানের মননশীল জীবন নির্মাণের সূত্রপাত হিসেবে এই ব্রতচারী আন্দোলনের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততাকে উল্লেখ করা যায়। তিনি দেশমাতৃকা তথা বাংলার ঐতিহ্য সংস্কৃতিকে ধারণ করেই নিজস্ব শিল্পবৈশিষ্ট্য তৈরি করেছেন। ব্রতচারী আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন গুরুসদয় দত্ত (১৮৮২-১৯২৮); তিনি ১৯২৮ সালে ‘বাংলার পল্লী সম্পদ রক্ষা সমিতি’ নামে একটি সংগ্রহশালা নির্মাণ করেন।
শিল্পী কামরুল হাসান ১৯৩৯ সালে এই ব্রতচারী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। নিখিলবঙ্গ নবম শিবিরে প্রায় দেড় মাসের সময়কাল তাকে বদলে দিয়েছিল ভীষণভাবে। এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হবার ফলে শিল্পী কামরুলের মনোজগতে গভীর উপলব্ধির ব্যাপ্তি ঘটেছিল। বাঙালি সংস্কৃতি ও শুদ্ধ জাতীয়তাবাদ জাগ্রত হয়েছিল তার মধ্যে, একই সঙ্গে হিন্দু-মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি তৈরির একটি পটভূমি গড়বার প্রচেষ্টাও তার মধ্যে আরম্ভ হয়েছিল।
এই শিবিরেই তিনি পটুয়া শিল্পীদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি পরিচিত হয়েছেন। আর এই পটুয়া শিল্পীদের অঙ্কনশৈলীর প্রভাব তার চিত্রকর্মে বিস্তৃত হয়ে বাংলার শিল্পকলার নতুন গতিপথ তৈরি করেছে। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায় তার ‘রায়বেঁশে নৃত্য’ শিরোনামের শিল্পকর্মের কথা। কামরুল হাসান লিনোকাট মাধ্যমে এই নৃত্যের একটি মুহূর্ত অঙ্কন করেছেন। ব্রতচারী আন্দোলনের ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই রায়বেঁশে নৃত্য।
স্বভাবতই পটুয়াদের ছবি আঁকার পদ্ধতি ভীষণই স্বতন্ত্র। গুঁড়া রং, মাটির খুরি, কালি, গঁদ-এর আটা, ছাগলের ঘাড় থেকে পশম কেটে পটুয়ারা ছবি আঁকতেন। তারা বিষয় হিসেবে রায়বেঁশে নৃত্য, জারি, সারি গানের দৃশ্য, নৌকাবাইচ, বাউল প্রভৃতি বিষয়-সমাচার বেছে নিতেন। সরল ড্রয়িং আর তীক্ষ্ণ তুলির আঁচড়ে আসাধারণ সব চিত্রকল্প নির্মিত হতো। শিল্পী কামরুল হাসান এই সকল পটুয়াদের সঙ্গে আঁকতে শুরু করেন। তিনি পটুয়াদের শিল্পচর্চার পরম্পরায় নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। মাটির খুরিতে তৈরি লাল-নীল রঙের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তখন কামরুল কলকাতা আর্ট স্কুলের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন- ‘ভিক্টোরিয়ান পদ্ধতিতে বিদেশি রঙতুলি নিয়ে সাহেবদের মতো ছবি আঁকার নেশায় মত্ত। হেমেন মজুমদার, রবিবর্মা, অতুল বোস, দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী ইউরোপীয় ধারায় চিত্রকলার হাট বসিয়েছেন, আমাদের ওপর প্রচন্ড প্রভাব। এ ছাড়াও রেমব্রান্ত, ডুরার, হলবিন, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, রাফায়েল তো আছেই। তাদের সামনে রেখে যেখানে স্বপ্নের জাল বুনে চলেছি, সেই সময়েই কোনো অখ্যাত অজ্ঞাত এক পল্লীর মটরু পটুয়া নাটোর পার্কে এসে হাজির, খালি হাত পা, আমাদের নৃত্যগীত এবং বাজনার সঙ্গে বাংলার ঐতিহ্যবাহী চিত্রকলার সঙ্গে পরিচয় ঘটানো হবে।’
শিল্পী কামরুল হাসানের জীবন পাল্টে দিয়েছিল এই পটুয়া সম্প্রদায়। তিনি আমৃত্যু এই শিল্পীদের প্রভাবকে জীবনবোধে ধারণ করেছিলেন। নিজেকে পটুয়া হিসেবেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন কামরুল হাসান। তিনি বাঙালি, বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে সযত্নে লালন করেছেন। মূলত গুরুসদয় দত্ত, তিনিই বাংলার তরুণদের মধ্যে বাঙালি সংস্কৃতির বীজ বুনন করেছিলেন। আর কামরুল হাসান এই ব্রতচারী জীবনবোধকে স্থায়ীভাবে ধারণ করেছেন।
পরবর্তীতে তিনি সুভাষচন্দ্র বোসের অসাম্প্রদায়িক, অহিংস রাজনৈতিক আদর্শকে গুরুত্বপূর্ণ চেতনা হিসেবে দেখেছেন। তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ‘ফরোয়ার্ড ব্লক’-এ যোগ দিয়েছিলেন। এরপরই শুরু হয় দুর্ভিক্ষ। কলকাতার কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা ‘জনযুদ্ধ’ পত্রিকায় শিল্পী জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষ চিত্রমালা প্রকাশিত হয়েছিল।
শিল্পী জয়নুল আবেদিন তখন কলকাতা আর্ট কলেজের শিক্ষক, আর কামরুল হাসান ছাত্র।
কলকাতা কলেজ স্ট্রিটে ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিউজিয়ামের পাশেই দুর্ভিক্ষের ছবির একটি প্রদর্শনীর আয়োজন হয়েছিল, সেখানে কামরুল হাসানের চিত্রকর্মও ছিল। দুর্ভিক্ষকে কেন্দ্র করে তখন নানা ধরনের আয়োজন কলকাতায় চলছিল- গণনাট্য সংঘের সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা প্রভৃতি। এই সব আয়োজনে শিল্পী জয়নুল আবেদিন আর কামরুল হাসান উপস্থিত থাকতেন।
দেশভাগের ডামাডোল চলছিল, আর সেই সময়টাতেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। সেই দাঙ্গার ভয়াবহতা শিল্পী কামরুল হাসান স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন। ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট কলকাতায় গড়ের মাঠে মুসলিম লীগের জনসভায় শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ভাষণ দেওয়ার কথা থাকলেও সেই সভা বাতিল করা হয়। কিন্তু বাতিলের ঘোষণা আসার পূর্বেই সেখানে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়ে গিয়েছিল।
আর চারদিকে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শিল্পী কামরুল হাসান উল্লেখ করেন- ‘১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্টকে ঘোষণা করা হয়েছিল কেবলমাত্র পাকিস্তান বিরোধীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখার জন্য, দাঙ্গা বাঁধানোর জন্য নয়। কলকাতার মুসলমানদের সামনে গড়ের মাঠের জনসভায় সোহরাওয়ার্দী সাহেব বক্তব্য রাখবেন আর সবাই সেখানে উপস্থিত হবে, কোন লাঠি নিয়ে কেউ সেখানে যায়নি, বরং কলকাতার চিরাচরিত মিছিলের ঢাকঢোল বাদ্য ইত্যাদি মানুষের হাতে ছিল। তবে কংগ্রেস আর হিন্দু মহাসভার মিলিত প্রচেষ্টায় দাঙ্গা বাঁধতে দেরি হয়নি।’
সেদিন সমাবেশে শিল্পী জয়নুল আবেদিন, সফিউদ্দীন আহমেদও উপস্থিত ছিলেন। শিল্পী কামরুল বলেছেন, ১৯৪৬ সালের ১৬-১৮ আগস্ট ইতিহাসের জঘন্যতম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কলকাতায় ঘটেছিল। পরবর্তী এক বছর সেই হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রেখা ছিল। ধর্মের নামে মিথ্যা বিভাজন, হত্যাকান্ড, মনুষত্ববোধকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। তবে কামরুল হাসান উগ্র হিন্দুপন্থীদের হাত থেকে কলকাতার বেনিয়াপুকুর লেনের মুসলিম সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকিও নিয়েছিলেন। এভাবেই পরিপার্শ্বিকতা কামরুল হাসানের মননে রাজনৈতিক চেতনার শিকড় দৃঢ়ভাবে স্থাপন করে দিয়েছিল।
শিল্পী কামরুল হাসান কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্ট থেকে চারুশিল্প শিক্ষার লেখাপড়া সম্পন্ন করেন ১৯৪৭ সালের শুরুর দিকে। আর সেই সময়ই ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন থেকে ভারতবর্ষ স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে; দুটি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে বিভক্ত হয়- ভারত আর পাকিস্তান। বাংলা বিভক্তির পর কামরুল হাসানের পরিবার কলকাতা থেকে তৎকালীন পূর্ব বাংলা, অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশে চলে আসেন।
সেই সময়ে কলকাতা আর্ট স্কুলের শিক্ষক জয়নুল আবেদিন, সফিউদ্দীন আহমেদ, আনোয়ারুল হক প্রমুখ ঢাকায় আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন এবং ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত বর্তমান চারুকলা অনুষদ, প্রতিষ্ঠা করেন। তবে, সেসময় শিল্পচর্চার পরিবেশ অনুকূলে ছিল না। রক্ষণশীল, গোঁড়া মুসলিম দেশে শিল্পচর্চার স্কুল প্রতিষ্ঠা করা এবং ছবি আঁকার চর্চা করা বেশ দুঃসাধ্য ছিল। একথা ঠিক, সুস্থ সংস্কৃতি চর্চায় সে সময়ের শিল্পমানস ধারণ করা মানুষেরা একত্রেই ছিলেন। যে কোনো সাম্প্রদায়িক মনোভাবকে প্রতিহত করতে শিল্পী ও বুদ্ধিজীবী সমাজ সচেষ্ট ছিলেন।
১৯৫০ সালে শিল্পীরা আর্ট ইনস্টিটিউটের বাইরে শিল্পান্দোলন বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ‘ঢাকা আর্ট গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫১ সালে পূর্ববাংলার শিল্পীদের আয়োজনে ঢাকা আর্ট গ্রুপের প্রথম প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছিল। প্রদর্শনীর শিল্পীদের মধ্যে জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সফিউদ্দীন আহেমদ, মোহাম্মদ কিবরিয়া, আমিনুল ইসলাম, হামিদুর রহমান, মুর্তজা বশীর, কাইয়ুম চৌধুরী প্রমুখ শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছিল।
শিল্পী কামরুল হাসান শিক্ষকতায় নিয়োজিত থাকলেও দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলন, সাংস্কৃতিক মুক্তি, দেশাত্ববোধ, বাঙালির নিজস্ব ঐতিহ্য- এসব বিষয়ে সজাগ ছিলেন, তিনি কখনোই রাজনৈতিক সচেতনতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে বিচ্যুত হননি। তিনি ১৯৫১ সালে প্রথম এদেশে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। এর মধ্যেই বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা করবার দাবিতে পূর্ববাংলায় আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছিল। ১৯৫২ সালে শিল্পীদের মধ্যে যারা সক্রিয় ছিলেন যথা- আমিনুল ইসলাম, মুর্তজা বশীর, ইমদাদ হোসনে, রশীদ চৌধুরী- শিল্পী কামরুল হাসানও তাদের সঙ্গে পোস্টার, ব্যানার ও স্লোগান এঁকে সক্রিয় ছিলেন। ছাত্র-শিল্পীদের সঙ্গে সমন্বিত হয়ে শিল্পী কামরুল হাসান সারা দেশব্যাপী নানান ধরনের সাংস্কৃতিক জোট, সংগঠন, উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
১৯৫২ সালে কুমিল্লায় ‘পূর্ব পাকিস্তান সাংস্কৃতিক সম্মেলন’-এর আয়োজন করা হয়, সেখানে তিনি ‘পূর্ব বাংলার চিত্রশিল্প’ শিরোনামে প্রবন্ধ পাঠ করেন এবং একটি শিল্প-প্রদর্শনীর সঙ্গে যুক্ত হন। এ ছাড়া পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরে রক্ষণশীলদের নানান পশ্চাদমুখী প্রচারণা ও অপপ্রয়াসকে প্রতিহত করবার লক্ষ্যে ‘পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫২ সালেই। ড. কাজী মোতাহার হোসেনের নেতৃত্বে এই সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালিত হতো এবং এর সহসভাপতি ছিলেন শিল্পী কামরুল হাসান। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রচারণাতেও কামরুল হাসানের সম্পৃক্ততা ছিল। যুক্তফ্রন্টকে সমর্থন করে চিত্রশিল্পীদের উদ্যোগে হাজার হাজার পোস্টার, ব্যানার ও ছবি আঁকার কার্যক্রম চলেছিল, কামরুল হাসান এখানে ভীষণভাবে সক্রিয় ছিলেন।
১৯৬০ সালে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার ডিজাইন সেন্টারে প্রধান ডিজাইনার হিসেবে যোগ দেন। তার নেতৃত্বেই এই ডিজাইন সেন্টারটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। লোকশিল্প ও হস্তশিল্পের প্রতি তার পূর্বানুরাগের বহিঃপ্রকাশ এখানেই ঘটেছিল। বিলুপ্তপ্রায় লোকশিল্পকে পুনরায় তিনি সমৃদ্ধ করে তুলেছিলেন, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা, বংশ পরম্পরায় নিয়োজিত কুটির শিল্পীদের উৎপাদিত হস্তশিল্প ও কারুপণ্যের বিকাশ এবং শিল্পের ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধারে শিল্পী কামরুল হাসান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে পূর্ববাংলার স্বাধীনতা আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তানে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে পূর্ববাংলার ছাত্রজনতা একত্রিত হয়েছিল। এ সময়ের প্রগতিশীল ছাত্র ও সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে শিল্পী কামরুল হাসানের সম্পৃক্ততা ঘটে। তিনি এই আন্দোলনে গভীরভাবে একাত্ম হয়ে পড়েন, এর সময়কাল ১৯৬৮। গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলোতে, ১৯৬৯ সালে শিল্পী কামরুল হাসান ‘বিক্ষুদ্ধ শিল্পী সমাজ’ এর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি সেই সময়ে ২১ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানের সাজসজ্জার দায়িত্বে ছিলেন। এ প্রসঙ্গে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী বলেছিলেন, ‘আন্দোলনের পরবর্তী ধাপে কামরুল হাসান তৈরি করেছেন প্রতীক হিসেবে অক্ষরবৃক্ষ। সমস্ত বাংলাদেশে এই অক্ষরবৃক্ষকে রোপণ করতে হবে, যাতে একদিন এই বৃক্ষ মহীরুহে পরিণত হয়।’
শিল্পী কামরুল হাসানের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পৃক্ততা ধীরে ধীরে আরও বৃদ্ধি পায়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত পরিণতি অর্জন করে। ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়ার প্রতিকৃতি সংবলিত পোস্টার ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে’ বড় রকমের খ্যাতি অর্জন করেছিল।
সার্বিকভাবেই একজন শিল্পীর যতটুকু রাজনীতি-সচেতন হওয়া প্রয়োজন, শিল্পী কামরুল হাসানের মধ্যে তার সম্পূর্ণতা দেখা যায়। তিনি একজন সংগঠক হিসেবেও সফল।
বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পচর্চায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী কামরুল হাসান (১৯২১-১৯৮৮) প্রগতিশীলতা, দ্বিধাহীন চিত্ত, সাহসী পদক্ষেপ আর বাঙালিত্বকে ধারণ করে এখানকার শিল্পজগতে এক অনন্য ব্যক্তিত্বে সমাসীন হয়েছেন। তাকে দেখা গেছে প্রতিবাদী চরিত্র হিসেবে, তেমনই শিল্প-সংস্কৃতির দিক থেকে একজন দায়িত্বশীল নিরন্ত শিল্পসাধক হিসেবে। ব্রতচারী আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ এদেশের প্রগতিশীল আন্দোলনসমূহে যোগদান, তথাপি রাজনৈতিক সচেতনতা সমৃদ্ধ একজন সংগঠক হিসেবে উপস্থিতি- শিল্পী কামরুল হাসানকে শিল্পসাধনার একজন উপযুক্ত সমর্থক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।