নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ০২:৪৬ পিএম | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:৪৬ এএম
বুয়েট মিলনায়তনে শপথ অনুষ্ঠান হয়। ছবি: সংগৃহীত
সব ধরনের সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি রুখে দেয়ার শপথ নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের আপাতত সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে।
বুয়েট মিলনায়তনে আজ বুধবার বেলা সোয়া ১টার দিকে এই শপথ অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বুয়েটের উপাচার্য, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও হলের প্রভোস্টরা শপথ নেন। তবে শিক্ষকেরা মিলনায়তনে উপস্থিত থাকলেও শপথে অংশ নেননি।
শপথ নেওয়ার জন্য বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা মিলনায়তনে জড়ো হতে থাকেন। বেলা সোয়া ১টার দিকে শপথ অনুষ্ঠান হয়। শপথ শুরুর আগে বুয়েটের নিহত শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর শপথ পড়ান বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের ছাত্রী রাফিয়া রিজওয়ানা।
শপথে বলা হয়, ‘আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, আজ এই মুহূর্ত থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার কল্যাণ ও নিরাপত্তার নিমিত্তে আমার ওপর অর্পিত ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক, নৈতিক ও মানবিক সব প্রকার দায়িত্ব সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় আমার জ্ঞাতসারে হওয়া প্রত্যেক অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমি সর্বদা সোচ্চার থাকব। আমি আরো প্রতিজ্ঞা করছি যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সব প্রকার সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থানকে আমরা সম্মিলিতভাবে রুখে দেবো। নৈতিকতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সব ধরনের বৈষম্যমূলক অপসংস্কৃতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার আমরা সমূলে উৎপাটিত করব। এই আঙ্গিনায় আর যেন কোনো নিষ্পাপ প্রাণ ঝড়ে না যায়। আর কোনো নিরাপরাধ শিক্ষার্থী যেন অত্যাচারের শিকার না হয়। তা আমরা সবাই মিলে নিশ্চিত করবো।’
বুয়েট শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের এই কর্মসূচিটি বাইরে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার আশঙ্কায় পরে তা মিলনায়তনে করার সিদ্ধান্ত হয়।
শপথ গ্রহণ শেষে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ধন্যবাদ জানাতে চাই বুয়েট প্রশাসনকে। আমাদের দাবিগুলো মেনে নিয়ে বাস্তবায়নের দিকে যাওয়ার জন্য। আজকে শপথের মাধ্যমে মাঠের আন্দোলন শেষ হলেও ১০ দফা দাবির বিষয়ে আমাদের পর্যবেক্ষেণ চলবে।’
শপথ অনুষ্ঠান শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, চার্জশিট হওয়ার পর অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার না করা পর্যন্ত কোনো অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না তারা। এ বিষয়ে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষায় বর্জন করে সময় নষ্ট না করার আহ্বান জানান।
গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। এরপর থেকেই আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। ভর্তি পরীক্ষার কারণে ১৩ ও ১৪ অক্টোবর আন্দোলন শিথিল থাকার পর গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে আবার বুয়েট ক্যাম্পাসে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচি শিথিলের পর অবশ্য গতকাল কোনো মিছিল-সমাবেশ হয়নি। বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার সামনে দাবি বাস্তবায়ন পরিস্থিতি ও আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ৩টার দিকে বুয়েটের ভারপ্রাপ্ত ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল বাসিতের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা।
পরে আবারো নিজেদের মধ্যে আলোচনা শেষে বুয়েট শহীদ মিনারে নিজেদের অবস্থান জানান শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের ধরনে তারা পরিবর্তন আনেন।
তারা জানান, দিনভর স্লোগান-বিক্ষোভের মতো মাঠের প্রতিবাদী কর্মসূচিতে আপাতত আর যাচ্ছেন না তারা। তবে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে যাদের নাম আসবে, তাদের সবাইকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার না করা পর্যন্ত কোনো ধরনের একাডেমিক (ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম) কার্যক্রমে অংশ নেবেন না আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মাঠের আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটবে গণশপথ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে।