সুপ্রীতি ধর লিপি
প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০১:১৯ পিএম | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০১:২৩ পিএম
প্রয়াত সাংবাদিক দীপু হাসান।
আমাদের সময়ে দীপু হাসান নামের একজন ছিলেন, আজ থেকে নাই হয়ে গেলেন। তিনি সাংবাদিকতা পেশায় এসেছিলেন। সেই নষ্ট পেশাই তাকে হত্যা করেছে আজ।
খুব অপরাধী লাগছে নিজেকে। কারণ আমি পালিয়ে আসতে পেরেছি, মরে যেতে দেইনি নিজেকে। দীপু ভাই তা পারেনি। তাই মরে গেলো। এই সময় তাকে মেরে ফেলেছে স্রেফ। অথচ দীপু হাসান ভাইয়ের মতোন এমন সৎ, নিষ্ঠাবান, আদর্শবান মানুষ আর হয় না। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি চোখের সামনে ভাসছে। কত কথা হতো আমাদের, বেশিরভাগই পেশা সংক্রান্ত। কতোবার কতো উপদেশ আমাকে দিয়েছে, বিশেষ করে আইডিয়া দেয়ার ক্ষেত্রে যেন সিদ্ধহস্ত ছিলেন।
মফস্বল ডেস্কে কাজ করার সুবাদে রাজ্যের আইডিয়া তার মাথায় ছিলো। আমি তখন দুইটা বাড়তি পয়সার জন্য প্রথম আলোর পাশাপাশি বিবিসিতে কাজ করি। আর হত্যে দিয়ে পড়ে থাকি দীপু ভাইয়ের কাছে। হেসে বলতো, পার আইডিয়া এতো টাকা, আমি বলতাম, তাই সই। তবু দেন। টাকা নেয়নি, নেয়ার প্রশ্নই উঠে না।
তবে আমাকে অনেক ক্ষেত্রে সঙ্গও দিয়েছে। ঢাকার বাইরে যেতে হতো বিবিসির কাজে, দীপু ভাই ফ্রি থাকলে আমার সঙ্গী হতো। এমনিভাবে সিলেট, সুনামগঞ্জ, গাজীপুরসহ নানা জায়গায় গেছি আমরা। আবার এসব রিপোর্ট বিবিসিতে প্রচারের পর দীপু ভাইয়ের আলোকিত পাতাতেও লিখে দিতাম, যাতে করে আরো কিছু টাকা আমার থলেতে জমা হয়, যা দিয়ে আমি আমার দুই সন্তানসহ পরিবারের খরচ চালাবো।
দীপু ভাইয়ের সাথে সব কথা শেয়ার হতো। দুনিয়ার খবর তার পেটে। তখন তিনি এনটিভিতে পত্রিকার খবর অনুষ্ঠানের পিছনের মানুষ। আমাকে নিয়ে গেলেন। বললেন, পারবেন, বসে পড়েন। শুধু তার মুখের দিকে তাকিয়েই টানা ছয় মাস অনুষ্ঠানটা করেছিলাম। এছাড়াও আজ ইনসিডিন, কাল অন্য প্রতিষ্ঠান সব জায়গাতেই আমাকে নিয়ে যেতেন, পরিচয় করিয়ে দিতেন। কিছু ক্ষেপের কাজও পাইয়ে দিতেন আমাকে। তার নিজের কী লাভ হতো, আমি জানি না।
যমুনা টিভিতে গেলাম। আমরা দুই বান্দা পত্রিকা থেকে যাওয়া, বিপদের সীমা নাই। উঠতে-বসতে টিভির লোকজন আমাদের কথা শোনায়, বিশেষ করে দীপু ভাইকে। কারণ উনি আপাদমস্তক এক ভদ্র মানুষ। যা কিনা ওই শিল্পে অচল মাল।
একাত্তরে কাজ করতেন শুনেছিলাম। তারপর আর জানা হয়নি। তারপর তো আমিও রাস্তায়। মাঝেমধ্যে ফোনে কথা হতো, তখন হতো আন্দোলন নিয়ে আলাপ। কখনো মুখ ফুটে বলেননি যে তার একটা চাকরি ভীষণ প্রয়োজন। কারণ আমারও একই প্রয়োজন ছিলো। দুজনই একই পথের পথিক ছিলাম। পরিবারের দায়িত্ব বড় দায়িত্ব, চাকরি ছাড়া সেটা পালন করা কঠিন, বিশেষ করে আমাদের যাদের কোনো ব্যাকআপ নেই, জমিদারি নেই কোনো পক্ষেই।
মাত্র এক বছরের সিনিয়র ছিলেন আপনি দীপু ভাই। এটা যাওয়ার সময় না মোটেও। কিন্তু বেঁচে থেকেই বা কী করতেন এই নষ্ট সময়ে? কীভাবেই বা বাঁচতেন? যেভাবে গত দশটি বছর ছিলেন, একে কি ঠিক বেঁচে থাকা বলে?
এই চাটুকারদের পেশায় দীপু ভাই আপনি একজন অচল মাল ছিলেন, একদম অচল।
আদিউস দীপু ভাই, দেখা হবে শিগগিরই।
লেখাটি সাংবাদিক সুপ্রীতি ধর লিপির ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেয়া হয়েছে।