বজ্রপাতে সারাদেশে ১৭ মৃত্যু

দেশের নয় জেলায় বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

এর মধ্যে ময়মনসিংহে তিনজন, হবিগঞ্জে তিনজন, বগুড়ায় চারজন, টাঙ্গাইলে একজন, নোয়াখালীতে একজন, জয়পুরহাটে একজন, কুষ্টিয়ায় দুইজন, নাটোরে একজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে একজন রয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ জুন) বজ্রপাতে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।

ময়মনসিংহ 

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায় বজ্রপাতে পৃথক স্থানে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বিকেলে উপজেলার আছিম পাটুলী ও কালাদহ ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃতরা হলেন- আব্দুল মোতালেব (৫০), রবিন (১৩) ও ইমরান (১৭)।

ফুলবাড়ীয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কুষ্টিয়া 

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বিকেলে পৃথকস্থানে বজ্রপাতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন- কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চর সাদিপুর ইউনিয়নের পদ্মার চর এলাকার হামিদুল মন্ডলের ছেলে রাখাল ফারুক মন্ডল (৩০) এবং একই উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের সদরপুর সর্দারপাড়ার ময়জুদ্দিন মন্ডলের ছেলে শফি মন্ডল (৪৫)।

সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন ও কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়নে বজ্রপাতে অনিক (১৫) নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। বিকেলে ইউনিয়নের ধরেরবাড়ী গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। অনিক ওই এলাকার মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়ার ছেলে ও ধরেরবাড়ী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

বাঘিল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আব্দুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নাটোর

নাটোরের গুরুদাসপুরে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসে বজ্রপাতে মকবুল হোসেন নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন তার শ্যালক। বৃহস্পতিবার (৪ জুন) বিকেলে উপজেলার কচুগাড়ী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। মকবুল হোসেন একই উপজেলার বিলকাঠর গ্রামের মৃত সেকেন আলীর ছেলে এবং কচুগাড়ী গ্রামের মুন্নাফ হোসেনের মেয়ে জামাই।

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) মোজাহারুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বৃহস্পতিবার সকালে মকবুল হোসেন শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসে। বিকেলে আকাশে মেঘের গর্জনের সময় তিনি ও তার শ্যালক বাড়ির বাইরে যায়। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে দুজনই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা দুজনকে হাসপাতালে নেয়ার পথে মকবুল হোসেন মারা যায়। পরে আহত সজিব আলীকে গুরুদাসপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রাঘাতে পিয়ারা বেগম (৩৩) নামের গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলার চরপাঁকা এলাকার হেরাস উদ্দিনের স্ত্রী। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়। শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুল আলম শাহ এ তথ্য জানান।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ওসি বলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টার দিকে হঠাৎ করে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এ সময় বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।’  

নোয়াখালী

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার স্বর্ণদ্বীপে মাটি কাটার কাজ করার সময় দুপুরে বজ্রাঘাতে রফিক উল্যাহ (৪০) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের মধ্য চরবাটা গ্রামের বাসিন্দা।

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের এসব তথ্য জানান।

জয়পুরহাট

বজ্রপাতে জয়পুরহাট সদর উপজেলার পারুলিয়া গ্রামে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সুকোমল (৪৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। সুকোমল ওই গ্রামের মৃত রাজেন্দ্রনাথের ছেলে।

জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহরিয়ার খান জানান, কৃষি কাজ সেরে বাড়ির উঠানে গোসল করতে গিয়ে বজ্রপাতে সুকোমল গুরুতর আহত হন। পরে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জের বাহুবলে হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রাঘাতে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরো দুইজন। নিহতরা হলেন- বাহুবল উপজেলার পুঁটিজুরি ইউনিয়নের নৌয়াঐ গ্রামের দরদ মিয়ার ছেলে ওকাইদ মিয়া (১১) এবং একই উপজেলার সাতকাপন ইউনিয়নের মানিকা গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে নরছ মিয়া (১৭)।

বাহুবল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ওসি জানান, দুপুরে ওকাইদ হাওরে মাছ ধরতে গেলে বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় আহত হন আরো দুই জন। তাদের বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

একই সময়ে নরছ মিয়া মানিকা হাওরে মাছ ধরতে গেলে বজ্রাঘাতে আহত হন। গুরুতর অবস্থায় তাকে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বগুড়া

বগুড়ার কাহালু উপজেলার এরুইল বাজার, শাজাহানপুরের হরিণ গাড়ি গ্রাম, সারিয়াকান্দির কুড়িপাড়া চর এবং ধুনটের দেওড়িয়া গ্রামে বজ্রাঘাতে চার কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রাঘাতে কাহালুতে আহত হন তিন জন। তাদের মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মৃত ব্যক্তিরা হলেন- কাহালুর এরুইল গ্রামের মৃত কছিমুদ্দিনের ছেলে মোকলেছার রহমান (৫৫), শাজাহানপুরের হরিণগাড়ি গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে নুরুল ইসলাম (৪০), সারিয়াকান্দির কুড়িপাড়া চরের বুলু মণ্ডলের ছেলে লেবু মণ্ডল (৩৫) এবং ধুনটের দেওড়িয়া গ্রামের দেরাস সরকারের ছেলে আবদুস সালাম (৫৫)।

কাহালু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়া লতিফুল ইসলাম জানান, কাহালু উপজেলার মালঞ্চা ইউনিয়নের এরুইল বাজারের পাশে মাঠে ধান শুকাতে দেয়া হয়। বেলা সোয়া ৩টার দিকে হঠাৎ বজ্রসহ বৃষ্টিপাত শুরু হয়। তখন কৃষক মোকলেছার রহমান, একই গ্রামের মোহসিনের ছেলে রায়হান আলী (২৮), মৃত আহসান উল্লাহর ছেলে হাসান আলী (৩৫) ও মামুন (৩০) বস্তায় ধান তুলছিলেন। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে চার জন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মোকলেছারকে মৃত ঘোষণা করেন। আহতদের মধ্যে হাসান আলীকে হাসপাতালে ভর্তি এবং অন্য দুইজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

বেলা ৩টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলার হরিণগাড়ি গ্রামের একটি মাঠে কৃষক নুরুল ইসলাম কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে শজিমেক হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

একই সময় সারিয়াকান্দির কুড়িরপাড়া চরে বৃষ্টি শুরু হলে কৃষক লেবু মণ্ডল গরু আনতে যান। তখন বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। কাজলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা জানান, বৃহস্পতিবার দিনভর বৃষ্টিতে দেওড়িয়া গ্রামে পটলের ক্ষেতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কৃষক আবদুস সালাম ওই পানি নিষ্কাশনের জন্য বিকেল ৪টার দিকে ক্ষেতে যান। এ সময় হঠাৎ বজ্রাঘাতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //