আবরার হত্যা

জড়িতরা উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত ছিল

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যায় জড়িত ২৫ জন উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত ছিল।

তিনি বলেন, তারা রাজনৈতিক পরিচয়কে শেল্টার হিসেবে ব্যবহার করে অছাত্রের মতো আচরণ করতো বলে ডিবি পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। তারা এমন উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল যে কেউ তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে, সালাম না দিলে, তাদের সামনে হেসে দিলে ইত্যাদি কারণে তারা নির্যাতন করত।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আজ বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

হত্যার মোটিভের বিষয়ে মনিরুল বলেন, কোনো একক কারণে আবরারকে হত্যা করা হয়নি। সে (আবরার) শিবির করে কি না, হত্যার পেছনে এটি একটি মাত্র (অন্যতম) কারণ। জড়িত সবাই উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত। ধারাবাহিক র‌্যাগিং ও উগ্র আচরণ করতে করতে হত্যাকাণ্ডের মতো নৃশংস ঘটনা ঘটায়।

তিনি বলেন, আসামিদের ভাষ্য মতে, আবরার ফাহাদ দেখা হলে বড়দের সালাম দিতো না। বিভিন্ন তীর্যক মন্তব্য করতো। আগে থেকেই তারা নানা কারণে আবরার ফাহাদের ওপরে ক্ষিপ্ত ছিল। অনেকগুলো বিষয়ের সমষ্টিতেই আবরারকে পেটানো হয়েছিল।

তিনি আরো বলেন, একজনকে মেরে অন্যজনকে শিক্ষা দিতে, কিংবা জুনিয়রদের মধ্যে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করতে তারা দীর্ঘদিন ধরে র‌্যাগিংয়ের নামে এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। যার আচরণ অপছন্দ হতো তাকেই ডেকে এনে নানা নির্যাতন করা হতো। অন্য কেউ এমন অভিযোগ করলেও আমরা বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখবো।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘ঘটনার দিন রাত ১০টার পর থেকে আবরার ফাহাদকে মারধর শুরু করা হয়। ২টা ৫০ মিনিটের দিকে বুয়েটের ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আরেকটু মনিটরিং করলে এ ঘটনা এড়ানো যেতো। তদন্তে আমরা তাদের ব্যর্থতা দেখেছি।’

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে তাদের গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নিতে পারে, এটা পুলিশের বিষয় নয়।

এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘রাত ৩টার (৬ অক্টোবর) দিকে পুলিশকে খবর দেয়া হয়- শিবির সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে। ওই সময় পুলিশের টহল টিম হলের বাইরে অপেক্ষা করলে পরে জানানো হয়- কিছু হয়নি। ৩টার আগে পুলিশ এ বিষয়ে কিছু জানতে পারেনি।’

তিনি বলেন, বিশ্বজিৎ হত্যায় যারা রড দিয়ে পিটিয়েছিল তাদের ফাঁসি হয়েছে। অভিযুক্ত কয়েকজন আবার খালাসও পেয়েছে। সেই মামলায় আমরা তেমনভাবে সিসিটিভি ফুটেজ পাইনি। এ ধরনের ঘটনা প্রমাণের জন্য ট্রেডিশনাল তদন্ত বা চাক্ষুষ সাক্ষীর সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। আবরারের হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা ছিল, তদন্ত সহায়ক দল ছিল, সিসিটিভি ফুটেজ, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য প্রমাণ, ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপের তথ্য রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণ, পাশাপাশি আট আসামির বক্তব্যও হত্যাকাণ্ডের অনেক বিষয় প্রমাণ করে, যদিও এ ধরনের ঘটনায় চাক্ষুষ সাক্ষী থাকলেও সাক্ষ্য দিতে এগিয়ে আসে না। কিন্তু আমরা যেভাবে চার্জশিট প্রস্তুত করেছি আশা করছি সবার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে।

বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ‘শিবির সন্দেহে’ পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার মাঝামাঝি সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //