নারী জাগরণের অগ্রপথিক

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

খালিদ ইফতেখার

প্রকাশ: ২১ মে ২০২০, ১২:৫৫ পিএম | আপডেট: ২১ মে ২০২০, ১২:৫৮ পিএম

সওগাত প্রকাশনা ছিল বাঙালি মুসলিমের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের উৎস। মুসলিম বাংলার সাহিত্য, সমাজ সংস্কৃতির বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য সওগাত প্রকাশনার ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। 

বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শেষার্ধ থেকেই নাসিরউদ্দীন সওগাতের মাধ্যমে সমাজ চেতনা, মুক্তবুদ্ধির চেতনা, প্রগতিশীল চেতনা ও বাঙালি মুসলিমদের মননচিন্তা, মেধা জাগ্রত ও বিকাশ করতে এবং প্রসার ঘটাতে নিরন্তর কাজ করে গেছেন। তারই প্রেরণায় ও উৎসাহে মুসলিম সমাজের অগণিত লেখক ও সংস্কৃতিসেবী নিজ প্রতিভা বিকাশের পথ খুঁজে পেয়েছেন। 

সওগাত পত্রিকার প্রথম সংখ্যাই সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই সংখ্যায় বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, মানকুমারী বসু, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, রমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, কায়কোবাদ, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখের লেখা ছাপা হয়। নজরুলের সৃষ্টিকর্মের পৃষ্ঠপোষকতায় সওগাতের ভূমিকা ছিল অনন্য। 

সওগাত পত্রিকা প্রকাশ করে নাসিরউদ্দীন মুসলিম সমাজের মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার দ্বার খুলে দেন। ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক ও রক্ষণশীলদের আক্রমণ সাহসিকতার সাথে মোকাবিলা করেন ও সওগাতকে জাতীয় দর্পণরূপে তিনি সমাজে প্রতিষ্ঠা করেন। আজকের লব্ধপ্রতিষ্ঠ বেশির ভাগ মুসলিম সাহিত্যিক সাংবাদিক সওগাত পত্রিকাকে অবলম্বন করে তদানীন্তন সুধীসমাজে পরিচিতি লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সওগাত পত্রিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। নাসিরউদ্দীন শিশুদের সাহিত্যে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে শিশুদের উপযোগী আকর্ষণীয় চিত্রশোভিত শিশু সওগাত প্রকাশ করেন। তার এই গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা শিশুসাহিত্যে এক অবিস্মরণীয় নজির স্থাপন করে। 

  • ঠিক করলাম মোল্লা-মৌলবিদের বিরুদ্ধে যদি সংগ্রাম করতে হয়, তাহলে আমি পিছিয়ে যেতে পারি না। আমি এমন একটা কাজ করব, যা হিন্দুরাও করেনি কোনো দিন। কেবল মহিলাদের ছবি আর লেখা দিয়ে ‘মহিলা সওগাত’ বের করব। দেখি তারা কী বলে, কী করে! কারণ, আমি কিছু কিছু পড়েছি, আগেকার দিনে এমন সব মুসলিম মহিলা ছিলেন, যাঁরা রাজত্ব করেছেন, কেউ কবিতা লিখেছেন, কেউ রণক্ষেত্রে সশরীরে হাজির হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যুদ্ধও করেছেন, কেউ কেউ দরবারও পরিচালনা করেছেন- তারপর মহিলা সংখ্যা বের হলো। কিন্তু বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা ভারি মজার ব্যাপার ঘটল, সেটা নিয়ে আমার এখনো মনে হাসির উদ্রেক হয়। মহিলা সংখ্যা যেদিন বের হয়, সেদিন সওগাত অফিসে সবচেয়ে বেশি ভিড় করেছিলেন মোল্লারাই। তাদের প্রত্যেকের মাথায় সাদা টুপি। এই রকম একটা অদ্ভুত জিনিস মুসলমান সমাজে বেরিয়েছে—মেয়েদের ছবি ছাপা হয়েছে, আর আমরা দেখব না! একদিকে ধর্মের কথা বলে, আর অন্যদিকে মেয়েদের ছবি না দেখলে তাদের চলবে না।"
  • [‘সওগাত’ ও আমার জীবনকথা]

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন নামটি উচ্চারণের সাথে সাথে আমাদের মানসপটে এমন একজন বিশাল মাপের ব্যক্তিত্বের অবয়ব ভেসে ওঠে, যিনি ছিলেন শতাব্দীর সূর্য। দীর্ঘদিন ধরে যিনি প্রতিনিয়ত বাঙালি মুসলিম সমাজের কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধকার দূর করতে আলো ছড়িয়েছেন। আর সেই আলোয় আলোকিত হয়েছেন আজকের প্রতিষ্ঠিত অসংখ্য শিক্ষিত, রুচিবান ও সংস্কৃতিমান বাঙালি মুসলিম। 

উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে ২০ নভেম্বর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন চাঁদপুরের পাইকারদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সে সময়ে মুসলিম সমাজ বাংলার নবজাগরণে একাত্ম হতে পারেনি বলে একদিকে যেমন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল, অন্যদিকে ছিল পশ্চাৎপদতা। অজ্ঞানতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারে আবদ্ধ ছিল তারা। নাসিরউদ্দীন স্কুলজীবনেই মুসলিম সমাজের এই জগদ্দল অচলায়তন ভাঙার অঙ্গীকার করেন। পরবর্তী সময়ে পরম বিস্ময়ে সবাই দেখল, এক সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও কী অসাধারণ কাজ করেছেন নাসিরউদ্দীন।

নাসিরউদ্দীন আবদুর রহমান ও আমেনা বিবির জ্যেষ্ঠ সন্তান। বাবা তার সন্তানকে শিক্ষিত করার জন্য নিজ গ্রাম থেকে অনতিদূরে হরিণা গ্রামে ইংরেজি উচ্চবিদ্যালয়ে পড়তে পাঠান। নাসিরউদ্দীনের বয়স যখন মাত্র ১৮ বছর, তখন তার বাবা মারা যান। বাবার অবর্তমানে সংসারের গুরুদায়িত্ব বহন করতে হয় নাসিরউদ্দীনকে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে তখন তিনি স্বল্প বেতনে স্টিমার কোম্পানিতে স্টেশন মাস্টারের সহকারী হিসেবে চাকরি শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই ওরিয়েন্টাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের এজেন্টের কাজ নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন। এখানে কাজ করে অর্থ সঞ্চয় করেন। কিছুটা পুঁজি হলে চাকরি ছেড়ে দেন। তারপর তিনি তার লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়নের প্রয়াস নেন। প্রকাশ করেন মাসিক সওগাত। সময় ১৯১৮ সাল। পত্রিকা প্রকাশের পর চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে স্বাভাবিক প্রকাশনা ব্যাহত হলে কিছুদিন পত্রিকা বন্ধ রাখেন।

দু’বছর চলবার পর ১৯২১ এর মার্চ-এপ্রিল সংখ্যা বেরিয়ে দেনা আর পাওনাদারদের মামলার দায়ে কাগজটি বন্ধ হয় দিন কতক। আবার বীমা ব্যবসাতে নেমে তিনি দেনা শোধ করেন, বেশ কিছু টাকাও জমিয়ে ফেলেন। আবার বেরুতে থাকে ১৯২৬ এর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর তথা ১৩৩৩এর আশ্বিন থেকে। এই সময়ের মধ্যে একই চিন্তার আরো বেশ কিছু কাগজ বেরিয়ে পড়ে। তার মধ্যে ১৯২২ এর আগস্টে বেরুনো নজরুলের ‘ধূমকেতু’ও রয়েছে। এবারে এবারে বেশ কিছু মুসলিম লেখক তিনি জুটিয়ে নিলেন। এর মধ্যে এস ওয়াজেদ আলিও ছিলেন যিনি ১৯১৯ সালে ইংরেজিতে Bulletin of the Indian Rationalistic Society নামে জার্নাল বের করেছিলেন। এছাড়াও মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ বরকতউল্লাহ শাহাদাৎ হোসেন প্রমুখ ছিলেন। মাস কয় পরেই ১৯২৭ সালের নববর্ষে বের করেন ‘বার্ষিক সওগাত’। এর প্রথম সংস্করণ দু সপ্তাহেই ফুরিয়ে যায়। তিনটি সংস্করণ বের করে পাঠক চাহিদা মেটাতে হয়েছিল। 

এই সময়ে মেয়েদের মধ্যে শিক্ষা-সংস্কৃতির বিস্তারের প্রসঙ্গ নিয়ে ‘মোহম্মদী’ আর ‘সওগাতে’ বেশ একটা বিতর্ক কমে উঠেছিল। ধীরে ধীরে ‘সওগাত সাহিত্য মজলিশ’ নামে এক আড্ডাও গড়ে তুললেন। বসত প্রথমে ৮২ কলুটোলা স্ট্রিটে পত্রিকা দপ্তরেই প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা। ১৩টি সংখ্যা কাগজ বেরুবার পর যে দপ্তর উঠে যায় ১১ ওয়েলসলি স্ট্রিটে। সেখানে তিনি পরিবার নিয়েও উঠে আসেন। দোতলা বাড়ির নিচেই নিজস্ব ছাপাখানা খোলেন।

একইসাথে নারীদের প্রত্যক্ষভাবে সাহিত্য অঙ্গনে আনার জন্য তিনি অসাধারণ ভূমিকা পালন করেন। ১৩৬৬ (বাংলা) সনে ভাদ্র মাস সংখ্যাটি শুধু নারীদের লেখা ও তাদের চিত্রসহ সচিত্র মহিলা সওগাত প্রকাশ করেন। এই সংখ্যাটি নারী জাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে অনন্য ভূমিকা পালন করে। সেই সময় অবরোধবাসিনী মুসলিম নারীদের পত্রিকায় লেখা ছাপানো ছিল অপরাধ। নাসিরউদ্দীন সেই অর্গল ভেঙে নারীদের ছবিসহ লেখা ছাপিয়ে বাঙালি মুসলিম সমাজের নারীদের উন্নততর স্থানে পৌঁছে দিয়েছেন। 

১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে নাসিরউদ্দীন ‘সওগাত সাহিত্য মজলিস’ নামে একটি সাহিত্য সংগঠন গড়ে তোলেন। সে সময়ের সওগাত পত্রিকায় কাজী নজরুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া, শামসুন্নাহার মাহমুদ, বেগম সুফিয়া কামাল প্রমুখের লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হতো। তার উদ্যোগে ও সম্পাদনায় সওগাত নামে আরও কিছু পত্রিকা প্রকাশিত হয়। যেমন ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে বার্ষিক সওগাত প্রকাশিত হয়। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে সাপ্তাহিক সওগাত প্রকাশিত হয়। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে সচিত্র মহিলা সওগাত প্রকাশিত হয়। এছাড়াও কিছুদিন শিশু সওগাত প্রকাশিত হয়েছিল। এটিও ব্যাপক ব্যবসা সফল কাগজ ছিল। এর গ্রাহক সংখ্যা ২২ হাজারে গিয়ে পৌঁছেছিল। কিন্তু শিশু সাহিত্যের ইতিহাসে এর আজ নামটুকুও উচ্চারিত হয় না। দেশ ছেড়ে যাবার আগে অব্দি কাগজটি বের করেছিলেন নাসিরউদ্দীন। কিন্তু এর পরে আর বেরোয়নি।

১৯৪৭ সাল পর্যন্ত মূল পত্রিকাটি চালু ছিল। ১৯৪৭ সালে পাক-ভারত বিভাজনের পর ১৯৫০ সালে মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন ঢাকায় চলে আসেন। 

১৯৫২ সালে ‘সওগাত’ বেরুবে বেরুবে এমন সময় ঢাকাতে ভাষা আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চলল। ‘সওগাত’ অফিসকে কেন্দ্র করেই প্রতিষ্ঠিত হলো 'পূর্ব-পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ'। ঢাকার সাহিত্য মহলের তিনি হয়ে উঠলেন মধ্যমণি। সংসদের সভাপতি ছিলেন কাজী মোতাহার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ফয়েজ আহ্‌মদ। এটি অনেকটাই দেশভাগের আগেকার 'প্রগতি লেখক সঙ্ঘে'র মতো ব্যাপার ছিল। সম্পাদকের পরিচয় দিলেই স্পষ্ট হবে। ফয়েজ আহমেদের সাথে কলকাতা থাকতেই আলাপ হয়েছিল নাসিরউদ্দীনের। পাকিস্তান আমলে তিনি বামপন্থা আশ্রয়ের দায়ে বছর সাতেক জেলও খেটেছিলেন। ষাটের দশকে একসময় বিপ্লোবত্তর চীনে গিয়েও বেশ ক’বছর কাটিয়েছিলেন। মাও সে তুঙের চিন্তাধারাতেও প্রভাবিত হয়েছিলেন অনেকটা। বেইজিং বেতারে বাংলা অনুষ্ঠান প্রচলনেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন । 

ফয়েজ আহমদে মারা যান ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সেই সংসদের যেকোনো সভাতে তখন দুই আড়াইশজনের উপস্থিতি ছিল সাধারণ কথা। বেগম সুফিয়া কামালরাতো ছিলেনই, সেকালে যাদের হাতে বাংলা ভাষা সাহিত্য এবং আন্দোলন দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশে তাদের প্রায় সবাই সমবেত হতেন সেই সংসদে। যেতেন শামসুর রাহমান, শওকত ওসমান,বদরুদ্দীন উমর, আনিসুজ্জামান, মুনীর চৌধুরী, আশরাফ সিদ্দিকী, আল মাহমুদ, আবদুল হাই প্রমুখ অনেকে।

অনেকেই হয়তো জানেন না, 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি ...', গানটির লেখক সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী ঢাকা সওগাতেরই লেখক গোষ্ঠীর অন্যতম। তিনি ‘বেগমে’ চাকরি করতেন সেই সাথে চালিয়ে যেতেন পড়াশোনা। ৫২ সালে লড়াইতে লাঠির ঘায়ে আহত হয়ে বেশ কিছুদিন হাসপাতালেও ছিলেন। তখন বন্ধু হাসান হাফিজুর রহমানকে পাঠান নাসিরউদ্দীনের কাছে। এই হাসান হাফিজুর ঢাকাতে যেন কাজী নজরুলের বিকল্প হয়ে উঠলেন। হাসান হাফিজুর লেখকদের টেনে আনতেও বেশ উদ্যোগী হয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫৪ সালে 'পূর্ব-পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ' ঢাকার কার্জন হলে প্রথম সম্মেলন আয়োজন করতে সমর্থ হয়। ‘মোহম্মদী’ সেখানেও ‘সওগাতে’র পিছু ছাড়েনি। এবারে তাদের সঙ্গ দিল ‘আজাদ’ বলে আরো একটি কাগজ। আর লড়াইর বিষয় হলো, বাংলা ভাষা, বাংলা হরফ, রবীন্দ্রসঙ্গীত ও কাজী নজরুলের উপর দখলীস্বত্ব। এবারেও মামলা হলো। অভিযোগ গুরুতর। রাষ্ট্রদ্রোহিতা, ধর্মদ্রোহিতা এবং কমিউনিস্ট হবার অভিযোগ। একরাতে পুলিশ নাসিরউদ্দীনকে তুলেও নিয়ে যায়। বাড়িতে তল্লাশি চলে। পরে হতাশ হয়ে মুক্ত করে দেয়।

৬৬ নম্বর পাটুয়াটুলীর ঠিকানায় সাহিত্য পত্রিকা সওগাত এবং প্রথম মহিলা সাপ্তাহিক বেগম-এর ছাপাখানা ‘সওগাত প্রেস’ এখন ধুলায় মলিন, জীর্ণ। মূল প্রেস ঘরের মেঝেতেও ধুলার স্তর। হেলে পড়েছে এক পাশের দেয়াল। টিনের ছাদও ভাঙাচোরা। ছাপা, বাঁধাই আর কাটিংয়ের যন্ত্রগুলো অলস পড়ে আছে।

কাজী নজরুল প্রথম বছরেই জ্যৈষ্ঠ ১৩২৬ সংখ্যাতে ‘বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী’ নামে গল্প লিখেছিলেন । দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রথম সংখ্যা থেকে নজরুলই হয়ে উঠেন ‘সওগাতে’র প্রধান লেখক। সে সংখ্যাতে বেরোয় নজরুলের বিখ্যাত ‘সর্বহারা’ কবিতাটি। ইতিমধ্যে তিনি বাংলা সাহিত্য জগতে পরিচিত হয়ে উঠলেও আর্থিক সমস্যার সুরাহা করতে পারছিলেন না। স্থায়ী আবাস বলতেও ছিল না কিছু। ১৯২৭ সালের মার্চে এলবার্ট হলে ‘নজরুল সাহায্য রজনী’র আয়োজন করেন নাসিরউদ্দীন। তাতেও সুরাহা না হলে মাসিক দেড়শ টাকা মাইনেতে তাকে ‘সওগাতে’ কাজ দেন। কাজ বলতে ছিল প্রতি সংখ্যাতে লেখা এবং বিকেলে আড্ডা দেয়া। নজরুল থাকতেন নলিনী কান্ত সরকারের বাড়িতে। সেখানে থাকার অসুবিধে হলে ‘সওগাত’ দপ্তরের উপরের দুটো কামরাতে বিনা ভাড়াতে নজরুলকে থাকার ব্যবস্থাও করে দেন। 

নজরুলের কবিতাতে আরবি ফারসি শব্দাবলীর বাহুল্যে মনে হয় নাসিরউদ্দীনের একটি ভূমিকা আছে। নজরুলকে তিনি মুসলিম সমাজে প্রচলিত শব্দ-বাগ্বিধি ব্যবহার করে মুসলিম সমাজ এবং বিষয় নিয়েই লিখতে বলেছিলেন। নজরুল তাতে ক্ষেপে গেছিলেন। তার বক্তব্য ছিল, কোনো জাতি-ধর্ম নিয়ে লিখলে তা আর যাই হোক কাব্য হবে না। নাসিরউদ্দীনের পালটা যুক্তি, মুসলিমদের সমাজচিত্র এবং মুখের ভাষা বাদ দিলে বাংলার গণসাহিত্য গড়ে উঠবে না কোনদিন। নজরুল রাজি হলেন, কিন্তু জানিয়ে দিলেন ধর্মের নামে কোনো ভণ্ডামী চলবে না। নাসিরউদ্দীনের তাতে আপত্তি করবার কিছু ছিল না, উলটে তিনি এই ব্যাপারে নজরুলকে নেতৃত্ব দিতেই অনুরোধ জানালেন। ধর্মের নামে ভণ্ডামী আর একটি ধর্মীয় সমাজে প্রচলিত সমাজের ভাষা-বিষয়ের দ্বান্দ্বিক সম্পর্কটি আমাদের ‘আধুনিক’ মন এখনো বুঝে উঠতে দ্বিধান্বিত বহু সময়। 

নাসিরউদ্দীন বুঝতেন, কেননা তার সামাজিক এবং ( ব্যবসায়িক বলতেও অসুবিধে নেই) বাধ্যবাধকতা ছিল। নাসিরউদ্দীন মুসলিম সমাজের উত্থান চাইতেন, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার দায় তাকে কোনো শত্রুও দিতে পারেন না। একেতো ‘সওগাত’এর হিন্দু লেখকের তালিকা সবসময়েই দীর্ঘ ছিল। নজরুল ছাড়াও প্রেমেন্দ্র মিত্র, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো লেখকেরাও চাকরি করেছিলেন ‘সওগাতে’। নজরুলের জোরে এমন লেখকদের আড্ডাতে আসাটাও সহজ হয়ে গেছিল অনেকটাই। নজরুল অনেক সময় লেখা না দিয়ে পালাবার ধান্দা করতেন। একবার তাঁকে কামরাতে তালাবন্দি করে লেখা আদায় করবার সরস ঘটনাও ঘটেছিল। দু’জনের সম্পর্কই এমন গভীরতার পর্যায়ে পৌঁছেছিল। 

১৫ ডিসেম্বর , ১৯২৯ সালে সেই আলবার্ট হলে নজরুলকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সেই সভাতে সভাপতিত্ব করেছিলেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। ‘কল্লোলে’র সাথেও যে ‘সওগাতে’র সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ ছিল তার নজির হলো সেই সভার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন ‘কল্লোল’ সম্পাদক দীনেশ চন্দ্র দাস। নেতাজি সুভাষ বসুও সেই সভাতে বক্তৃতা করেছিলেন। নজরুল আসার পরেই এপ্রিল-মে ১৯২৮ সালে ‘সওগাত’ সাপ্তাহিকে পরিণত হয়। সাপ্তাহিক কাগজটিও বেশ জনপ্রিয় হচ্ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই ব্যবসায়িক এবং ভাবপ্রস্থানের প্রতিদ্বন্দ্বীরাও বসে ছিলেন না। নজরুল বিরোধী একটি শিবির ছিলই এরা তখন ‘মোহাম্মদী’কে কেন্দ্র করে সরব হতে থাকে। নজরুল এবং ‘সওগাত’কে ইসলাম বিরোধী বলে চিহ্নিত করে আক্রমণ শানায়। নজরুলের যোগ দেবার মাস কয় পরেই ১৯২৮ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সংখ্যাতে ‘সওগাতে’ সম্পাদকীয় লিখে জানানো হয় তারা সংস্কার আনতে চান মুসলিম সমাজে , ইসলাম ধর্মে নয় এবং ‘মোহাম্মদী’কে এই কাজে সহযোগী বলেই বর্ণনা করেন। কিন্তু ‘মোহাম্মদী’ পক্ষ তাতে শান্ত হয়নি , বরং চড়া ও প্রচুর মিথ্যা স্বরে আক্রমণ চালাতে থাকে। কয়েক সংখ্যা ধরে দুই কাগজের মধ্যে উত্তর-প্রত্যুত্তরের পালা চলেছিল। নজরুল আসার আগে অব্দি দুই কাগজ পরস্পরের বিজ্ঞাপন ছাপাত বিনামূল্যে। কিন্তু সম্পর্ক খারাপ হলে ‘মোহাম্মদী’ বিজ্ঞাপনের টাকা চেয়ে মামলা করে বসে আদালতে। আদালত একতরফা ডিক্রি জারি করলে আকরম খাঁ ছেলেকে নিয়ে ‘সওগাত’ অফিসে এসে পড়েন মেশিন ক্রোক করবেন বলে। সে যাত্রা তৎক্ষণাত ধার করে টাকা দিয়ে মান বাঁচাতে হয় নাসিরউদ্দীনকে। কিন্তু এই পুরো ঘটনা ‘সওগাত’এর খ্যাতি বরং বাড়িয়েই দেয়। নজরুলের আসন ‘সওগাতে’ আরো পাকা হয়। ইনি বেশিদিন কোথাও কোনোদিনই পাকা হতেন না। ‘সওগাতে’ পাঁচ বছর চাকরি করেন। পরে রেকর্ড কোম্পানিতে যোগ দিলে চাকরিটি ছাড়েন বটে কিন্তু লিখে গেছেন এই কাগজে অসুস্থ হবার আগে অব্দি। এ কাগজে শেষ কবিতা তাঁর বেরিয়েছিল মার্চ-এপ্রিল ১৯৪২ সংখ্যাতে। মুজফফর আহমেদকে বাদ দিলে নজরুলের সবচেয়ে ভালো বন্ধু এবং শুভানুধ্যায়ী ছিলেন এই নাসিরউদ্দীনই। ১৯৭৬ সালে নজরুল যখন মারা যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত শোক সভাতে সংগত কারণেই সভাপতিত্ব করবার ডাক পড়েছিল মোহম্মদ নাসিরউদ্দীনের।

নাসিরউদ্দীনের উল্লেখযোগ্য অবদান হলো সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকা ১৯৪৭ সালে জুলাই মাসে কলকাতায় প্রকাশ। ১৯৫০ সালে সওগাত ও বেগম পত্রিকা কলকাতা থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। পর্দার অচলায়তন ভেঙে মুসলিম নারীরা বেগম পত্রিকায় লিখতে শুরু করেন। আজকের লব্ধপ্রতিষ্ঠ বেশির ভাগ মুসলিম নারী বেগম পত্রিকায় আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। নাসিরউদ্দীনের সুযোগ্য কন্যা নূরজাহান বেগম আজীবন পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশ করে চলেছিলেন। 

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন বিশ্বাস করতেন, নারীকে শতবর্ষের কূপমণ্ডূকতা থেকে মুক্তি পেতে হলে নিজেকে আবিষ্কার করতে হবে। এই সচেতনতা নারীদের মাঝে সঞ্চারিত করার জন্য এবং সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নারীদের উৎসাহিত করার জন্য তিনি ১৯৫৪ সালে ‘বেগম ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই ক্লাবে দেশের বরেণ্য নারীদের সংবর্ধনা দেয়া হতো। প্রগতিশীল নাসিরউদ্দীন আজীবন মুসলিম নারীর স্বাধীনতা, স্বাধিকার ও নারীমুক্তির জন্য একজন প্রত্যয়ী সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন। নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, বেগম সুফিয়া কামাল প্রমুখ অগণিত নারীর সাহিত্যে আত্মপ্রকাশ ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে নাসির উদ্দীনের অবদান চিরস্মরণীয়। 

১৯৭৫ সালে তাকে বাংলা একাডেমী পুরস্কারে সম্মানিত করে। ১৯৭৭ সালে অর্পণ করে একুশে পদক এবং দেশের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দিবস রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। এছাড়াও নানা সম্মানে তিনি ভূষিত হন । ১৯৭৯ সালের ১৬ নভেম্বর তারিখে তার ৯২তম জন্মদিনের দু’দিন আগে তাকে জাতীয় স্তরে সংবর্ধনা দেয়া হয়। জীবিতাবস্থাতে কাউকে সংবর্ধনা দেয়ার এটিই ছিল দেশে প্রথম ঘটনা। পরের বছরেও জন্মদিনের দিন কতক আগে ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ লেখিকা সংঘসহ ৩৩টি নারী সংগঠন তাকে সংবর্ধনা দিতে গিয়ে ‘নারীজাগরণের অগ্রদূত’ বলে সম্মানিত করে। ১৯৮৯ সালে তার জীবিতাবস্থাতেই শতবার্ষিকী পালন করে বাংলাদেশ। সেবারেও তাকে জাতীয় সংবর্ধনা দেয়া হয়। 

এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমির ফেলো, জাতীয় জাদুঘরের বোর্ডের সদস্য ও নজরুল একাডেমির চেয়ারম্যান ছিলেন।

যিনি গোটা জীবন মঞ্চের পেছনে থেকে নেতৃত্ব দিতেন, ১৯৭৬ সালে তিনি চালু করেন ‘নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক’। উদ্দেশ্য একটাই- মৃত্যুর পরেও যেন বাংলাভাষা সাহিত্যের প্রতি তার সেবা স্তব্ধ না হয়ে যায়। নিজের পাওয়া পুরস্কারগুলোর অর্থমূল্যেই চালু হয় এই পদক। 

'শিরি-ফরহাদ', 'আল্লার নবী মুহম্মদ (সা.)' , 'সওগাত যুগে নজরুল ইসলাম' ইত্যাদি নামে গুটি কয় বই তিনি লিখেছিলেন। ১৯৮৫ সালে যখন তার বয়স ৯৭ তখন গিয়ে লেখেন ১৬০৩ পৃষ্ঠার বিশালবপু গ্রন্থ ‘বাংলা সাহিত্যে সওগাত যুগ’।

তিনি বেঁচেছিলেন সক্রিয় ছিলেন গোটা বাংলা চতুর্দশ শতক। মারা যান ১৯৯৪ সালের ২১ মে,৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪০১, ঢাকায় । তার বয়স তখন ১০৬।

মোহম্মদ নাসিরউদ্দীনের স্বপ্ন বেশি কিছু ছিলনা। তার ইচ্ছে ছিল নতুন ইংরেজি শিক্ষিত মুসলিম মধ্যবিত্তকে সেই দিকে আকৃষ্ট করবেন। তিনি ‘সওগাত’ কাগজ করেছিলেন। তার মতে এটি সূচনা করেছিল বাংলা সাহিত্যে সওগাত যুগের। নজরুলের জীবনী পড়তে গিয়ে আমরা ‘সওগাত’ কাগজের নাম শুনেছি স্কুল জীবনেই। কিন্তু সেটি আবার কোন ‘যুগে’র প্রবর্তন করেছিল তাও আবার কল্লোল-কালিকলম-কবিতার মতো শুনলে আমাদের ‘আধুনিকতা’ এখনো ভীরমী খাবে! কে সে নাসিরউদ্দীন! আমরা নামই শুনিনি! তার বই ‘বাংলা সাহিত্যে সওগাত যুগে’ তিনি লিখছেন, আধুনিকতা যেমন করে শুনতে চায় তেমন করে, ‘বাঙালি মুসলিম সমাজের এক অন্ধকার যুগে—যখন অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতায় আমাদের সমাজ ছিল আচ্ছন্ন; মাতৃভাষা, সাহিত্য ও শিল্প –সংস্কৃতি ছিল অবজ্ঞাত; ধর্ম ও সমাজের নামে কতকগুলি বাধা নিষেধের বেড়া জালে জড়িয়ে ছিল বাংলার মুসলিম; যে কালে অধঃপতিত বাংলার মুসলিম সভ্য সমাজে আত্ম-পরিচয় দিতেও দ্বিধাবোধ করতো—সেই অন্ধকার যুগে সাহিত্যিক বা বিত্তশালী নয় এমন একটি অখ্যাত ও অজ্ঞাত মুসলিম যুবকের আধুনিক সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গনে চাঞ্চল্যকর অভিযানের ঘটনাবলী প্রকাশ করার ঐতিহাসিক মূল্য আছে বলে মনে করি’। আধুনিকেদের যেমন দোষ –পূর্বতন সবাইকে হেলায় উড়িয়ে দেয়া --নাসিরউদ্দীনও তাই করেছেন এই লিখে, “মাতৃভাষা, সাহিত্য ও শিল্প –সংস্কৃতি ছিল অবজ্ঞাত...” তার কাগজটি প্রথম বেরোয় ১৯১৮ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে, ১৩২৫ সালের অগ্রহায়ণে। তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন একেবারেই অসাহিত্যিক এক প্রেরণা থেকে। স্কুলে পড়া বয়স থেকেই বই পত্তর পড়বার প্রতি তাঁর দারুণ আগ্রহ। কিন্তু মুসলিম সমাজের সম্পাদিত কোনো কাগজে ছবিছাপা না দেখে তিনি বিব্রত বোধ করতেন। তার পাড়া প্রতিবেশেও গান-নাটকের উপর নিষেধাজ্ঞা তাকে ভাবাতো। ছবিসহ কাগজ ছাপবেন এমন একটা আগ্রহ তাতে চেপে বসেছিল।

বিপুল ব্যবসা সফল এই উদ্যমী ব্যক্তিত্ব , যিনি কাগজের সম্পাদক হিসেবেও নিজের নাম ছাপতে কুণ্ঠিত ছিলেন নিছক ব্যবসায়ী ছিলেন না। নিছক ‘আধুনিকতাবাদে’র তাত্বিক বিলাসীও ছিলেন না। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বাঘা-বাঘা সব কাগজ যেমন কল্লোল-কালিকলম-কবিতা-কৃত্তিবাসের কীর্তিগাঁথাতে সরব থাকতে পারে, কিন্তু এই মেঘনা পারের এই অসম উদ্যমী ব্যক্তিত্ব যেখানেই গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন পুরো সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন। নিজে বিশেষ লেখেননি, কিন্তু এই ত্যাগের বিনিময়ে এক বিশাল লেখক এবং পাঠককুল তিনি গড়ে তুলেছিলেন। মধ্যবিত্ত মুসলিম সমাজে এবং পরের কালে বাংলাদেশের বৌদ্ধিক উত্থানে গোটা বিশ শতক জুড়ে তিনি রীতিমত নেতৃত্ব দিয়ে গেছিলেন মঞ্চের পেছনে থেকে।

স্বাধীন বাংলাদেশ তাকে সম্মান জানাতে কুণ্ঠা বোধ করেনি। যদিও যে শহরে তিনি জীবন শুরু করে তিনটি দশক কাটিয়ে গেছিলেন সেখানকার ‘প্রগতিশীল’ বৌদ্ধিক মহলও তাকে মনে রাখার সামান্য দায়ও স্বীকার করেনি কোনোদিন, বাকিদের আর কী কথা।

ভারতে তাকে নিয়ে খুব কম হলেও লেখালেখি হয়েছে। মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায় ১৯৯৭ সালের মার্চে তার ‘দেবাঞ্জলি’র প্রথম সংখ্যাতে ছেপেছিলেন নাসিরউদ্দীনের একটি সাক্ষাৎকার। শর্মিষ্ঠা দত্তগুপ্ত তার একটি ছোট্ট পুস্তিকাতে ‘সওগাত’কে স্মরণ করেছেন। আর জাহিরুল হাসান তার ‘বাংলায় মুসলমানের আটশো বছর’ বইতে  ‘সওগাত’ পত্রিকাই শুধু নয়, একটি আন্দোলনের নাম নামে একটি প্রবন্ধ রেখেছেন। 

সওগাত সম্পাদক নাসিরউদ্দীন, বেগম সম্পাদক নূরজাহান বেগম ও শিশু সাহিত্যিক রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাই রাজধানীর গেন্ডারিয়ার নারিন্দা এলাকার শরৎগুপ্ত রোডের বাড়িতে বসবাস করতেন। যেটি ‘নাসির উদ্দিন স্মৃতি ভবন’ নামে পরিচিত। ১৮৯০ সালের দিকে কিশোরগঞ্জের কোনো এক হিন্দু জমিদার এটি তৈরি করেছিলো।

সম্প্রতি নূরজাহানের ছোট মেয়ের জামাই এ বাড়ি ভেঙে বহুতল ভবন তৈরির চেষ্টা করছে। নূরজাহান ও রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাইয়ের কন্যা ফ্লোরা নাসরিন খাঁন তার স্মৃতি বিজড়িত ১২৭ বছরের পুরানো বাড়িটিকে ‘নাসির উদ্দিন স্মৃতি ভবন’ হেরিটেজ (ঐতিহ্য) হিসেবে সংরক্ষণ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আইনি নোটিশ পাঠান। 

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ১০৬ বছরের সুদীর্ঘ জীবনে কখনো বিশ্রাম নেননি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সভা-সমিতিতে উপস্থিত থেকেছেন। সভায় কখনো দেরিতে উপস্থিত হননি। অনেক সময় দেখা গেছে, তিনিই প্রথম ব্যক্তি সভাতে উপস্থিত হয়েছেন। 

প্রয়াণবর্ষে শতাব্দীর সূর্য এই মৃত্যুঞ্জয়ীকে অভিবাদন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh