কিছুসংখ্যক নির্মাতা ও অভিনেতা সিন্ডিকেট করে দেশের টিভি নাটকে কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি আগামী ঈদের জন্যও নির্মিতব্য নাটকেরও একই চিত্র বলে জানিয়েছেন শোবিজ সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সাধারণ দর্শকের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন সিনিয়র অভিনয় শিল্পীরাও এ নিয়ে গণমাধ্যমে মুখ খুলেছেন। আবার কেউ কেউ পুরো বিষয়টিকেই মিডিয়ার সৃষ্টি বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
কয়েকজন অভিনেতা ও নির্মাতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ঈদ বা বিশেষ দিবসের আগে সিন্ডিকেট মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। এ সময় চাহিদা সম্পন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা নির্দিষ্ট পরিচালকের বাইরে গিয়ে কাজ করেন না। এমনকি কাজের প্রস্তাব দিলেও, সিন্ডিকেটের বাইরের পরিচালকদের সিডিউল নেই বলে ফিরিয়ে দেন।
ফলে বছরজুড়ে টিভি পর্দায় দেখা যায় আরফান নিশো, তানজিন তিশা, জিয়াউল হক অপূর্ব, তৌসিফ মাহবুব, সাফা কবির, ইরফান সাজ্জাদ, টয়া আর জিয়াউল হক পলাশকে। এর বাইরে খুব কমসংখ্যক অভিনেতা-অভিনেত্রীকেই টিভি পর্দায় দেখা যায়। এর মধ্যে অপূর্ব, আফরান নিশো, মেহজাবিন এবং তানজিন তিশা- এই চার অভিনয়শিল্পীকেই একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে নাটকে।
এ মুহূর্তে যতগুলো নাটক এ সময়ে নির্মিত হচ্ছে তার সিংহভাগেই কাজ করছেন এই অভিনয়শিল্পীরা। ঘুরেফিরে একই মুখ দেখতে দেখতে দর্শকও ক্লান্ত। কার্যতই দিনকে দিন টিভি নাটক তার বৈচিত্র্য হারাচ্ছে। এতে করে তাদের সমসাময়িক অনেক তারকারই কাজ কমে গেছে।
এক দশক আগেও একটা নির্দিষ্ট মান বজায় রেখে নির্মাতারা গল্প নির্বাচন ও নির্মাণ করতেন। গল্পের প্রয়োজনেই সেসব নাটকে অভিনয়শিল্পী নির্বাচন করা হতো। তখন আফজাল হোসেন, সুবর্ণা মুস্তফা, তৌকীর আহমেদ, বিপাশা হায়াতদের মতো অভিনয় জুটি দর্শক সাদরে গ্রহণ করেছেন।
তবে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নাটক নির্মাণের সংখ্যাও বাড়ে। ফলে অভিনয়শিল্পী, নাট্যকার ও কলাকুশলীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। তৈরি হয় একজনের সঙ্গে অন্যজনের প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেকে টিকিয়ে রাখতেই শুরু হয় গ্রুপিং, যা এক পর্যায়ে সিন্ডিকেটে রূপ নেয়। এতে গুটি কয়েকজন অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতার সুবিধা হলেও অসুবিধায় পড়েছেন বেশিরভাগ নাটক সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য কেউ কেউ অভিযোগের তীর টেলিভিশন চ্যানেলের দিকেও তুলছেন।
এ বিষয়ে অভিনেত্রী ফারজানা ছবি বলেন, ‘এখন মিডিয়ায় সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। সিন্ডিকেটের কারণেই মিডিয়ায় ধস নেমেছে। নাটক প্রচার হচ্ছে, অসংখ্য নাটকও তৈরি হচ্ছে- কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে নাটকের অবস্থা ভালো না। সিন্ডিকেট থেকে মিডিয়া মুক্ত না হলে এর অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে।
অভিনেতা শিমুল বলেছেন, আমি জানি, সিন্ডিকেট হচ্ছে। কারণ ভিউ বাণিজ্যের এই যুগে যাদের নাটকগুলো নিয়ে লেখা হচ্ছে, সে নাটকগুলো নিয়ে তো পত্রিকাও লিখছে। এখন সুস্থ-সুন্দর ভালো নাটকগুলো সাইড করে রাখা হচ্ছে। যারা টিভি নাটকের ব্যবসাটা করেন, তাদের হাতে গোনা কয়েকজন আর্টিস্ট-ডিরেক্টর আছেন। তাদের নাটকই তারা প্রমোট করেন এবং মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ করাবেন।
তিনি বলেন, এক রাতের মধ্যে মিলিয়ন ভিউ হয়ে যায়! কীভাবে সম্ভব? এত বছর ধরে অভিনয় করছি, কিছু তো বোঝার ক্ষমতা হয়েছে! যেসব শিল্পী নাটকে সিন্ডিকেট করছে তারা শুধু নিজের পকেটের অবস্থাই ভালো করছে। টিভি নাটকের যে সুস্থ-সুন্দর একটা গতি ছিল, সেটা এই সিন্ডিকেট বন্ধ করে দিচ্ছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh