গাছ কাটার অভিযোগে চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা

পাবনার চাটমোহরে হরিপুর দূর্গাদাস উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অর্ধশত বছরের পুরাতন গাছ অবৈধভাবে কাটার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন প্রশাসন। এই গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। 

স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেন অবৈধভাবে নিজ ক্ষমতাবলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধশত গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এই গাছ কাটার বিষয় স্থানীয় প্রশাসন জানার পরে গাছ কাটা বন্ধ করে দেয়। নিয়ম বহির্ভুত ভাবে গাছ কাটার অভিযোগে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ নয়জনের নাম দিয়ে মামলা দায়ের করেছেন উপজেলা জেলা প্রশাসন। 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি গাছ কাটা আর অত্যাচারী চেয়ারম্যানের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাবাসী। 

পাবনা চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হরিপুর দূর্গাদাস স্কুল ও কলেজ। এই বিদ্যালয়ের  অর্ধশত বছরের গাছ কেটে বিক্রির করে দিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, সারা দেশে যখন প্রধানমন্ত্রী গাছ লাগানোর কথা বলছেন তখন তিনি গাছ কাটছেন। এই চেয়ারম্যান নিজ ক্ষমতা বলে নিজ ইউনিয়নে যা খুশি তাই করছে। তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললে  নির্যতনসহ হামলা মামলার স্বীকার হতে হয় তাদের। উন্নয়নের কথা বলে এই চেয়ারম্যান ও কলেজের অধ্যক্ষের যোগসাজসে এই গাছ কেটে অর্থ আত্মসাৎ করার পরিকল্পনায় করছেন। 

এই চেয়ারম্যান এলাকায় এমন কোন অপকর্ম নেই সে করেনা বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। 

তার নির্যাতনের স্বীকার হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বানিজ্যসহ তার লোক বসিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে জানান তারা। অবৈধ ভাবে অর্থ উপার্জনসহ ক্ষমতার অপব্যবহার করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তার অপকর্ম আর অন্যায়ের হাত থেকে এলাবাসীকে মুক্ত করার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাবাসী। স্থানীয়দের আরো অভিযোগ  করে বলেন, পূর্বেও এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক গাছ কাটা হয়েছে। সেই গাছ দিয়ে বাড়ির ফার্নিচারসহ দড়জা জানালা বানিয়েছেন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান। এবারো উন্নয়নের কথা বলে গাছ বিক্রি করছে। 

অভিযোগের বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মো:  মকবুল হোসেন বলেন, নিয়ম অনুসরণ করে গাছ কাটা হয়নি। এটি আমাদের ভুল হয়েছে স্বীকার করছি। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশের পরে গাছ কাটা বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে গাছ বিক্রির অর্থ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেয়া হয়েছে। আমি কোন অন্যায় কাজ করিনি। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য গাছ কাটা হয়েছে। আর যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে তারা আমার প্রতিপক্ষ।

ঘটনার বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক কবির মাহামুদ বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগের আলোকে উপজেলা প্রশাসন আমাকে বিষয়টি অবহিত করেন। সাথে সাথে আমি সেখানে পুলিশ পাঠিয়েছি। বিষটি তদন্তের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অবৈধ ভাবে সরকারি জায়গা  ও স্কুলের গাছ কাটা যাবে না। এই অন্যায় কাজের সাথে যারা ছিলো তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আর সংশ্লিষ্ঠ ওই  ইউপি চেয়ারম্যানের দূর্নিতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে অবশ্যই আমি উর্ধতন কতৃপক্ষের নিকট পাঠাবো ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। কোন অন্যায় কাজ আমি হতে দিবো না।

১৯২৫ সালে তিন একর পচিশ শতাংশ জায়গ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৯ সালে অনুমদন পায় কলেজের। আর ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়। সময়ের সাথে সাথে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শতবর্ষের পদার্পন করতে যাচ্ছে সল্প দিনেরে মধ্যে। উপমহাদেশের বিখ্যাত গদ্যরীতির প্রবর্তক প্রয়াত প্রমথ চৌধুরীর বাবা  দূর্গাদাস চৌধুরীর নামে এই উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের নাম করণ হয়েছে। তার দেয়া জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই গাছ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর দাবি স্থানীয়দের।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //