তারেক মাহমুদ
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০৫:১৯ পিএম
তারেক মাহমুদ।
আমাদের দেশে বিভিন্ন বয়সী প্রচুর মেধাবী মানুষ আছেন, যারা অনেক সৃজনশীল। কিন্তু প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তারা অকালেই ঝরে যান। তাদের মূল্যায়ন ও সহযোগিতা দরকার। অনেক সময় একজন ক্রিয়েটিভ মানুষের একটি সাধারণ কাজও রাষ্ট্র এবং জাতির জন্য মঙ্গলময় হতে পারে। একজন চলচ্চিত্রকার যখন সিনেমা বানান, একজন কবি যখন কবিতা লেখেন, এভাবে একজন চিত্রকর যখন ছবি আঁকেন বা নাট্যকার যখন একটি নাটক লেখেন তখন সেসব কিছুই হয়ে ওঠে জাতীয় সম্পদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনেক কষ্ট, লাঞ্ছনা, সামাজিক-পারিবারিক অবহেলা সহ্য করেই তাদের এসব সৃষ্টি করতে হয়। এই কাজের সঙ্গে যদি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার যোগ থাকে তাহলে নিশ্চিতভাবেই সেইসব প্রতিভাবান স্বাপ্নিক চোখগুলো আরও ঝলমলিয়ে উঠবে দেশ ও সমাজের জন্য।
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় তারা প্রতিভাকে ব্যবহার করেছে। প্রতিভাবানদের অনেক পাগলামো সহ্য করেও তাদের মূল্যায়ন করেছে। যার ফলাফলও তারা পেয়েছে। সৃষ্টিশীলরাও যে একটা জাতীয় সম্পদ, তা অনেক দেশ ইতিমধ্যে দেখিয়ে দিয়েছে। আমেরিকার কথাই যদি বলি তাহলে দেখতে পাই- কি নেই সেখানে। পৃথিবীর প্রায় আশি ভাগ ইন্টেলেকচুয়াল প্রপারটিজের মালিক যুক্তরাষ্ট্র। সারা দুনিয়া প্রযুক্তির জন্যে তাদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। দুনিয়া কাঁপানো গায়ক, সিনেমা, অভিনেতা, এথলেট তাদের। আর এগুলোর সবই সম্ভব হয়েছে প্রতিভার যথাযথ মূল্যায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতার কারণে।
কয়েকদিন আগে একটি খবর পড়ে খুবই আনন্দ লাগল। বিষয়টি রানু মণ্ডল আর হিমেশ রেশামিয়ার। হিমেশ রাস্তা থেকে তুলে রানু মণ্ডলকে নিয়ে গেছেন বলিউডে, গান গাইয়েছেন। রানু মণ্ডল এখন বলিউড ইন্ড্রাস্ট্রির প্লে-ব্যাক সিঙ্গার। কিন্তু আমরা রানু মণ্ডলকে পেলে কি করতাম? হয়তো তাকে একটা শাড়ি দেয়া হতো, হাতে রুটি কলা দিয়ে দাতারা সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়াতে দিয়ে প্রচার করতো তারা কতটা মানবিক।
তবে আমি শুধু শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-সংগীত-চলচ্চিত্রের কথাই বলছি না। এরা তো আছেনই। এর বাইরেও আছেন। কয়েকদিন আগে দেখলাম দূর মফস্বলে গ্যারেজে কাজ করা একটি ছেলে একটি গাড়ি নির্মাণ করেছেন সম্পূর্ণ নিজের আইডিয়ায়। এর আগে দেখেছি ছোট্ট একটি প্লেন বানিয়েছেন একজন। এই গাড়ি নির্মাতা ছেলেটি অথবা যে ছেলেটি প্লেন বানিয়েছে তাদের পাশে যদি রাষ্ট্র এগিয়ে আসত, সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হতো, তাহলে তারাও হয়তো হয়ে উঠতে পারতেন আমাদের অনেক বড় একটি সম্পদ। তাদের ঘিরেই হয়তো নির্মাণ হতো এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত। এভাবে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়েও অনেকে এগিয়ে আছেন। নতুন নতুন বিজনেস আইডিয়াগুলোও অসাধারণ। খেলাধুলাতে তো আছেই। দরকার শুধু এদের পৃষ্ঠপোষকতা করা। এই পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অনেক প্রতিভার অকাল মৃত্যু হচ্ছে, অনেকে আবার হতাশ হয়ে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন। সেখানে তারা অনেক ভালো কাজ করে তাদের সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। এটা খুব লজ্জার। নিজের মায়ের কাছে যদি সন্তান আদর না পায় তাহলে সৎ মা হবে তার ভরসা। যা কাম্য নয়।
সবচেয়ে বড় কষ্টের বিষয় মেধা পাচার হয়ে যাওয়া। এটা কোনোভাবেই হতে দেওয়া যায় না। এই মেধাবীদের পাশে রাষ্ট্রকে দাঁড়াতে হবে। অবহেলা নয়, যথাযথ সহযোগিতা করে তাদের এদেশের সম্পদ হিসেবে বিকাশের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। সেটাই হবে দেশের জন্য অনেক বড় কাজ।
লেখক: তারেক মাহমুদ
কবি ও চিত্রনির্মাতা