‘মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের দিনগুলো ভুলতে পারে না’

চিত্রনায়ক সোহেল রানা। প্রকৃত নাম মাসুদ পারভেজ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এই অভিনেতা। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রের ‘ওরা ১১ জন’ প্রযোজকও তিনি। ১৯৭৩ সালে ‘সোহেল রানা’ নাম ধারণ করে ‘মাসুদ রানা’ ছবির নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে অসামান্য অবদানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ নানা সম্মাননা লাভ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, বর্তমান ব্যস্ততা ও সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন এন আই বুলবুলের সঙ্গে। 

করোনাভাইরাসে সারাবিশ্ব আতঙ্কিত। কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন?

সময় তো এখন ঘরেই কাটাতে হচ্ছে। পরিবারের সবার সঙ্গে সময় কাটছে। করোনায় সব কিছু বন্ধ। এ ছাড়া বাইরে এখন নিরাপদ না। ঘরে থাকা সবার জন্য ভালো। খুব জরুরি না হলে কেউ যেন বাইরে না যায়। আমাদের দেশকে করোনামুক্ত করতে হলে অবশ্যই সবাইকে সচেতন হতে হবে। সচেতনতার বিকল্প আর কিছু নেই।

২০২০ সাল মুজিববর্ষ। কেমন লাগছে?

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীকে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এটি অনেক আনন্দের বলতে পারি। বেঁচে থাকতে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী দেখে যেতে পারছি।

মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আজকের এই সময়ে সেই দিনগুলোর কথা কেমন মনে পড়ে?

সে দিনগুলোর কথা তো ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। বিশেষ করে কোনো মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধের দিনগুলো ভুলতে পারে না। টানা ৯ মাস হানাদারদের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি। কতা ভয়াবহ ছিল সেই দিনগুলো সেটি আমরা মুক্তিযোদ্ধারা জানি। সেই দিনগুলোর কথা মনে হলে এখনো শিউরে উঠি। আমি হয়তো আজ বেঁচে আছি। কিন্তু মানুষকে দেখেছি রাস্তায় মরে থাকতে। নির্মমভাবে কত মানুষ না খেয়ে, পুড়ে, ধর্ষিত হয়ে মারা গেছে।

আপনি কার অনুপ্রেরণায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইকবাল হলে থাকাকালে স্বাধীনতা অন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ শোনার পর পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। নিজের জীবন বাজি রেখেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। দেশের প্রতি ভালোবাসা আমাকে যুদ্ধে নিয়ে গেছে।

নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধকে কীভাবে দেখছে বলে মনে করেন?

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে নতুন প্রজন্মকে জানাতে পারছি বলে মনে হয় না। কথায় কথায় বলছে স্বাধীনতা স্বপক্ষীয় শক্তি, বিপক্ষীয় শক্তি, পাকিস্তানের পক্ষের শক্তি। তবে নতুন প্রজন্মের মধ্যে এখন অনেক বেশি দেশপ্রেম জাগ্রত। দেশের যে কোনো দুর্যোগে তারা এগিয়ে আসে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরই ‘ওরা ১১ জন’ নামে মুক্তিযুদ্ধের ছবি প্রযোজনা করলেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধের আর কোনো ছবি নির্মাণ করতে দেখা যায়নি আপনাকে। কারণ কী?

‘ওরা ১১ জন’ মূলত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র। একে শুধু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র বলা যাবে না। কারণ, এ ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি জীবনের নানা বাঁক, উত্থান-পতন, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বিরহের নানা কথা উঠে এসেছে। তবে এরপর মুক্তিযুদ্ধের ছবি নির্মাণ না করার বেশ কিছু কারণ আছে। এর মধ্যে একটি হলো মুক্তিযুদ্ধের ছবি নির্মাণের জন্য যে পরিবেশ ও সরঞ্জাম প্রয়োজন সেটি পাইনি। চলচ্চিত্রে যুদ্ধকালীন পরিবেশ তৈরি করা কঠিন ব্যাপার। এ কারণে শতভাগ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।

গেল কয়েক বছর আমাদের চলচ্চিত্রের খারাপ অবস্থা যাচ্ছে। এর কারণ কী মনে করেন?

গেল কয়েক বছর তো আমাদের চলচ্চিত্রে দুই-একজন নায়ক ছাড়া আর কাউকে দেখি না। একটি ইন্ড্রাস্ট্রি এক, দু’জনকে দিয়ে কখনো চলে না। মাঝে অনেক দিনের যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্রের মানুষদের মধ্যে বিরোধ দেখেছি। আমি মনে করি শিল্পী, নির্মতা ও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মানুষদের ঐক্য না থাকার কারণে চলচ্চিত্রে সুদিন ফিরে আসছে না।

মৃত্যুর আগে কেমন বাংলাদেশ দেখে যেতে চান?

সবারই ভালো কিছুর প্রত্যাশা থাকে। আমরা যে অর্থে এ দেশ স্বাধীন করতে যুদ্ধ করেছি, সে রকম দেশ এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমরা ভালো কিছু করলে ভালো একটি পরিবেশ দেখে যেতে পারব। আমি চাই দেশের মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াক। সবাই ভেদাভেদ ভুলে কাজ করুক।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //