করোনা আক্রান্ত শিক্ষকদের তালিকা চেয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর

করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত সারা দেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের তালিকা চেয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একইসঙ্গে করোনা আক্রান্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের তথ্য এ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রবিবার অধিদপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে প্রাথমিকের বিভাগীয় উপ-পরিচালকদের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

দেশের আট বিভাগের বিভাগীয় উপ-পরিচালকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, করোনাভাইরাস মহামারিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকরা আক্রান্ত হয়ে থাকলে নির্দিষ্ট ছকে তাদের প্রাত্যাহিক তথ্য অধিদপ্তরে পাঠাতে হবে। বিভাগীয় উপ-পরিচালকরা প্রতিদিন বেলা ২টার মধ্যে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর ই-মেইলে ছকে চাওয়া নির্দিষ্ট তথ্যগুলো পাঠাবেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (সংস্থাপণ) মো. দোলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এ আদেশে আরও জানানো হয়, আক্রান্ত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষকদের তথ্য প্রতিদিন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা দেশে আক্রান্ত শিক্ষকের সংখ্যা সংখ্যা অন্তত শতাধিক। এরই মধ্যে একজন শিক্ষক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। আক্রান্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে অন্তত ১৫জনের অবস্থা মুমূর্ষু। নিজ উদ্যোগেই নানাভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। নিম্ন বেতনের প্রাথমিক শিক্ষকরা কভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বড় ধরণের সংকটে পড়েছেন। পরিবারের সদস্যরাও কেউ কেউ আক্রান্ত হয়েছেন। এর বাইরে মাঠ পর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হবার খবরও মিলেছে।

যেসব শিক্ষকরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত, তাদের বেশিরভাগই নিজের বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন। আর হাসপাতালে ভর্তি আছেন কয়েকজন।

শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন-মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দা নার্গিস আক্তার, নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার শাহিন মিয়া, গাজীপুর জয়দেবপুর পিটিআই'র ইন্সট্রাক্টর দিলারা বেগম, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার উচ্চমান সহকারী ওসমান গণি, সিলেট জৈন্তাপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী শিশাকর কুমার ঘোষ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা বেগম, চাঁদপুর সদরের চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদা আক্তার, কে আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইতি ঠাকুর, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম।

আর সহকারি শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন, কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার বাড়েরা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাইফুল ইসলাম, একই বিদ্যালয়ের ইসরাত জাহান, কাদুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাসুম মিয়া ও তার মা দক্ষিণ ভোমর কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাফুজা বেগম। 

আরও রয়েছেন-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার গজারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সফিকুল ইসলাম, সিলেট দক্ষিণ সুরমা উপজেলার আলমদীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আমেনা বেগম, চট্টগ্রাম সন্দ্বীপ উপজেলার রহমতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লিপি আক্তার, মুন্সিগঞ্জ সিরাজদিখান উপজেলার জৈনসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কামাল হোসেন, বরিশাল সদর উপজেলার কিশোর মজলিশ  সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জাহেদা আক্তার,ঢাকা মহানগরীর ধানমন্ডি থানার আইয়ুব আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাহাবুবা সুলতানা,চাঁদপুর সদর উপজেলার আক্কাছ আলী রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রোজিনা হাবিব।

করোনায় আক্রান্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে সিলেট বিয়ানীবাজার উপজেলার নলবহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র মো. সায়েম এবং মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কামারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র হৃদয়।

জানা গেছে, আক্রান্ত বেশ কিছু শিক্ষক সুস্থ হয়েছেন। তারা হলেন দিনাজপুর ঘোড়াঘাট উপজেলার দক্ষিণ জয়দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উম্মে হানী, নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার লক্ষণখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তানজিনা আক্তার, লালমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রোকেয়া আক্তার, মাধব পাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৃপ্তি রানী।

আক্রান্ত শিক্ষকদের মধ্যে কুমিল্লার বাড়েরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। ৯ থেমে ১২ মে পর্যন্ত ট্যাগ অফিসারের সাথে সরকারি সহায়তার তালিকা যাচাই, ১৪ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ডিআর ও উপবৃত্তির তালিকা তৈরির কাজে তিনি নিয়োজিত ছিলেন। কাজ করতে করতে ১৮ মে থেকে তার করোনার লক্ষণ দেখা দেয় এবং ২৩ তারিখ রিপোর্ট পজেটিভ আসে। সেবা করতে গিয়ে স্ত্রীও আক্রান্ত হন। এখন জ্বর একটু কমলেও কাশি এবং গলা ব্যাথা বেড়েই চলেছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।

একই জেলার কাদুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক করোনা আক্রান্ত মাসুম মিয়া বলেন, তিনিসহ তার পরিবারের ৬ জন আক্রান্ত।  ঈদের দিন সন্ধ্যায় তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার মা (সহকারী শিক্ষক) করোনায় আক্রান্ত। ওষুধ হিসেবে নাপা, স্ক্যাবো-৬,  ডক্সিন১০০ এবং এইচ৫০০ খাচ্ছি আর গরম পানির ভ্যাপ নিচ্ছেন।

আক্রান্ত শিক্ষকদের বিষয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, অধিকাংশ শিক্ষক মাঠ প্রশাসনের কাজ, সরকার ঘোষিত মানবিক সহায়তার কাজ এবং বিদ্যালয়ের উপবৃত্তি ও ডিআরসহ বিভিন্ন তথ্য হালনাগাদ করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অথচ সরকার ঘোষিত প্রনোদনা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে শিক্ষকরা বঞ্চিত। আমরা চাই মাঠ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মচারীর মত শিক্ষকদেরও প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত করোনাকালীন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হোক।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //