টনি ডায়েস বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা। দশ বছর ধরে দেশের বাইরে বসবাস করছেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে। প্রবাসে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। পরিচালনা করছেন একটি সাংস্কৃতিক একাডেমিও। দীর্ঘ প্রবাসজীবন, অভিনয়, পারিবারিক জীবন ইত্যাদি নিয়ে সম্প্রতি টনি ডায়েসের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেছেন মাহমুদ সালেহীন...
ভিনদেশে কেমন কাটছে স্ত্রী সন্তান নিয়ে?
টনি ডায়েস: ভিনদেশ আমেরিকা আসলে এটাই আমাদের দেশ এখন। আমার নতুন নিবাস। শূন্য থেকে শুরু করা। একটু একটু করে আমেরিকাতে আমরা নিজেদের গোছাচ্ছি। এখানে সব কিছু নিয়মের মধ্যে চলে।
এখন প্রফেশনালি কী করছেন?
টনি ডায়েস: আমি প্রফেশনালি আমেরিকান হোন্ডাতে আছি। এটা একটা ডিলারশিপ প্রতিষ্ঠান। এখানে আমি প্রিয়ন ডিপার্টমেন্টে সার্টিফাইড ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছি। হিলসাইট হোন্ডা আমেরিকার শীর্ষ ১০টি গাড়ি ডিলারশিপের একটি।
যুক্তরাষ্ট্রের কোথায় আছেন? ওখানে কতদিন হলো?
টনি ডায়েস: আমি নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ড নামের একটা জায়গায় থাকি। সেটা আটলান্টিকের পাড়ে। এখানে প্রায় দশ বছর হলো।
এবারের ফোবানা নিউ ইয়র্কে দুটি হলো, আপনাদের উপস্থিতি তো দেখলাম না?
টনি ডায়েস: আমরা সবার ফোবানার সঙ্গেই থাকতে চাই। ফোবানা নিয়ে আমেরিকায় দর্শক, বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে বেশ আগ্রহ থাকে। সবাই একসঙ্গে দুটি দিন কাটাতে চায়। একটা সুন্দর মিলন মেলায় পরিণত হয়। এবারের দুটি ফোবানা একই শহরে হওয়াতে সাধারণ দর্শকরা বেশ বিভ্রান্তিতে ছিলেন। অনেকেই বলেছেন দুটি ফোবানাতেই সংস্কৃতিকর্মী ছাড়া হয়েছে। সাধারণ দর্শকের উপস্থিতি তেমন ছিল না। বড় মিলনায়তনে আয়োজন করা মানেই কিন্তু সব শ্রেণির দর্শককে আনার চেষ্টা করতে হবে। না পারলে অনুষ্ঠানের সফলতা আসেবে না। প্রথম দিকে প্রচারণায় যেসব শিল্পী ছিল, ভিসা না পাওয়াতে বেশির ভাগ শিল্পীই আসতে পারেনি। নিউ ইয়র্কে অনেক শিল্পী ভালো আছেন, যাদের আয়োজকরা ভালো বলতে চান না। ব্যাপারটা অনেকটা ঘরের মানুষকে স্বীকৃতি না দেওয়ার মতো। আমার কাছে মনে হয়েছে ব্যক্তিগত ইগো, দ্বন্দ্ব সমস্যাটা এখানে খুব প্রকট। ভালো সংগঠক হতে হলে এই ইগোকে ঝেড়ে ফেলে এগিয়ে এলে সব কিছুই সুন্দরভাবে করাটা খুব সহজ হয়ে যায়।
প্রিয়া ডায়েসের সঙ্গে কীভাবে পরিচয় হলো?
টনি ডায়েস: আসলে প্রিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় আমার মায়ের। মা আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। দুই পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হয় ২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেটাইস ডেতে।
আপনার স্ত্রী প্রিয়া তো নৃত্যশিল্পী। সংসার সামলানোর পর কি এখনো তিনি নাচে সময় দেন?
টনি ডায়েস: হ্যাঁ, প্রিয়া খুব ভালো নৃত্যশিল্পী। ছোটবেলা থেকেই সে নাচত। আমারও নাচের প্রতি একটা দুর্বলতা আছে সবসময়। আমি নাচকে ভালোবাসি। তাই নৃত্যশিল্পীদের প্রতিও আমার শ্রদ্ধাবোধ আছে। বাংলাদেশে থাকাকালে প্রিয়া নাচের পাশাপাশি উপস্থাপনাও করত। বেশকিছু নাটকেও অভিনয় করেছিল। বিয়ের পর আমি তাকে সবসময় বলেছি, নাচটা ছেড় না কখনো। আমেরিকাতে আসার পর এখনো নাচটা কন্টিনিউ করছে। আমাদের বাসায় নাচের স্কুল আছে। ছোট ছোট শিশুরা তার কাছে নাচ শিখতে আসে।
শৈশব-কৈশোরের মজার স্মৃতি শুনতে চাই।
টনি ডায়েস: আমাদের শৈশব কিন্তু এখনকার ছেলেমেয়েদের মতো নয়। এখনকার ছেলেমেয়েরা বাসায় থাকে। কম্পিউটার আর মোবাইলে গেমস খেলে সময় কাটায় স্কুল থেকে ফিরে। আমরা স্কুল থেকে বাড়ি গিয়েই বাইরে চলে যেতাম। আগে আমাদের বাবা-মায়েরা বলতো বাড়ি থাক বাড়ি থাক, বাইরে যাস না। আর এখনকার বাবা-মায়েরা বলে বাইরে যা, বাইরে যা- এরকম ব্যাপার। আমার শৈশব কেটেছে মোহাম্মদপুরে। কাজী নজরুল ইসলাম রোডে। তখন আমরা আবাহনী মাঠে খেলা দেখতে যেতাম প্রায় প্রতিদিন। চুন্নু ভাই, সালাউদ্দীন ভাইয়ের খেলা দেখতে খুব ভালো লাগত। এই স্মৃতিটাই খুব ভালো করে মনে আছে।
অভিনয়কে কেন বিদায় জানালেন?
টনি ডায়েস: আসলে আমি অভিনয়কে বিদায় জানাইনি। অভিনয় করতে চাই। ভালো সুযোগের অপেক্ষায় আছি। আমাদের কাছে দর্শকদের চাওয়া-পাওয়া আছে। এখন দায়সারাভাবে কাজ করার পক্ষে আমি নই। দেশে থাকলে হয়তো বেছে বেছে কাজ করতাম । যেহেতু আমেরিকায় এসেছি। এখানে নিজেকে গোছাচ্ছি। দুই নৌকাতে তো আসলে পা দেওয়া যায় না। তাই হয়তো অভিনয় থেকে সাময়িকভাবে দূরে আছি। আমি সবাকেই উৎসাহিত করি। নিউ ইয়র্কে খুব ভালো সুযোগ আছে অভিনয় করার।
একজন টনি ডায়েস হয়ে ওঠার গল্পটা শুনতে চাই।
টনি ডায়েস: একজন অভিনেতার নামটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে অনেক অভিনয় শিল্পী আছেন, সঙ্গীতশিল্পী আছেন, যারা দুই শব্দের নাম ব্যবহার করেন। আমাকে কেউ টনি বলেও ডাকে না। ডায়েস বলেও ডাকে না। টনি ডায়েস বলে। শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর সব দেশের বুদ্ধিজীবী, সেলিব্রেটিরা দুই শব্দের নাম ব্যবহার করেন। এটা আসলে নতুন প্রজন্মের শেখার একটা বিষয়। আবার জানারও বিষয়।
কোনো অভিমান নিয়ে দেশ ছেড়েছেন কিনা?
টনি ডায়েস: না কোনো অভিমান নয়। আমার আর প্রিয়ার পরিবারের প্রায় সবাই আমেরিকাতে থাকে। জীবনতো একটাই। জীবনে আসা সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে হয়। আমি সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়েছি বলে মনে করি। খুব সুন্দর একটি দেশ। পরিচ্ছন্ন দেশ। বাংলাদেশ তো আমাদের শেকড়। আমার জন্মভূমি। আমার প্রাণ। মাতৃভূমির সঙ্গে কোনো অভিমান করতে নেই।
বাংলাদেশের দর্শকরা টনি ডায়েসকে তো মিস করে?
টনি ডায়েস: আমি আসলে খুব সৌভাগ্যবান। এখনো দর্শকদের ভালোবাসা পাচ্ছি। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে এখন পৃথিবী অনেক ছোট হয়ে গেছে। ফেসবুকে টুইটারে আমার দেশের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে প্রতিদিনই। আমার কোনো মন্তব্য বা ছবি পোস্ট দিলে তারা আমাকে উইশ করে, তখন আমি সত্যিই অভিভূত হই।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh