করোনার লক্ষণ নিয়ে দাফন, আতংকিত ৩৮৫ পরিবার

করোনাভাইরাসের তিনটি (সর্দি, জ্বর, কাশি) লক্ষণ ছিলো মাহতাবপুর গ্রামে দাফন হওয়া জহিরুলের। তিনি গাজীপুরের একটি টেক্সটাইল মিলে র্দীঘদিন ধরেই কাজ করতেন। গত সাপ্তাহ খানের ঢাকার গাজীপুর এলাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। 

এদিকে, মারা যাওয়ার পর তার স্বজনরা মাহবাতপুর গ্রামের গোরস্থানে দাফনের পর থেকে ৭টি পরিবারকে হোম কোয়ারান্টিনে থাকার নিদের্শ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু অনেকেই তা মানছে না। ফলে উৎকণ্ঠা আর আতংকের মাঝে সময় পার করছে মাহতাবপুর গ্রামের ৩৮৫টি পরিবার। 

স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলায় বালিজুরী ইউনিয়নের মাহবাতপুর গ্রামের চারপাশের বাড়িঘরগুলোতে সুনশান নিরবতা বিরাজ করছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমনের ভয়ে সবার মাঝে আতংক বিরাজ করছে। ফলে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। 

জানা যায়, জহিরুলেল দাফন এই গ্রামে হলেও এই গ্রামে তাদের কোনো বাড়ি নেই। এমনকি তার বাবাও নেই। তবে নিহতের দাদার উত্তরসুরি রয়েছে এই গ্রামে। কিন্তু নিহত জহিরুল ও তার পরিবারের কেউ ২২বছরের মধ্যে এই গ্রামে আসেনি। 

জহিরুল সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ বিয়েও করেছেন। যার কারণে কোম্পানীগঞ্জ ও ঢাকায় বসবাস করতেন মা-বাবাসহ। হঠাৎ করে গত সপ্তাহখানেক আগে সে জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হলে গাজীপুর এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (১ এপ্রিল) জহিরুল মারা যায়। 

এরপর পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে লাশ নিয়ে বাবা কাফিল উদ্দিন, মা তাসলিমা, কোম্পানীগঞ্জের বালুচর গ্রামের কুলসুমা (২৬), মালিক উস্তারসহ (১৬) ৭-৮জন সহযোগী স্বজন নিয়ে মাহতাবপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের বাড়িতে আসে। আব্দুর রাজ্জাক নিহতের বাবার মামা। পরে রাত সাড়ে ৮টায় গ্রামের করবস্থানে লাশ দাফন করে স্বজনরা।

এ ঘটনায় ৭টি পরিবারকে হোম কোয়ারান্টিনে থাকার নিদের্শনা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন কিন্তু অনেকেই তা মানছে না। ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমনের আশংকায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে গ্রামবাসী।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের তিনটি (সর্দি, জ্বর, কাশি) লক্ষণ ছিলো মাহতাবপুর গ্রামে দাফন হওয়া জহিরুলের। কিন্তু ২৪ঘণ্টার ভিতরেই এই রোগীর টেস্ট করা প্রয়োজন ছিলো কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য কর্মীর উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাতে দাফন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় নিহতের বাবা,মা ও গাজীপুর থেকে লাশ নিয়ে আসা কুলসুমা (২৬), মালিক উস্তারসহ (১৬) তাহিরপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের (মাহতাবপুর গ্রামের আব্দুল মালিক, আব্দুর রাজ্জাক, মঙ্গল মিয়ার পরিবার (নিহতের বাবার মামা) ও আত্বীয় মনা মিয়ার পরিবার, মুক্তার মিয়া ৫টি পরিবার, তাহিরপুর উপজেলা চিসকা গ্রামের আবুল বাদশা পরিবার ও বাদাঘাট ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের আব্দুল লতিফের (নিহতের বাবার ফুপা) পরিবারকে হোম কোয়ারান্টিনে রাখা হয়েছে।

বালিজুরী ইউনিয়নের ২নং ওর্য়াড মেম্বার মো. সুহেল মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় ৭টি পরিবারের মধ্যে আমার ওয়ার্ডের ৫টি বাড়িতে লাল পতকা টাঙিয়ে দিয়েছি এবং সবাইকে হোম কোয়ারান্টিনে থাকার জন্য বলছি সেই সাথে কঠোর নজরধারিতে রাখছি। তবে অনেকেই আমাকে জানিয়েছে এক-দুজন হোম কোয়ারান্টিন মানছে না। আমি এই বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।  

তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচএফপিও ডা. ইকবাল হোসেন বলেন, তারা ঢাকায় যোগাযোগ করেছেন। তারা নির্দেশনা দিয়েছেন লাশের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আগামী দুই সপ্তাহ হোম কোয়ারেন্টিনে রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা কেউ না মানলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে জানাবো।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজেন ব্যানার্জী বলেন, সংবাদটি জানার পরই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচএফপিও ও তাহিরপুর থানা অফিসার ইনচার্জকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে প্রশাসনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : সুনামগঞ্জ

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //