ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ১২:১৮ পিএম | আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ০৪:২৪ পিএম
ভারতের আলোচিত বাবরি মসজিদের বিরোধপূর্ণ জমি রামজন্মভূমি ট্রাস্টকে হস্তান্তরে নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। নতুন একটি মসজিদ নির্মাণে বিকল্প কোনো জমি বরাদ্দের নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে জানানো হয়, দেশটির প্রধান বিচারক রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ সর্বসম্মতির ভিত্তিতে শনিবার (৯ নভেম্বর) এ রায় দিয়েছেন।
প্রধান বিচারপতি ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের এই বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি এসএ বোবদে, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ এবং এস আব্দুল নাজির।
রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, অযোদ্ধার বিতর্কিত রাম মন্দির-বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির নির্মিত হবে; বিকল্প হিসেবে বাবরি মসজিদ নির্মাণের জন্য মুসলিম ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি অন্যত্র প্রদান করা হবে।
রায় পড়ার সময় প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে জমির মালিকানা ঠিক করা সম্ভব নয়। কাঠামো থেকে কোনো কিছুর মালিকানা দাবি করা যায় না। কারো বিশ্বাস যেন অন্যের অধিকার হরণ না হয়।
তিনি বলেন, ভারতের প্রত্মতাত্ত্বিক সংস্থা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার খননের ফলে যে সব জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে, তাতে স্পষ্ট, সেগুলো ইসলামিক নয়। প্রায় আধা ঘণ্টা সময় ধরে কয়েক দশকের পুরোনো এই মামলায় রায় পড়ে শোনান বিচারপতি গগৈ। এ সময় তিনি বলেন, যে রায় ঘোষণা করা হলো; তা বিচারক বেঞ্চের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২০ অক্টোবর থেকে অযোধ্যা শহরে জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। কাল রবিবার থেকে শহরে জারি হচ্ছে কারফিউ।
রায় ঘোষণার আগে শান্ত থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
রায় ঘোষণার আগে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বাবরি মসজিদ যেখানে অবস্থিত, সেই উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় মোতায়েন করা হয়েছে আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশের পাঁচ হাজারের বেশি সদস্য।
রায় ঘোষণার আগ দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের সব রাজ্যে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে। উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা শহর এখন নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। গত ২০ অক্টোবর থেকে অযোধ্যা শহরে জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। ১০ নভেম্বর থেকে এই শহরে জারি হচ্ছে কারফিউ।
বাবরি মসজিদ আর রাম জন্মভূমি নিয়ে বিতর্ক কয়েক শতাব্দী ধরে। এ নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বারে বারে দাঙ্গা হয়েছে।
ব্রিটিশ সরকার ভেতরের অংশটা মুসলিমদের আর বাইরে চত্বরটা হিন্দুদের ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু ১৯৪৯ সালে মসজিদের ভেতরে কে বা কারা রামের মূর্তি রেখে দেয়। মুসলিমরা তখনই প্রতিবাদ করেন এবং সরকার জমিটিকে বিতর্কিত ঘোষণা করে তালা বন্ধ করে দেয়।
জমির মালিকানা কার সেটা ঠিক করতে সে বছরই আদালতে প্রথম মামলা হয়। এরপর ফৈজাবাদের জেলা আদালত ১৯৮৬ সালে তালা খুলে হিন্দুদের পূজার অনুমতি দেন। আর তখন থেকেই রামজন্মভূমি আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। অন্যদিকে মামলাও চলতে থাকে।
২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় যে বিতর্কিত জমিটি তিনভাগ হবে- দুভাগ পাবেন হিন্দুরা আর এক ভাগ পাবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। তার বিরুদ্ধে সবপক্ষই সুপ্রিম কোর্টে যায় ২০১১ সালে। সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বাইরে সব পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা ব্যর্থ হওয়ায় মামলাটি বিশেষ বেঞ্চ শুনানি শুরু করে। একটানা ৪০ দিন শুনানি হওয়ার পরে রায় লেখার জন্য মাসখানেক সময় নেয় বেঞ্চ।