নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:৪৯ পিএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:১৮ পিএম
‘তারুণ্যের সিনেমা ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা।
সাম্প্রতিক দেশকাল আয়োজিত তারুণ্যের সিনেমা ভাবনা গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশের সিনেমার সম্ভাবনা, সমস্যা ও সমাধান নিয়ে কথা বলেছেন তরুণ নির্মাতারা। বৈঠকে ‘বাংলা সিনেমা আমলাতন্ত্র ও কোটারি স্বার্থে বৃত্তবন্দি’ বলে মন্তব্য করেন তারা। বিভিন্ন ফিল্ম ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সমালোচক, সংগঠকরা এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সঞ্চালক হিসাবে ছিলেন সাম্প্রতিক দেশকালের পরিকল্পনা সম্পাদক আরশাদ সিদ্দিকী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ডক ল্যাবের ডিরেক্টর তারেক বুলবুল এবং শরিফুল ইসলাম শাওন,কো-অর্ডিনেটর, চলচ্চিত্র মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
বৈঠকে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে যেভাবে সাহায্য পাওয়ার কথা ছিল, তা পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি অনুদান প্রকৃত সিনেমা নির্মাতাদের দেয়া হচ্ছে না। সিনেমার সেন্সরশিপ, অনুদান নিয়ন্ত্রণ করছেন আমলারা। অথচ এসব কাজে সিনেমা সংশ্লিষ্ট লোকজনের কোনো উপস্থিতি নেই।
বক্তারা আরো বলেন,
রাষ্ট্রীয়ভাবে সিনেমা নিয়ে যে নীতিমালা বানানো হয়েছে, তা সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে না।
এজন্য বর্তমানে মানুষ হলবিমুখ, সিনেমাবিমুখ হয়ে পড়ছেন।
নির্মাতা এবং সংগঠক রিপন কুমার
দাস বলেন,
সিনেমা তৈরির কাজে সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই। আমাদের পাশের দেশ
ভারতে একজন সিনেমা পরিচালককে দেবতা হিসেবে দেখা হয়। আমাদের দেশে সিনেমা তৈরি করা
লোকদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়।
সিনেমা বানানোর জন্য
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিষয়েও কথা বলেন নির্মাতারা। এ বিষয়ে তারা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সিনেমা বানানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে
সেটা যে লাগবেই, তা কিন্তু না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না
থাকলেও সিনেমা বানানো যায়। তবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে শুধু পরিচালক বানানোর
ক্ষেত্রেই জোর দেয়া হয়। কিন্তু এর পাশাপাশি ক্যামেরাপারসন, সাউন্ড
ইঞ্জিনিয়ার, কস্টিউম ডিজাইনার, স্ক্রিপ্ট
রাইটার ইত্যাদি বিষয়েও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জরুরি।
নির্মাতা রাকিবুল রওশান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমা শিল্প অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর্থিকভাবে অনিশ্চিত একটা জীবন কাটাতে হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম নিয়ে পড়ার পরেও অনেকেই বিসিএস দেয়। কারণ এখানে সম্মানজনক জীবনযাপনের নিশ্চয়তা নেই।
তিনি আরো বলেন,
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সবাই শুধু পরিচালক তৈরি করতে চায়। কিন্তু যারা অন্যান্য বিষয়ে
কাজ করেন তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যাপারে সবাই উদাসীন। এসব বিষয়গুলো যারা নির্ধারণ করেন, যারা
ভাবেন, আমার মনে হয় তাদের নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত।
নির্মাতা মেহেদী মোস্তফা বলেন, আমি দেশের বাইরে থেকে ফিল্ম নিয়ে পড়াশোনা করেছি। বাংলাদেশে যে সমস্যাটার সম্মুখীন হচ্ছি, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার পাওয়া দুষ্কর। সঠিকভাবে ক্যামেরা চালানোর লোক পাওয়া যাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় কথা, প্রডিউসার পাওয়া তো সোনার হরিণের মতো ব্যাপার।
নির্মাতা চৈতালি সমদ্দার বলেন, ফিল্ম নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রথম দরকার হলো, ‘যা বলতে চাও, তা বলো।’ সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত বেশিরভাগ সিনেমা দেখার মতো না। আমার দেখা বেশ কিছু সিনেমা মানসম্পন্ন হয়নি।
বৈঠক শেষে বক্তারা আবারো বাংলা সিনেমার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার বড় একটি অংশ তরুণ। তরুণদের মাধ্যমেই আবার সেই রুপালি পর্দার সোনালি দিন ফিরবে বলে মনে করেন তারা।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মেহেদী মোস্তফা, চলচ্চিত্র নির্মাতা রিপন কুমার দাস, চলচ্চিত্র নির্মাতা রাকিবুল রওশান, চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ুন কবির শুভ, চলচ্চিত্র নির্মাতা বিপ্লব সরকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা আরাফাত ওয়াহিদ, ওমকার ফিল্মসের শাহ ওয়ালিদ আকরাম, চলচ্চিত্র নির্মাতা শারমিন দোজা, চলচ্চিত্র নির্মাতা নওরিন অসিন, চলচ্চিত্র নির্মাতা অপরাজিতা সংগীতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা চৈতালি সমদ্দার, গ্রিন ইউনিভার্সিটি ফিল্ম সোসাইটির রেজওয়ান রিমন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম ক্লাবের জুবরিয়া বিন্তি, চলচ্চিত্র নির্মাতা হাসিবুল হক ইমন, চলচ্চিত্র নির্মাতা আবিদ হোসাইন খান, চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহ পরান ও চলচ্চিত্র নির্মাতা আবিদুল ইসলাম অমিত।