খাদ্যে মাথাপিছু ব্যয় বাড়াতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করুন

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০১৯, ০৬:৫০ পিএম

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় জরিপের তথ্য অনুযায়ী দৈনিক তিন বেলার জন্য মাথাপিছু ৬০ টাকা খরচ করতে পারে এ দেশের মানুষ। অর্থাৎ এক বেলায় খাবারের জন্য খরচ হয় ২০ টাকা। বিশ্বে ‘অতি ধনী’ মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে যে বাংলাদেশে, সেখানে মাথাপিছু খাবারের জন্য এই ন্যূনতম খরচের তথ্য আমাদের বিস্মিত করে। কারণ, অতি ধনী বলে তাদেরই বিবেচনা করা হয়, যাদের সম্পদের পরিমাণ বাংলাদেশি ২৫০ কোটি টাকার বেশি।

বিশ্বজুড়ে সম্পদ তৈরি হচ্ছে, কিন্তু সেই সঙ্গে সমাজে বৈষম্যও দিন দিন বাড়ছে। এই বৈষম্য এখন এতটাই বেশি যে, বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি সম্পদ মাত্র আটজনের হাতে রয়েছে। বাংলাদেশেও হঠাৎ করে কিছু লোক অবিশ্বাস্য সম্পদের মালিক হয়েছেন। এর মূলে আছে তাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রাপ্তি। কোনো দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত হলে এবং জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বাড়লে ধনকুবেরের সংখ্যা বাড়তেই পারে; কিন্তু সেটা যদি আয়-বৈষম্যকে প্রকট করে তোলে, তবে তা অবশ্যই উদ্বেগের কারণ।

বিবিএসের সাম্প্রতিক এই জরিপ অনুযায়ী, মাসে ৪-৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিবার খাদ্যের জন্য গড়ে ৭ হাজার ৩৫৪ টাকা খরচ করে। বলাবাহুল্য বাজারে খাদ্যের যা দাম, তাতে এই টাকায় শুধু ভাত ও সবজি হয়তো খাওয়া যাবে; কিন্তু দৈনিকের পুষ্টির চাহিদা যে মিটবে না, এ তথ্যের জন্য গবেষণার প্রয়োজন নেই। এখানে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, জীবনযাত্রার ব্যয়। আর ব্যয় বৃদ্ধির এই নিষ্পেষণের ফলে খরচের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে ভাঙছে পরিবার ব্যবস্থা, সংসার, বন্ধ হচ্ছে সন্তানের পড়ালেখা, বাড়ছে পুষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা, অপরাধ, ছিন্নমূল মানুষ ও পারিবারিক কলহ।

ধনী-গরিবের মধ্যেকার এই বৈষম্য বৃদ্ধি টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একটি বড় বাধা। তাই সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে এ বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে। দেশে অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি না থাকায় সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীই মূলত সব সুবিধা গ্রহণ করে। এ ব্যবস্থার অবসান জরুরি। দারিদ্র্য দূরীকরণে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার সুফল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

সম্পাদকীয়,
সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল, ০৭ নভেম্বর।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh