বিগত ১৬ বছরে এতো পানি দেখেনি সুনামগঞ্জবাসী

বিগত ১৬ বছরে এতো পানি দেখিনি। এবার পর পর দু-বার বন্যাসহ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় হাওরের ঢেউয়ের কারণে হাওর পাড়ের বসত বাড়ির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। এই দুর্ভোগ কবে শেষ হবে এখনো বলা যাচ্ছে না। করোনার প্রভাবে আয় রোজগার নেই। এখনো ঘরের ভিতরে হাঁটু পানির ওপরে। এই অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আছি। পানিতে ঘর বাড়ি ডুবে থাকার পরও কোন সহায়তা পাইনি। কেউ খোঁজও নেয় নি। এমনি কথা গুলো বলছিলেন তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণকুল গ্রামের সামনে মাটিয়ান হাওরে পানিতে ডুবে যাওয়া বসত বাড়িতে অবস্থানকারী আমির উদ্দিন (৫৫)।  

আমির মিয়া (৪৫) জানায়, গত শুক্রবার থেকে সুনামগঞ্জ সীমান্তের যাদুকাটা, সুরমা, চলতিসহ বেশ কয়েকটি নদী দিয়ে ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দেয়ায় চারদিকে পানিতে থৈ থৈ করছে। পানি বৃদ্ধি, ঢেউ আর তীব্র স্রোতের কারণে বসত বাড়ি ও বিভিন্ন স্থানে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তাহিরপুর উপজেলাসহ ৫ উপজেলার সাথে সুনামগঞ্জ জেলা শহরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

সোমবার (১৩ জুলাই) বৃষ্টি না হওয়ায় হাওর ও নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও এখনো পর্যন্ত বন্যার পানিতে উপজেলার অধিকাংশ ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ অভ্যন্তরীণ সড়ক পানিতে ডুবে আছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন র্বোড বলছে আর বৃষ্টি না হয় তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও হাওরাঞ্চলের পানি কমতে একটু সময় লাগবে।  

জানা যায়, ভারতের মেঘালয় চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ঢল ও সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে সুনামগঞ্জে দ্বিতীয়বারের মতো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ কারণে জেলায় তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক,
দোয়ারা বাজার, জগন্নাথপুরসহ ১১টি উপজেলায় জেলা শহরসহ নিন্মাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে, কমিউনিটি ক্লিনিকে হাঁটু পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ফলে সকল চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করতে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। আর পাহাড়ি ঢলে নদীর তীরবর্তী গ্রাম ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করার কারণে ও নদীরক্ষা বাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এছাড়াও জেলার ছোট বড় পাঁচ শতাধিক হাট বাজার, উপজেলা পরিষদসহ অভ্যন্তরীণ প্রতিটি সড়ক পানিতে প্লাবিত হওয়ায় জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষ ও ব্যবসায়ীরা চরম দুর্ভোগে রয়েছে। আর পানি বৃদ্ধি আর ঢেউয়ের কারণে জেলার হাওর পাড়ের সাত হাজারের অধিক ঘরবাড়ি ধ্বসে পড়েছে। বসত ঘরে পানিতে ডুবে যাওয়ায় গবাদি পশু আর গোখাদ্য (খড়) নিয়েও বিপাকে পড়েছেন হাজারো কৃষক পরিবার।
 
তাহিরপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা বেগম জানান, এবারের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় আর ঢেউয়ের কারণে হাওর পাড়ের বসত বাড়ির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। বন্যার শুরু থেকেই বন্যায় আক্রান্ত পরিবার গুলোর খোঁজ খবর ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে আসছি। আমি আমার ও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করছি।  


তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, দুবার বন্যায় উপজেলার ৮০ভাগের বেশি এলাকায় সাগরের মতো রূপ ধারণ করেছে। এর মধ্যে ভেসে থাকা হাওরপাড়ের গ্রাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট পানি আর ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনার প্রভাবে উপজেলার নিম্ন আয়ের লোকজনের আয় রোজগার নেই কোন পথও খোলা নেই যে কাজ করবে। এর মধ্যেই গত মাসের শেষের দিকে প্রথম দফা বন্যা শুরু হলেও আবারও বন্যায় অসহায় পরিবারের মানুষ জন চরম দুর্ভোগে আছেন। তাদের জন্য সহায়তা কার্যক্রম আরো বাড়ানো প্রয়োজন।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, সোমবার সকাল থেকে সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কমতে শুরু করেছে জেলার সুরমার পানি। সোমবার রাতে তা ছিলো ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও মঙ্গলবার সকালে সুনামগঞ্জে সুরমার পানি বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটারে। আগামীকালের মধ্যে পানি বিপদসীমার নিচে চলে আসবে। সুরমা নদীর পানি কমলেও হাওরের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে কিছুটা সময় লাগবে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আহাদ জানান, প্রশাসনের সবাই বন্যার্তদের সহায়তায় দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া আমাদের কন্ট্রোল রুম খোলা রয়েছে। যেকোনো প্রয়োজনে সেখানে আমাদের জানালে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব। ইতোমধ্যে বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবার, জিআর চাল, নগদ টাকা বিতরণ করেছি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //