লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা দরকার

নভেল করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার হয়নি। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। অথচ বাংলাদেশে যে সময় ক্রমেই বাড়ছে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা, ঠিক সেই সময় তৈরি পোশাক কারখানাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে, হোটেল রেস্তোরাঁয় ইফতারি বিক্রির অনুমোদন দেয়া হয়েছে, ১০ মে থেকে শপিংমল, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোও খুলছে, যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল বেড়েছে, সড়কপথে, ফেরিতে এমনকি ট্রলারে করেও নদী পার হচ্ছেন হাজার হাজার শ্রমিক। 

দেশে যখন ৫-৬ জন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছিল তখন সাধারণ ছুটি ঘোষণার নামে লকডাউন করা হয়; কিন্তু এখন যখন প্রতিদিন প্রায় ৬-৭শ’ লোকের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেই সময়ে লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত বিস্ময়কর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) লকডাউন শিথিল করার জন্য যে ছয়টি শর্ত রয়েছে বাংলাদেশ তার একটি শর্তও পূরণ করতে পারেনি। এমনকি প্রথম শর্তটিই হলো, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে এ রকম নজির থাকতে হবে, অথচ বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হার ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় লকডাউন শিথিলের যুক্তি কি?

স্বাস্থ্য অধিদফতরের জনস্বাস্থ্যবিদদের পর্যালোচনা অনুযায়ী, সংক্রমণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মে মাসে ৪৮ থেকে ৫০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। সংক্রমণ পরিস্থিতি আরো মারাত্মক হলে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বেড়ে এক লাখে পৌঁছাতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রায় দুই হাজার মানুষ প্রাণ হারাতে পারেন। তারা বলছেন, পুরো মে মাস আমাদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আরো কিছুদিন লকডাউন কার্যকর করার ব্যাপারটি সরকারকে পুনর্বিবেচনা করার কথাও বলেছেন তারা।

মনে রাখা দরকার, মানুষ বাঁচলেই অর্থনীতি বাঁচবে। করোনার সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ বিশ্বের প্রায় সব দেশ। মানুষের জীবন বাঁচানোর এই লড়াইয়ে অধিকাংশ দেশেই এখন ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোপুরি বন্ধ। বিপর্যয় কেটে গেলে আবার যখন সব দেশ ব্যবসা-বাণিজ্যে ফিরতে শুরু করবে, এই ক্ষতি হয়তো পুষিয়ে নেয়া যাবে; কিন্তু এভাবে বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকলে গত এক মাস লকডাউন মেনে সাধারণ মানুষ যে কষ্ট করেছে, তার সুফল পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাই অন্তত মে মাস পর্যন্ত লকডাউন জারি রাখা দরকার। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে তা নিয়ন্ত্রণের সামর্থ্য আমাদের আছে কি না, সেটাও ভাবতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //