সরকারের কাছে জনগণের চেয়ে প্রবৃদ্ধির মূল্য বেশি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকে যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব জোর করে নিয়েছেন, তারা জনগণকে কোনো মূল্য দেন না, তাদের কাছে অনেক বেশি মূল্য হচ্ছে ব্যবসার, তাদের কাছে অনেক বেশি মূল্য হচ্ছে তাদের সো-কলড প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর। কোনটাই বাড়বে না, সব কিছু নিচে নেমে যাচ্ছে এবং ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাচ্ছে। এই অবস্থায় তারা তৈরি করেছে, এই দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।’

বুধবার (৩ জুন) নাগরিক ঐক্যের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।

সরকারি ছুটি তুলে নেয়ার সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘সরকার যে টেকনিক্যাল কমিটি করে দিয়েছে সেই কমিটি বলছে যে, এই মুহূর্তে সরকারি ছুটি তুলে নেয়াটা একটা বিপজ্জনক অবস্থা হবে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর যিনি ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. আবদুল্লাহ সাহেব তিনিও বলেছেন যে, এটা খুব ভুল সিদ্ধান্ত হচ্ছে, এটা একটা সুইসাইডাল সিদ্ধান্ত।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা কার কাছে কী বলব? কোথায় যাবেন আপনারা? এ দেশের মানুষ কার কাছে যাবে? এ দেশের প্রতিটি মানুষ আজকে আতঙ্কে আছে। আমি জানি না, এখান থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসবেন সরকার বা এ দেশের মানুষ কীভাবে বেরিয়ে আসবে। সমগ্র বিশ্ব যখন এই সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। কারণ এখন পর্যন্ত কোনো ওষুধ ও ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি এবং হওয়াও ডিফিকাল্ট।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এর মধ্যে আন্তরিকতার মধ্য দিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেয়া হতো তাহলে হয়ত আমরা এই অবস্থার সম্মুখীন নাও হতে পারতাম। দুর্ভাগ্য আমাদের যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব জোর করে নিয়েছেন, তারা জনগণকে মূল্য দেন না। তাদের কাছে অনেক বেশি মূল্য হচ্ছে ব্যবসার।’

তিনি বলেন, ‘আমার মনে পড়ছে, অনেক আগের কথা, ১৯৭৪ সালে ঠিক একইভাবে সেদিন অবহেলা করা হয়েছিল সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ফলে কী হয়েছিল খাদ্য থাকা সত্ত্বেও চরম দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তৎকালীন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম সাহেব সমিতির প্রথম অধিবেশনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে সামনে বসিয়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশ তীব্র গতিতে রসাতলে যাচ্ছে। আজকেও বাংলাদেশ রসাতলের দিকে যাচ্ছে। এখান থেকে টেনে তোলার দায়িত্ব সবার। সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে না, উদ্যোগ নেয়ার মতো তাদের সেই মানসিকতাও নেই। জনগণকে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আজকে যেসব জায়গায় চিকিৎসার কথা বলা হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে সেখানে চিকিৎসা হচ্ছে না। আমরা বলেছি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে গেছে, ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। এটা এখন নামে মাত্র টিকে আছে। প্রথম দিকেই সব কিছু এলোমেলো করে ফেলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ডাক্তারদের তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য যেসব কিটস, ইক্যুইপমেন্ট দরকার সেই সব ইক্যুইপমেন্ট সরবরাহ করা হয়নি। শুধু সরবরাহই করা হয়নি, এগুলো নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে, মাত্র কয়েকদিন আগে কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের পরিচালক বললেন, অত্যন্ত শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে এই ব্যবসা করার জন্য, প্রকৃতপক্ষে তাই হয়েছে। এই চরম দুর্যোগে, চরম দুর্দিনে এটা একটা বড় বাণিজ্য হয়েছে, ব্যবসা হয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে। ফলে আজকে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ তারা শুধুমাত্র আল্লাহ কি করবেন, আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখবেন- এই বিশ্বাস ছাড়া তাদের কাছে আর কিছু নেই।’

নাগরিক ঐক্যের অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা হয়।

সংগঠনের সমন্বয়কারী শহীদুল্লাহ কায়সারের পরিচালনায় আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ইন্টারেনেটের মাধ্যমে জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রব, গণফোরামের সাবেক নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও গণসংহতির প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকীও বক্তব্য দেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //