করোনা মোকাবিলায় ১২.১১ বিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণার কারণে জনগণের দুর্ভোগ হ্রাসে সরকার এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন খাতে ১২.১১ বিলিয়ন ডলার বা ১,০২,৯৫৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র (পিএমও) এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্রটি বলেছে, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও উৎপাদন ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করতে দেশে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এ পর্যন্ত মোটে ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। আর্থিক দিক দিয়ে যার মোট পরিমাণ ১ লাখ ২ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা, অর্থাৎ যা ১২.১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ও জিডিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।

এতে বলা হয়েছে, রফতানিমুখী শিল্প, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প, কৃষি, মাছ চাষ, হাঁস-মুরগি ও প্রাণিসম্পদসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতকে এই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনা হয়েছে।

প্যাকেজগুলোর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাত সংস্থাগুলোকে কর্মক্ষম মূলধন সুবিধা প্রদানের জন্য সর্বাধিক পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এরপরে ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চলতি মূলধন সরবরাহের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।

সরকার ঘোষিত অন্যান্য প্রণোদনা প্যাকেজ হলো- রফতানিমুখী শিল্পের জন্য বিশেষ তহবিল ৫ হাজার কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) বাড়িয়ে করেছে ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।

এছাড়া রয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট প্রকল্পের মতো প্রণোদনা প্যাকেজ, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ১০০ কোটি টাকার বিশেষ সম্মাননা, ৭৫০ কোটি টাকার স্বাস্থ্যবীমা ও জীবনবীমা এবং ২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকার খাদ্য সামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণ কর্মসূচি সরকার করে ঘোষণা।

সরকার এখন পর্যন্ত ঘোষিত অন্যান্য প্রণোদনা প্যাকেজ হলো ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার কৃষি ভর্তুকি, ৫ হাজার কোটি টাকার সাথে কৃষি পুনঃতফসিলকরণ প্রকল্প, স্বল্প আয়ের পেশাদার কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা পুনঃতফসিল প্রকল্প, প্রতি কেজি ১০ টাকায় চাল বিক্রি করা ২৫১ কোটি টাকা ও লক্ষ্যভিত্তিক সম্প্রদায়ের মধ্যে নগদ বিতরণ ১ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা।

এছাড়াও ভাতা কর্মসূচির আওতা ৮১৫ কোটি টাকা বাড়ানো, গৃহহীন মানুষের জন্য ২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা, বাড়িঘর করতে, বোরো ধান/ধান ক্রয় কার্যক্রম (অতিরিক্ত ২ লাখ টন) ৮৬০ কোটি টাকা ও কৃষিকাজের যান্ত্রিকীকরণের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজসমূহ করোনভাইরাস শুরু হওয়ার পর ২০০ কোটি টাকা ঘোষণা করা হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ মে কভিড-১৯ মহামারীতে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারের মধ্যে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা নগদ অর্থ বিতরণ করেছেন। এই কর্মসূচির আওতায় কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ নিঃস্ব পরিবারের প্রত্যেকে মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) এর মাধ্যমে ঈদের আগে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে পেয়েছেন।

সূত্র জানায়, এই নগদ সহায়তার মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি লোক প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে। কারণ ৫০ লাখ পরিবারে প্রতিটি গড়ে চারজনকে গণনা করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেন, সরকার সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্যও বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা করেছে ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

মহামারির কারণে কর্মহীন যুবক ও প্রবাসীদের সহায়তার জন্য পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনকে মোট আড়াই হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত মূলধন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

কৃষকরা যাতে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পান সে জন্য সরকার ধান ও চাল সংগ্রহ শুরু করেছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, চলতি মৌসুমে সরকার ২২ দশমিক ২৫ লাখ টন খাদ্যশস্য ক্রয় করবে, যা আগের বছরের চেয়ে ২ লাখ টন বেশি। এছাড়াও সরকার কৃষকদের ভর্তুকি মূল্যে কম্বাইন্ড হারভেস্টর ও রিপারস্ যন্ত্র সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে এবং এর জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানান, কভিড-১৯ এর কৃষিক্ষেত্রের ক্ষতি পূরণের জন্য কৃষকদের জন্য মাত্র ৪ শতাংশ সুদে অতিরিক্ত ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, রফতানিমুখী শিল্পের জন্য বিশেষ তহবিলের বিপরীতে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা কার্যকর করা হয়েছে এবং যারা কাজে যোগ দিতে পারেননি তারাও ৬০ শতাংশ বেতন পাচ্ছেন। এই প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে বেতন ও ভাতা প্রদান ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

গত ৩১ মে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংক ঋণ গ্রহীতাদের ১ হাজার ৮৪০ কোটি টাকার ব্যাংক সুদ মওকুফ করতে ১৯তম ও সর্বশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। সর্বশেষ প্যাকেজ ঘোষণার সময় তিনি বলেছিলেন, সরকার ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি হিসেবে সুদ দেবে এবং এতে প্রায় ১ দশমিক ৩৮ কোটি ঋণ গ্রহীতারা সরাসরি উপকৃত হবেন। -বাসস

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //