কোভিড-১৯: সবচেয়ে বিপদাপন্ন কারা?

যারা বয়বৃদ্ধ, যাদের হৃদরোগ, কিডনি/লাংস দুর্বল, যাদের ডায়েবেটিস বা হাপানী আছে, যারা ধুমপায়ী এবং যারা অন্য কোন অসুখে ভুগছেন।

এটা বাংলাদেশ, আমরা আমাদের বৃদ্ধ বাবা-মা, দাদা-দাদিকে আলাদা রাখিনা, আমরা সবাই মিলেমিশেই থাকি। স্কুল-কলেজ, সরকারী-বেসরকারী অফিস ও মার্কেট বন্ধ, তাই  দেশের বড় অংশ মানুষ এখন বাসাতেই থাকছেন। তাই, আসুন আমরা নিজ নিজ পরিবারের সবচেয়ে বিপদাপন্ন আপনজনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি।

বয়বৃদ্ধ বা অসুস্থদের বাইরে যাওয়া বন্ধ করি। নামাজ নিজের ঘরের আদায় করুক সবাই। এ ব্যাপারে আলেম ও ইমামদের উদ্যোগি হতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশে “ঘরে নামাজ আদায় করুণ” বলে আজান দেয়া হচ্ছে। আমাদের ইমামগন কেন সেটা বলবেন না?

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা এক্ষেত্রে একই কাজ করুণ, ঘরে বসেই পুজা-আর্চনা, প্রার্থনা করুণ, বাইরে একমাস না গেলে যদি, জীবন বাঁচে তাহলে না গেলাম। বেঁচে থাকলে অনেক প্রার্থনা করার সময় পাবেন, বয়বৃদ্ধদের বুঝান শিশু মনে করে।

তরুণ/যুবা যারা বাইরে যাবেন, যেতে বাধ্য হচ্ছেন, তারা ফিরে এসে চটজলদি হাত ধুয়ে নিন, বাসার কোনকিছু স্পর্শ করার আগেই।

জুতা বাইরে খুলে রাখুন। বাইরের কাপড় না বদলে বয়বৃদ্ধ/অসুস্থদের স্পর্শ করবেন না। বাজার থেকে আনা ব্যাগ সাথে সাথে ধুয়ে ফেলুন সাবান পানি দিয়ে। না ধুয়ে সেই ব্যাগ অন্য কোন কাজে লাগাবেন না, কোথাও রেখেও দিবেন না।

কাঁচা বাজার এনে ঘরের এক কোনে রেখে দিতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। এই জীবাণু মানুষের শরির ছাড়া কোথাও ৩ দিনের বেশি বাঁচেনা, তাই ৩ দিন স্পর্শ না করে রেখে দিতে পারলেই সেটা জিবাণুমুক্ত হবে, অথবা সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে।

করোনাভাইরাস একজন আক্রান্ত ব্যক্তির নাক আর মুখ দিয়ে বের হয়, কিন্তু সেটা যেখানে পড়ে, সেখানে ৩ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকে। তাই আপনি কোন অক্রান্ত মানুষের সাক্ষাত না পেলেও তার ফেলে যাওয়া ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন।

বাইরে থেকে আনা কোন জিনিস আপনার পরিবারের বয়বৃদ্ধ/অসুস্থ্য সজনদের স্পর্শ করতে দিবেন না। হয় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে বা ৩দিন ফেলে রেখে তারপর স্পর্শ করলে ভাইরাস তাদের আক্রান্ত করতে পারবে না।

এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবার সাথে সাথে যদি টের পাওয়া যেত, যদি লক্ষণগুলো দেখা যেত, তাহলে এত বিপদ হত না, এতো ছড়াতো না। দুঃখের বিষয়, আক্রান্ত হবার ২ থেকে ১৪ দিন পরে লক্ষণগুলো দেখা দেয়। তাই আপনি যার সাথে কথা বলছেন তিনি আক্রান্ত কিনা সেটা টের পাচ্ছেন না, উনি নিজেও টের পাচ্ছেন না।

আক্রান্ত ব্যক্তি না জেনেই নিঃশ্বাসের মাধ্যমে সরাসরি আপনার নাকে বা এখানে-সেখানে এই ভাইরাস ছড়িয়ে রেখে যাচ্ছেন। কিছু না জেনেই আপনি এই ভাইরাস স্পর্শ করছেন যখন আপনি বাইরে যাচ্ছেন।

নিজের অজান্তেই নিজের নাক-মুখ স্পর্শ করে নিজের শরীরে ভাইরাসটা ঢুকাচ্ছেন। আপনি হয়ত অসুস্থ্য হবেন না, হলেও সহজে কাবু হবেন না, হলেও প্রাণশক্তির বলে বেঁচে যাবেন। কিন্তু বয়বৃদ্ধ/অসুস্থ্য মানুষগুলো টিকবেন না! তাই তাদের বাঁচাতে তাদের চারপাশে একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরী করুণ। তাদের সাথে কথা বলুন অন্ততঃ ৬ ফিট দূর থেকে। স্পর্শ করবেন না। বাইরে থেকে আনা কোন কিছু তাদেরকে স্পর্শ করতে দিবেন না। 

কল-কারখানাগুলো এখনই বন্ধ করা দরকার। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ঝুঁকির মধ্যে কাজে যাচ্ছেন। তাদের পরিবারের সব মানুষগুলো এই ভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে আছেন। কল-কারখানাগুলো চালু আছে বলে সেখানে সরবরাহ, পরিবহন, সেবা আর শ্রমিক-কর্মচারিদের যাতায়তের পথে আরো হাজার হাজার মানুষ কাজে যাচ্ছেন, তাদের সবার পরিবারের সদস্যরাও ঝুঁকিতে আছেন।

কল-কারখানাগুলো খোলা আছে বলে ব্যাংকও খোলা আছে, সেখানে কর্মরত মানুষগুলো আর তাদের পরিবারের মানুষগুলোও ঝুঁকিতে আছেন। কিসের জন্য? বাণিজ্যের জন্য? একমাস এই বাণিজ্য বন্ধ থাকলে কত টাকার ক্ষতি হবে? কয়েক হাজার কোটি? কিন্তু সেটা কি কয়েক কোটি মানুষের জীবননের ঝুঁকির চেয়ে বেশি?

ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, সেনা, অগ্নিনির্বাপক আর অন্য যারা সেবা কাজে নিয়োজিত আছেন, তাঁরা ঝুঁকি নিচ্ছেন অন্যদের বাঁচাতে। মানুষের জান বাঁচাতে। কিন্তু বাণিজ্য বাঁচানোর জন্য কয়েক কোটি মানুষের জান ঝুঁকিতে ফেলা তো সম্পুর্ণ তার বিপরীত!

ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করুণ।

লেখক: নাসের শওকত হায়দার
একটা হিউম্যানিটারিয়ান প্রতিষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //